২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পানির অভাবে জৌলুস হারাচ্ছে চলনবিল, ১৬ নৌরুট বন্ধ

পানিশূন্য গুমানী নদী : নয়া দিগন্ত -

চলনবিল অধ্যুষিত এলাকা পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জের নদ-নদীগুলোতে পানি না থাকায় জৌলুস হারাচ্ছে চলনবিল। পানির অভাবে এসব অঞ্চলের নৌরুটগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতি বছর মাঘ-ফাল্গুন মাস আসতে না আসতেই পানিশূন্য হয়ে পড়ছে এ এলাকার নদ-নদী, খাল-বিল। এর ফলে ব্যাহত হচ্ছে সেচ ব্যবস্থা। বিলুপ্ত হচ্ছে নানান প্রজাতির দেশী মৎস্য সম্পদ।
পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, নাটোরের গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম ও সিংড়া, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়ার আংশিক এলাকা নিয়ে বিস্তৃত চলনবিল। চলনবিল এলাকার অধিকাংশ নদ-নদীই দীর্ঘ দিন যাবত খনন করা হয়নি। ফলে নদ-নদীগুলোর নাব্যতা সঙ্কট বেড়েই চলেছে। অপরিকল্পিতভাবে আত্রাই, গুমানীসহ দুই-একটি নদী খনন করা হলেও তার সুফল পাচ্ছেন না এ এলাকার মানুষ।
বড়াল নদ পদ্মার চারঘাট মোহনা থেকে নাটোরের বাগাতিপাড়া, বড়াই গ্রাম হয়ে চাটমোহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নূরনগরের গুমানীর নদীর সাথে মিশে ফের বড়াল নামেই ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর বাঘাবাড়ি হয়ে হুরাসাগরের সাথে নাকালিয়া এলাকায় গিয়ে যমুনার সাথে মিশেছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝিতেও নদটি স্রোত স্রোতস্বিনী ছিল। কিন্তু রাজশাহী থেকে নূরনগর পর্যন্ত নদটির অনেক স্থানে ক্রসবাঁধ দেয়ায় নদটির কিছু অংশ পানিশূন্য হয়ে পড়ে। ইতঃপূর্বে মাছ চাষের নামে নদটি লিজ দেয়া হতো। লিজ গ্রহীতারা নদকে খণ্ড খণ্ড করে ভাগ করে মাছ চাষ করতো। পরে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে লিজ দেয়া বন্ধ করে। বর্তমানে লিজ দেয়া বন্ধ থাকলেও এখন এটিকে ফের লিজ দেয়ার পাঁয়তারা চলছে।
বড়াল নদ উদ্ধারে বড়াল রক্ষা কমিটি দীর্ঘদিন যাবত আন্দোলন ও সংগ্রাম করে আসার ফলে চাটমোহর নতুন বাজার, বোঁথরঘাট ও রামনগর ঘাটের তিনটি ক্রসবাঁধ অপসারণ করা হয়। উজান অংশে অবৈধ দখলদাররা নদী বন্ধ করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করায় এবং উৎস মুখ চারঘাটে পানি না থাকায় এ নদটি মরে যাচ্ছে। নদ মরে যাওয়ায় পদ্মার সাথে যমুনার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। চাটমোহর থেকে বাঘাবাড়ি পর্যন্ত বর্ষায় অল্পকিছু দিনের জন্য বড়াল প্রাণ ফিরে পায়। বর্ষা মৌসুমে মাস চারেক এ নদে পানি থাকলেও বাকি আট মাস থাকে পানি শূন্য। এ ছাড়া বানগঙ্গা, তুলসী নদী, ভাদাই নদীসহ চলনবিলের অন্তত দশ বারোটি নদ-নদী এবং দুইশ’র অধিক খাল বিল খাড়ি এখন পানিশূন্য।
আত্রাইসহ দু-একটি নদী খনন করা হলেও নানা অনিয়মের কারণে মানুষ এর সুফল পাচ্ছে না। মূলত খননের নামে চলে মাটি ও বালু বিক্রির মহোৎসব। অনেক স্থানে নদের মাটি অন্যত্র সরিয়ে না নিয়ে নদীর মধ্যেই রাখা হয়। সেই মাটি বর্ষায় ফের নদের তলদেশে গিয়েই জমা হয়।
‘চলনবিল রক্ষায় আমরা’ সংগঠনের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম জানান, নদ-নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে পড়ছে হাজার হাজার নৌশ্রমিক ও মৎসজীবী। অনেকেই পেশা পরিবর্তন করে ফেলেছেন। চাটমোহর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ আব্দুর রহিম কালু বলেন, চলনবিল এলাকার নদ-নদীগুলোর তলদেশে ঢালের পরিমাণ কম। তাই, স্রোতের বেগও কম। উৎসস্থান থেকে নদীগুলোর দূরত্ব বেশি হওয়ায়, পানির সাথে আসা মৃত্তিকা কণা, বালুকণা, নুড়িকণা এবং অন্যান্য আবর্জনা নদীর তলদেশে সঞ্চয় হয়ে নদ-নদীর পানি ধারণক্ষমতা কমে যায়। ফলে শুষ্ক মৌসুমে নদীগুলো শুকিয়ে যায় এবং বিপর্যয় ঘটে পরিবেশের।
বড়াল নদ রক্ষা কমিটির সদস্যসচিব এস এম মিজানুর রহমান জানান, নদ-নদী-খাল-বিল চলনবিলের প্রাণ। এগুলো রক্ষা করতে না পারলে চলনবিল তার স্বকীয়তা হারাবে। আমরা দীর্ঘদিন যাবত এ নিয়ে আন্দোলন করে আসছি। ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আছে, বড়ালসহ বাংলাদেশের কোনো নদীই লিজ দেয়া যাবে না। নদী না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না। দখলদারদের প্রতিহত করতে হবে। দখলে থাকা নদী উদ্ধার করে নিয়মমাফিক খনন করতে হবে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।


আরো সংবাদ



premium cement
উপজেলা নির্বাচন : নেতাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের যে শর্তের কথা জানালেন রিজভী গুচ্ছের বিজ্ঞান বিভাগে সারাদেশে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ৯০ শতাংশ গাজায় ছড়াতে পারে মহামারি নারায়ণগঞ্জে ৭ খুন : বিচার কোন পর্যায়ে? মৌলভীবাজারে কালবৈশাখীর তাণ্ডব, খোলা আকাশের নিচে অনেক পরিবার গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা : জবিতে মোট উপস্থিতি ৮৩ শতাংশ ব্যস্ত শহর বগুড়া ফাঁকা : বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায় অব্যাহত ষড়যন্ত্র রুখে ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ জনপদে পরিণত করবো : ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে হিট স্ট্রোকে পর্যটকের মৃত্যু জামালপুরে বউ-শাশুড়ি দ্বন্দ্বের জেরে সংঘর্ষ : নিহত ১, আহত ২ ঈশ্বরদীর তাপমাত্রা ৪১.৫ ডিগ্রি, বেঁকে যাচ্ছে রেলপথ

সকল