০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`


বালিয়াডাঙ্গীতে সড়ক পাকা করার জন্য চার বছর আগে কাঁচা রাস্তা খুঁড়ে রাখা হয়

চার বছর আগে খুঁড়ে রাখা কাঁচা রাস্তা : নয়া দিগন্ত -

- এ যাবৎ কাজ না হওয়ায় জনদুর্ভোগ
- তথ্য নেই উপজেলা প্রকৌশল অফিসে

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বেংরোল জিয়াবাড়ী গ্রামের কাঁচা রাস্তাটি পাকা করার জন্য গত চার বছর আগে খুঁড়ে রাখা হলেও এ যাবৎ রাস্তার কাজ করা হয়নি। এতে এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এ দিকে উপজেলা প্রকৌশল অফিস জানায়, তাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই।
এলাকাবাসী জানান, বেংরোল জিয়াবাড়ী গ্রামের আধা কিলোমিটার কাঁচা রাস্তাটি পাকা করার জন্য চার বছর আগে খুঁড়ে রাখা হয়। রাস্তা পাকা হচ্ছে এই আবদারে এলাকাবাসীর কাছ থেকে মিষ্টি খেতে ৬৫ হাজার টাকাও নিয়েছিল উপজেলা প্রকৌশল অফিস। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাস্তায় সামান্য বালু ও খোয়া ফেলে পুরো বিল তুলে নিয়ে পালিয়েছে। তবে এসব কোনো তথ্য জানা নেই বর্তমান উপজেলা প্রকৌশলীর।

এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘ দিনের দাবির মুখে উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের বেংরোল জিয়াবাড়ী গ্রামের হায়দার আলীর মোড় থেকে তাহেরের বাড়ি পর্যন্ত আধা কিলোমিটার রাস্তা পাকা করার উদ্যোগ নেয়া হয়। সেই সাথে কাজের অংশ হিসেবে ওই রাস্তার মাটি খোঁড়া হয়। তখন মিষ্টি খেতে দুই দফায় ৬৫ হাজার টাকা নিয়েছিলেন ওই সময়ে দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকৌশলী ও তার লোকজন। এসব টাকা গ্রামবাসীর কাছ থেকে সংগ্রহ করে দিয়েছিলেন আবদুল কাদের নামের এক ব্যক্তি। রাস্তা পাকা না হওয়ায় টাকা ফেরত দেয়ার জন্য এখন তাকে চাপ দিচ্ছে গ্রামের লোকজন।
আবদুল কাদের বলেন, গ্রামবাসীর কাছ থেকে ১০০, ৫০০ ও ১০০০ করে প্রথমে ৫০ হাজার টাকা ও পরে আরো ১৫ হাজার টাকা তুলে ইঞ্জিনিয়ার অফিসে দিই। কাজ না হওয়ায় গ্রামের লোকজন এখন আমার কাছে টাকা ফেরত চাইছে। কয়েক দিন আগে টাকা ফেরত না দেয়ায় বাড়িতে ঢিল ছুড়ে গ্রামের লোকজন। লজ্জায় হাট-বাজারে যেতে পারছি না।

জালাল উদ্দীন নামের এক ব্যক্তি বলেন, শুনেছিলাম প্রায় কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল এই রাস্তাটি নির্মাণে। তাড়াহুড়ো করে রাস্তা খুঁড়ল ঠিকাদার। মনে করেছিলাম দীর্ঘ দিন পর হলেও রাস্তা পাকা হচ্ছে। দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে গ্রামবাসী। এখন উল্টো দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে। এলজিইডি অফিসে খবর নিয়ে শুনেছি, ঠিকাদার বিল তুলে নিয়ে নাকি পালিয়েছে।
বেংরোল জিয়াবাড়ী গ্রামের মনসুর আলম বলেন, সপ্তাহ খানেক আগে প্রতিবেশী বেলালের বাড়িতে আগুন লাগে। রাস্তা খুঁড়ে রাখার কারণে ফায়ার সার্ভিস সময়মতো পৌঁছাতে পারেনি। পুড়ে ছাই হয়ে যায় বাড়িটি। বর্ষার সময় কাদাপানিতে সয়লাব হয়ে থাকায় এ এলাকায় কেউ আসতে চায় না।

এ দিকে রাস্তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম ও বরাদ্দসহ যাবতীয় তথ্যের জন্য একাধিকবার উপজেলা প্রকৌশল অধিদফতরে যোগাযোগ করা হয়। তখন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম এ জন্য সময় চান। সাত দিন পর তার কাছে আবার গেলে তিনি উল্টো প্রশ্ন করেন, ‘চার বছর আগের রাস্তার কাজ, এখন খবর নিতে আসছেন কেন? এমন তো হতে পারে ঠিকাদার ভুল করে ওই রাস্তার কাজ শুরু করেছিলেন। আমি অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি। এর বেশি কিছু জানি না।’ তবে মিষ্টি খাওয়ার জন্য ৬৫ হাজার টাকা কে নিয়েছেন জানতে চাইলে জবাব দিতে অনীহা প্রকাশ করেন সাইফুল ইসলাম।
এ বিষয়ে এলজিইডির ঠাকুরগাঁও নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মামুন বিশ্বাস বলেন, ‘রাস্তা খুঁড়ে রাখবে ঠিকাদার, চার বছর ভোগান্তিতে থাকবে মানুষ, এটা হতে পারে না। সংবাদ প্রকাশ করেন, আমি বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো।’


আরো সংবাদ



premium cement