০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


নারায়ণগঞ্জে ৭ খুন : বিচার কোন পর্যায়ে?

খুনের শিকার সাতজন - ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় পুরো দেশ তোলপাড় হলেও ১০ বছরেও ওই মামলার বিচার কাজ শেষ হয়নি। জেলা আদালত ও হাইকোর্টে এ সংক্রান্ত রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা যে আপিল করেছিল তার এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।

নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মনিরুজ্জামান বুলবুল বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, সব ধাপ পেরিয়ে মামলাটি এখন আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় আছে। ‘আশা করি দ্রুতই সেখান থেকে এ মামলার চূড়ান্ত রায় আসবে,’ বলেন তিনি।

এর আগে নারায়ণগঞ্জের আদালত এ সংক্রান্ত মামলায় ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও নয়জনকে কারাদণ্ড দিয়েছিল। পরে হাইকোর্ট ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে আর বাকি ১১ জনকে যাবজ্জীবন এবং অন্য নয়জনের কারাদণ্ড বহাল রাখে।

বিচারিক আদালত ও পরে হাইকোর্টে এ মামলার রায়ে যাদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছিল তারা হলেন তখনকার র‍্যাব-১১-এর অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ (পরে অবসরপ্রাপ্ত), তখনকার কোম্পানি কমান্ডার মেজর আরিফ হোসেন (পরে অবসরপ্রাপ্ত), লেফট্যানেন্ট কমান্ডার এম মাসুদ রানা (ঘটনার পরে চাকরিচ্যুত) এবং বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন।

মামলার বাদি ও খুন হওয়া সাতজনের অন্যতম কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বিবিসি বাংলাকে বলেন, তারা চান আদালত যে দণ্ড দিয়েছে তা দ্রুত কার্যকর করা হোক।

‘জানি না কবে এই অপরাধীদের শাস্তি কার্যকর করা হবে। কতদিন অপেক্ষা করতে হয় কে জানে। সরকারের কাছে অনুরোধ দ্রুত শাস্তি কার্যকর করুন,’ বলেন তিনি।

কী ঘটেছিল ১০ বছর আগে
আশরাফ হোসেন ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তবে বাস করেন নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া এলাকায়। ১০ বছর আগে অর্থাৎ ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল বিকেলে তিনি ওই এলাকাতেই ছিলেন।

সেদিনের ঘটনা মনে করে বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে পুরো নারায়ণগঞ্জ স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিল। প্যানিক ছড়িয়ে পড়েছিল। রাস্তাঘাট খালি হয়ে গেলো। খবর ছিল শুধু একটাই যে চন্দন সরকার ও কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ ১০ জন নিখোঁজ। তাদের কেউ তুলে নিয়েছে।’

সেদিন আদালত থেকে ফেরার পথে সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ পাঁচজন এবং তার আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার ড্রাইভারকে কে বা কারা অপহরণ করে নিয়ে গেছে-এই খবর মুহূর্তেই সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।

নজরুল ইসলাম, চন্দন সরকার ও তার ড্রাইভার ছাড়াও সেদিন আরো যারা অপহৃত হয়েছিলেন তারা হলেন, নজরুল ইসলামের সহযোগী মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম লিটন এবং মনিরুজ্জামান স্বপনের ড্রাইভার জাহাঙ্গীর আলম।

এর তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপরই এই অপহরণ ও হত্যার সাথে বিশেষ বাহিনী র‍্যাবের সেখানকার কর্মকর্তা ও কয়েকজন সদস্যের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে আসে।

পরে তখনকার র‍্যাব-১১ অধিনায়ক ও সেনা কর্মকর্তা তারেক সাঈদসহ আরো একজন সেনা কর্মকর্তাকে সেনানিবাস থেকেই আটক করা হয়। তারেক সাঈদ তখনকার একজন মন্ত্রীর জামাতা হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও বেশ আলোচনা হয়।

কিন্তু ঘটনার পরপরই ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন মামলার আরেক অভিযুক্ত নুর হোসেন। ওই বছরই জুনে কলকাতা থেকে নুর হোসেনকে গ্রেফতার করে সেখানকার পুলিশ। এক বছর পর ২০১৫ সালের নভেম্বরে তাকে বাংলাদেশের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এর মধ্যে এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়। একটি করেন নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি আর অন্যটি করে চন্দন সরকারের জামাতা।

পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে দুই মামলার কার্যক্রম একসাথেই চলে এবং ২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারি বিচারিক আদালতে মামলার রায় হয়। রায়ে কাউন্সিলর নুর হোসেন এবং সাবেক র‍্যাব অধিনায়ক তারেক সাঈদসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

যদিও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তারেক সাঈদ যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন তাতে তিনি দাবি করেন যে মেজর আরিফই তাকে সাতজনকে মেরে ফেলা হয়েছে বলে জানান।

তার দাবি ছিল, ২০১৪ সালের মার্চে র‍্যাবের অধিনায়কদের মাসিক সম্মেলনে তিনি একটি তালিকায় থাকা চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের নির্দেশ পান, যে তালিকায় তখনকার প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামেরও নাম বিশেষভাবে চিহ্নিত ছিল।

ওই সম্মেলনের পরদিন তিনি তখনকার মেজর আরিফকে নির্দেশ দেন আর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রানা নামে আরেকজন কর্মকর্তাকে নজরুল ইসলামকে গ্রেফতারের বিষয়ে আরিফকে সহায়তার নির্দেশ দেন।

তারেক সাঈদ তার জবানবন্দিতে তখন দাবি করেছিলেন যে ২৭ এপ্রিল নজরুল ইসলামকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালায় র‍্যাব এবং রাত ১১টার দিকে মেজর আরিফ তাকে জানান যে নজরুল ইসলামসহ আসামিদের তিনি মেরে ফেলেছেন।

সাত খুনের চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় র‍্যাবের মতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর তা তদন্তে হাইকোর্টের নির্দেশে সে বছর ৭ মে জনপ্রশাসনের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার।

কমিটি নারায়ণগঞ্জের ওই অপহরণ ও হত্যার সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ জড়িত ছিল কি না তা একটি গণতদন্তের মাধ্যমে খুঁজে দেখার চেষ্টা করে এবং অপহৃত ব্যক্তিদের উদ্ধারে সময়মতো ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো অবহেলা ছিল কি না সেটিও জানার চেষ্টা করে।

এই গণতদন্তের জন্য কমিটির সদস্যরা নারায়ণগঞ্জে যান এবং যেখানে লাশ পাওয়া গিয়েছিল সেই জায়গাগুলো ঘুরে দেখেন।

কমিটি বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় সাড়ে তিন শ’ মানুষের সাথে কথা বলেছে যাদের মধ্যে রাজনীতিক, সাধারণ মানুষ, নিহতদের আত্মীয়স্বজন ও র‍্যাবের কর্মকর্তারাও ছিলেন।

পরে ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলার রায় হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা উচ্চ আদালতে যায়। ২০১৮ সালের আগস্টে উচ্চ আদালত ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন। এরপর আপিল করা হয় কিন্তু গত পাঁচ বছর ধরেই মামলাটি শুনানির অপেক্ষায় আছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের পিপি মনিরুজ্জামান বুলবুল।

আদালত যাদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল
সাত খুনের মামলায় সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন ও সাবেক তিন র‌্যাব কর্মকর্তাসহ ২৬ আসামির ফাঁসির রায় দিয়েছিল নারায়ণগঞ্জের বিচারিক আদালত। এরা হলেন- নূর হোসেন, র‍্যাব-১১’র সাবেক অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ (ঘটনার পরে অবসরপ্রাপ্ত), র‍্যাবের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার মাসুদ রানা, হাবিলদার এমদাদুল হক, আরিফ হোসেন (আরওজি-১), ল্যান্সনায়েক হীরা মিয়া ও বেলাল হোসেন, সিপাহী আবু তৈয়ব, সৈনিক আসাদুজ্জামান নূর, কনস্টেবল মো: শিহাব উদ্দিন, এসআই পুর্নেন্দু বালা, নূর হোসেনের সহযোগী আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দিপু, রহম আলী, মোর্তুজা জামান চার্চিল, সেলিম, ছানা উল্লাহ ছানা, শাহজাহান, জামাল উদ্দিন ও আবুল বাশার, সৈনিক আব্দুল আলীম, মহিউদ্দিন মুন্সী, আল আমিন শরীফ ও তাজুল ইসলাম ও সার্জেন্ট এনামুল কবীর।

পরে হাইকোর্ট নূর হোসেন, তারেক সাঈদ মোহাম্মদ ও মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) আরিফ হোসেনসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়।

বাকি যাদের মৃত্যুদণ্ড হাইকোর্টও বহাল রেখেছে তারা হলেন- লে. কমান্ডার (চাকরিচ্যুত) এম মাসুদ রানা, হাবিলদার মো: এমদাদুল হক, এ বি মো: আরিফ হোসেন, ল্যান্সনায়েক হিরা মিয়া, ল্যান্সনায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহি আবু তৈয়ব আলী, কনস্টেবল মো: শিহাব উদ্দিন, এসআই পূর্ণেন্দু বালা, সৈনিক আবদুল আলিম, সৈনিক মহিউদ্দিন মুনশি, সৈনিক আল আমিন ও সৈনিক তাজুল ইসলাম।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
হালুয়াঘাটে বিএনপি ঘরানার আব্দুল হামিদ বিজয়ী সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার রায় আজ ৫ ঘণ্টা পর ঢাকার সাথে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক খাগড়াছড়িতে ৩ উপজেলার ফলাফল ঘোষণা, একটিতে স্থগিত সমুদ্র পথ থেকে হজ কাফেলা যেভাবে বিমান যাত্রায় বিবর্তন হলো নাসিরনগর উপজেলায় প্রথম নারী চেয়ারম্যান রোমা, সরাইলে শের আলম ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ না হলে মুসলিম বিশ্ব বসে থাকবে না : ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম ইউক্রেনের সহায়তায় ব্যবহারের জন্য চুক্তিতে পৌঁছেছে ইইউ আটক করা রুশ সম্পদ আফগানিস্তানে তালেবান গাড়িবহরে বোমা হামলা, নিহত ৩ ইসরাইলকে চূড়ান্ত হুমকি বাইডেনের বগি লাইনচ্যুত, ঢাকার সাথে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ বন্ধ

সকল