০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`


‘ভুয়া সভাপতি দিয়ে প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি’

‘ভুয়া সভাপতি দিয়ে প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি’ - ছবি : নয়া দিগন্ত

উল্লাপাড়ায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ম্যানেজিং কমিটির ভুয়া সভাপতি দিয়ে প্রধান শিক্ষক নিজেই সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তাই বিদ্যালয়ে অনিয়ম, দুর্নীতি আর সরকারি অর্থ হরিলুটের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। যিনি প্রধান শিক্ষক তিনি সভাপতি এমন গুঞ্জণ চলছে এলাকায়।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের নাদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সেরাজুল ইসলাম গত এক বছর আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে ম্যানেজিং কমিটির ভুয়া সভাপতি বানিয়ে নিজেই বিদ্যালয়ে সকল অনিয়ম, দুর্নীতি আর সরকারি অর্থ হরিলুট করছে। যাকে সভাপতি করেছে তিনি নিজেও জানেন না, তিনি ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি। বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে সভাপতি আব্দুল হাই-এর নাম থাকলেও কমিটি শীটে নাম রয়েছে মোখলেছুর রহমান। যিনি স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক।

নামধারী সভাপতি মোখলেছুর রহমান জানান, আমাকে সভাপতি পদ দিয়ে কমিটি অনুমোদন করলেও আমি কিছুই জানি না। উপজেলা শিক্ষা অফিস হতে কমিটি অনুমোদন হলেও প্রকৃতপক্ষে মোখলেছুর রহমান এক বছরে কোনো দিন এই বিদ্যালয়ে আসেননি। তিনি ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি এমন কথা প্রধান শিক্ষক বা কমিটির অন্য কোনো সদস্য জানায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক জানান, প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম নিজ ইচ্ছামত বিদ্যালয়ের সকল কাজ করে আসছেন। তার কাছে আমরা জিম্মি। বিদ্যালয়ে সরকারি বরাদ্দের কোনো হিসাব নাই।

স্থানীয়রা জানায়, প্রধান শিক্ষক নিয়মিত ক্লাস করেন না। অফিসে কাজের কথা বলে বেশির ভাগ সময় অনুপস্থিত থাকেন। পকেট কমিটি গঠন করে দুই-একজন সদস্যকে হাত করে সরকারি বরাদ্দ আত্মসাত করে আসছে। বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এভাবে দীর্ঘ দিন ধরে প্রধান শিক্ষক সেরাজুল ইসলাম বিদ্যালয়ের বার্ষিক সরকারি বরাদ্দের ক্ষুদ্র মেরামত, স্লিপ ফান্ড, প্রাক প্রাথমিক বরাদ্দ, সজ্জিত করণ বরাদ্দ, উপবৃত্তি, জাতীয় দিবসের বরাদ্দসহ বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক বরাদ্দের টাকা আত্মসাত আর হরিলুট করে আসছে।

অভিভাবক সদস্য খাদিজা, ফরিদা, আলিম ও আব্দুল আজিজ বলেন, ‘বিদ্যালয়ের সভাপতি কে, তা আমরা এখনো জানতে পারি নাই। প্রধান শিক্ষক প্রতিষ্ঠানের সকল কাজ তার মনগড়াভাবে করে আসছেন। ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির কোনো মিটিং হয় বলে আমার জানা নাই।’

নাদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সেরাজুল ইসলাম এ অভিযোগের বিষয় স্বীকার করে বলেন, নিজের অবস্থান ঠিক রাখার জন্য এ কাজ করা হয়েছে।

দায়িত্বরত সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে এলাকার লোকজন বিদ্যালয়ের নানান অনিয়মের কথা বলেছেন। আমি সভাপতিকে নিয়ে মিটিং করার কথা বলেছি।

উল্লাপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এম ছানোয়ার হোসেন বলেন, এ বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জল হোসেন বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে কথা বলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement