১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


কালবৈশাখীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

বজ্রপাতে ৬ জেলায় নিহত ৮
কালবৈশাখী ঝড়ে গতকাল গাছ পড়ে ভেঙে গেছে মিরসরাই উপজেলা ভূমি অফিস : নয়া দিগন্ত -


বৃষ্টির সাথে সাথে প্রচণ্ড কালবৈশাখী ঝড়ে গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ সময় বজ্রপাতে ছয় জেলায় ৮ জন মারা গেছেন। গতকাল সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে বৃষ্টির মধ্যে বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন শরীয়তপুরে দুই নারীসহ তিনজন, ফরিদপুরে এক কৃষক, মৌলভীবাজারে সদ্য বিবাহিত যুবক, নেত্রকোনায় এক কৃষক, সিলেটে ওমানপ্রবাসী, মাদারীপুরে দোকান কর্মচারী। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নষ্ট হয়েছে বিপুল পরিমাণ জমির বোরো ধানসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফলের বাগান। এদিকে গতকাল মাত্র ৩ ঘণ্টার বৃষ্টিতেই চট্টগ্রাম মহানগরীর বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। ঝড়ো হাওয়ায় উপড়ে পড়ে বৈদ্যুতিক খুঁটিসহ ট্রান্সফর্মার ও গাছপালা। অন্যদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজও সারা দেশে কালবৈশাখী ঝড়ের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা, রাজশাহী বিভাগ ছাড়াও সারা দেশে কালবৈশাখী ঝড়-বৃষ্টি এবং কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানান, শরীয়তপুরের জাজিরা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতে দুই নারীসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে বৃষ্টির সময় বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন- জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের পাইনপাড়া এলাকার আলতু মাঝির মেয়ে আমেনা বেগম (২৬), নীলফামারী জেলার জলডাঙা উপজেলার তেলিপাড়া এলাকার তহিবুর হোসেনের ছেলে নির্মাণ শ্রমিক আব্দুল হান্নান (২৭) এবং ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার চরসেনসাস ইউনিয়নের বেড়াচাক্কি গ্রামের নেছার উদ্দিন মাঝির স্ত্রী কুলসুম বেগম (৩৮)।
জানা যায়, বৃষ্টির মধ্যে মায়ের খোঁজ করতে গিয়েছিলেন আমেনা বেগম। ফসলি মাঠের মধ্য দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মাকে খুঁজছিলেন তিনি। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাতের আঘাতে মারা যান আমেনা বেগম। স্থানীয় জাহাঙ্গীরের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল আমেনা বেগমের। তার দুই বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। অন্যদিকে ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার চরসেনসাস ইউনিয়নের বেড়াচাক্কি গ্রামে সয়াবিন ক্ষেতে কাজ করছিলেন নেছার উদ্দিন মাঝি। দুপুরে তার স্ত্রী কুলসুম বেগম স্বামীর জন্য দুপুরের খাবার হিসেবে ভাত নিয়ে গিয়েছিলেন সয়াবিন ক্ষেতে। এ সময় ঝড়সহ বজ্রপাত শুরু হলে কুলসুম বেগম মারা যান।

নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনার আটপাড়ায় বোরো জমিতে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে দিলওয়ার মিয়া (৩৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার স্বরমুশিয়া হাওরে এ ঘটনা ঘটে। দিলওয়ার উপজেলার স্বরমুশিয়া গ্রামের ফিরোজ মিয়ার ছেলে। আটপাড়া থানার ওসি মোহাম্মদ তাওহিদুর রহমান বলেন, সোমবার সকালে বাড়ি থেকে দিলওয়ার নিজের জমির ধান কাটতে হাওরে যান। এ সময় বজ্রপাতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেটের কানাইঘাটে মাঠে গরু চরাতে গিয়ে বজ্রপাতে মাহতাব উদ্দিন মাতাই (৪৫) নামে এক ওমান প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে উপজেলার দীঘিরপার ৩ নং পূর্ব ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। মাহতাব উদ্দিন মাতাই উপজেলার দর্পনগর পশ্চিম করচটি গ্রামের রফিকুল হকের ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কানাইঘাট থানা পুলিশের ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার। তিনি বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মাহতাব উদ্দিন সুরমা নদী তীরবর্তী মাঠে গরু চরাতে যান। এ সময় বজ্রপাত হলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।

মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, মাদারীপুরে আড়িয়াল খাঁ নদে গোসল করতে নেমে বজ্রপাতে সঞ্জীব বল্লভ (৩৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মাদারীপুর সদর উপজেলার পুরানবাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে বজ্রাহত হয়েছেন দিগেন বৈদ্য (৪০) নামের আরো একজন। সঞ্জীব গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া উপজেলার নগেন বল্লভের ছেলে। তিনি মাদারীপুর পুরান বাজারের একটি মিষ্টির দোকানের কর্মচারী ছিলেন।
ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, ফরিদপুরের মধুখালীতে বজ্রপাতে মুরাদ মল্লিক (৫৩) নামে এক কৃষক মারা গেছেন। গতকাল সোমবার দুপুর ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় কামরুল শেখ (৩৫) নামে অন্য এক কৃষক আহত হন। নিহত মুরাদ মল্লিক উপজেলার কামালদিয়া ইউনিয়নের মিরাপাড়া গ্রামের লকাই মল্লিকের ছেলে। কামরুল শেখ দস্তরকাপাসাটিয়া গ্রামের কালাম শেখের ছেলে।
কামালদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়ালিদ হাসান মামুন বলেন, ওই দুই কৃষক উপজেলার দস্তর কাপাসাটিয়া মাঠের মরিচের জমিতে কাজ করছিলেন। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে মুরাদ মল্লিক মারা যান এবং আহত অবস্থায় কামরুল শেখকে মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামে বজ্রপাতে সমুজ মিয়া (৩০) নামের সদ্য বিবাহিত এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় নিজ বাড়ির পাশে মাছ ধরতে গেলে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়। তিনি ওই গ্রামের ছনোয়ার মিয়ার ছেলে। পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সদ্য বিবাহিত সমুজ মিয়ার মৃত্যুতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহায়তার কথা জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম মহানগরী পানিতে নিমজ্জিত
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রাম মহানগরীতে মাত্র ৩ ঘণ্টার বৃষ্টিতেই বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। এ সময় কালবৈশাখীর ছোবলে উপড়ে পড়ে গাছপালা। নগরীর জিইসি এলাকায় একটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার খুঁটিসহ উপড়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস গতকাল সন্ধ্যা ৬টা হতে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ১২৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। এর মধ্যে গতকাল বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মাত্র ৩ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৯৭.৭ মিলিমিটার।
গতকাল বেলা ৩টার কিছুক্ষণ আগে থেকেই চট্টগ্রামের আকাশে কালো মেঘ জমা হয়ে অন্ধকার নেমে আসে। এর কিছুক্ষণ পরই বিকট শব্দে বজ্রের গর্জনসহ ঝড়ো হাওয়া এবং ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়। শুরু আঘা ঘণ্টার বৃষ্টিতেই নগরীর নালা-নর্দমা পানিতে ভরে যায়। ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে নগরীর বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর কাপাসগোলা, বাদুরতলা, পাঁচলাইশ, কাতালগঞ্জ, ইপিজেড, সল্টগোলা, আগ্রাবাদ কমার্স কলেজ এলাকা, জিইসি, পাহাড়তলী, ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, চকবাজার, বাকলিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল এলাকা, ডিসি রোড, সিরাজউদ্দৌলা সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় নগরীর চকবাজার, বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন বাজার এবং দোকানপাট পানি নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। নগরীর প্রবর্তক মোড় এলাকায় দেখা যায়, সড়কে দীর্ঘ যানজট লেগে আছে, একটু সামনে বদনাশাহ মাজারের সম্মুখে দুটি সিএনজি টেক্সি পানিতে আটকা পড়েছে। এমনি পরিস্থিতি অন্য গাড়িগুলো ওই সড়ক অতিক্রম করতে না পারায় কিছু চকবাজারমুখী হচ্ছে আবার কিছু ২ নম্বর গেটমুখী হচ্ছে। জিইসি এলাকায় দেখা যায়, রাস্তার ধারের হকার ও পথচারীরা বিভিন্ন দোকান ও শপিংমলের সামনে কোনোমতে মাথা গুঁজেছেন।

কালবৈশাখীতে লণ্ডভণ্ড দাগনভূঞা
দাগনভুঞা (ফেনী) সংবাদদাতা জানান, দাগনভূঞা উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড়ে অনেক গ্রাম লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। উপড়ে গেছে অসংখ্য গাছ। গাছের ডাল পড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। এতে পুরো উপজেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ঝড়ে বোরো ধান ছাড়াও আম, লিচুসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গতকাল সোমবার বেলা এক ১টার দিকে ঝড় শুরু হয়ে বেলা আড়াইটায় শেষ হলেও বৃষ্টি অব্যাহত থাকে। সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে ঝড়ের তাণ্ডবে শত শত গাছপালা ভেঙে রাস্তায় পড়ে আছে। শত শত হেক্টর জমির পাকা ধান, আম, কাঁঠাল, লিচুসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফল ও ফসল নষ্ট হয়েছে। উপজেলার উত্তর আলিপুর গ্রামের কৃষক চকু মিয়া জানান, দুপুরের দিকে আকাশ কালো করে হঠাৎ ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। সাথে প্রচণ্ড বজ্রপাত। এতে মানুষ ভয়ে ছোটাছুটি শুরু করে। আমার বোরো ধান বাতাসে জমিনে বিছিয়ে পড়েছে। এ ছাড়া আমার অনেকগুলো গাছ ভেঙে পড়েছে।
দাগনভূঞা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো: জাহাঙ্গীর আলম নয়া দিগন্তকে জানান, কালবৈশাখীর তাণ্ডবে পুরো উপজেলা লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের বড় বড় খুঁটি ভেঙে পড়ার খবর পেয়েছি। এ ছাড়া গাছের ডাল পড়ে তার ছিঁড়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। পুরো উপজেলা বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আমরা মেরামতের কাজ করছি।
দাগনভূঞা উপজেলা কৃষি অফিসার মো: মহিউদ্দিন মজুমদার জানান, ঝড়ে আম, লিচুসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফল ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাৎক্ষণিক ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা যায়নি।

নাসিরনগরে ৪০ বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে কালবৈশাখী ঝড়ে অন্তত ৪০টি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছে। ভেঙে গেছে পল্লী বিদ্যুতের প্রায় ১০টি খুঁটি ও বেশ কিছু ট্রান্সমিটার। অনেক গাছ ভেঙে সঞ্চালন লাইনের ওপর পড়ায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এতে অন্তত ৬৫ হাজর গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়েছে। রোববার রাত থেকে উপজেলার সদর ইউনিয়ন, নাসিরপুর, দাঁতমণ্ডল, ধনকুড়া, কুলিকুন্ডা ও মন্নরপুর এলাকার উপর দিয়ে এ ঝড় বয়ে যায়।
জানা যায়, রোববার সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ঝড়ে বাড়িঘরের টিনের চালা উড়ে কয়েক কিলোমিটার দূরে আছড়ে পড়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু দোকানপাট ও হাঁস-মুরগীর খামারো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় গাছপালা ভেঙে বিদ্যুতের তারের ওপর ঝুলে রয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় কয়েকটি শতবর্ষী কৃষ্ণচুড়া গাছের গোড়া উপড়ে গেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নাসিরনগরে কালবৈশাখী ঝড়ে সদরে ৯টি, কুলিকুণ্ডা ৩টি, দাঁতমণ্ডল ১০টি, নাসিরপুর ৫টি, ধনকুড়া ৪টি, মন্নরপুর গ্রামে ৮-১০টি ও বুড়িশ্বর গ্রামে ৩টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নাসিরনগর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জোনাল ম্যানেজার প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন বলেন, আমরা জেলা অফিসে যোগাযোগের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে খুঁটি মেরামতের কাজ করছি।
রাঙ্গুনিয়া-কাপ্তাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, রাঙ্গুনিয়ায় গতকাল সোমবার বিকালে বজ্রপাতসহ কালবৈশাখী ঝড়ে অর্ধশতাধিক কাঁচাবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ সময় কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়কের তিন স্থানে গাছ পড়ে ঘণ্টাখানেক যান চলাচল বন্ধ থাকায় উভয় পাশে অসংখ্য গাড়ি আটকা পড়ে। এতে শত শত মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হয়। কালবৈশাখীতে চলতি বোরো মৌসুমে বৃহত্তম গুমাইবিলসহ উপজেলাজুড়ে শত শত একর জমিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।

সিএনজি অটোরিকশা চালক মোহাম্মদ দিদার জানান, বিকাল ৩টায় আকস্মিক বজ্রসহ কালবৈশাখী শুরু হলে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সদর ইছাখালী, কাদেরনগর ও বুড়ির দোকান এলাকায় কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়কের ওপর গাছ পড়ে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকে যায়। চন্দ্রঘোনা সিএলসি এলাকার বীরোসিং চাকমা, লিচুবাগানের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ নিজাম জানান, ঝড়ে চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নে অনেক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়াও পুরো রাঙ্গুনিয়ায় বিদ্যুতের খুঁটি ও তার ছিঁড়ে যাওয়ায় হাজার হাজার গ্রাহক দুর্ভোগে পড়েছেন।

মিরসরাইয়ে বজ্রপাতে অসুস্থ ২০ শিক্ষার্থী
মিরসরাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, মিরসরাইয়ে কালবৈশাখীর তাণ্ডবে ফসল, ঘরবাড়ি ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গতকাল দুপুর থেকে শুরু হওয়া কালবৈশাখী ঝড় প্রায় দেড় ঘণ্টা তাণ্ডব চালিয়েছে। প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়ায় উপজেলার অনেক জায়গায় ঘর বাড়ি লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। উপড়ে পড়েছে বড় বড় গাছ। আঞ্চলিক সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বারইয়ারহাট পৌর এলাকায় টিন উড়ে এসে পড়ে সিএনজি চালক আলমগীর গুরুত্বর আহত হয়েছে। আবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি নুরুল আবছার বলেন, বজ্রপাত ও ঝড়ো হাওয়া দেখে ক্লাসের ভিতরে আতঙ্কিত হয়ে আমার বিদ্যালয়ের সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণীর প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর মিরসরাই জোনাল অফিসের ডিজিএম আদনান আহমেদ বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ে গাছপালা ভেঙে বিদ্যুতের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের অফিসের আওতাধীন প্রায় ৩০টি খুঁটি ভেঙে গেছে। অসংখ্য জায়গায় গাছপালা ভেঙে তার ছিঁড়ে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বলেন, এখনো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়নি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের তালিকা প্রেরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement