১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


রাজশাহীতে তরুণকে তুলে নিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগে ৪ পুলিশ প্রত্যাহার

রাজশাহীতে তরুণকে তুলে নিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগে ৪ পুলিশ প্রত্যাহার - ছবি : নয়া দিগন্ত

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় এক তরুণকে তুলে নিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগে চার পুলিশ সদস্যকে পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

রোববার (৫ মে) সন্ধ্যার পর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলী পুলিশ তদন্তকেন্দ্র থেকে তাদের রাজশাহী পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার করা হয়।

ভুক্তভোগী ওই তরুণের নাম সোহান। সে গোগ্রাম গ্রামের কাপড় ব্যবসায়ী মুর্তজার ছেলে।

প্রত্যাহার হওয়া চারজন হলেন গোদাগাড়ীর প্রেমতলী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রেজাউল করিম, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আনোয়ারুল ইসলাম, কনস্টেবল রেজাউল করিম ও মিলন হোসেন।

এর আগে শনিবার (৪ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোদাগাড়ী উপজেলার গোগ্রাম গ্রাম থেকে ওই তরুণকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। সোহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ক্রিকেট খেলা নিয়ে সোহান জুয়া পরিচালনা করে। যদিও সে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

ওই তরুণের দাবি, শনিবার রাত ৮টার দিকে তার বাবার দোকান বন্ধ করে বাইরে আসে। এরপর সে তার দুই বন্ধুর সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। ওই সময় দুটি মোটরসাইকেলে করে চারজন তাদের সামনে আসেন। ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয়। এরপর তারা জোর করে তাকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে চলে যান। রাত ৯টার দিকে তার হাতে হাতকড়া পরানো হয়। এরপর তাকে প্রেমতলী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের পাশে থাকা পদ্মা নদীর পাড়ে নিয়ে গিয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয় এবং তার বাবাকে ফোন দিয়ে সেই টাকা আনতে বলা হয়। অন্যথায় মাদক মামলায় চালান দেয়া হবে বলে হুমকি দেন তারা।

এরপর রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার বসন্তপুরে ফাঁকা রাস্তার পাশে তাকে নামিয়ে দেয়া হয়। পরে সে একা গোগ্রাম বাজারে চলে আসে।

ভুক্তভোগী তরুণ আরো জানায়, ডিবি পুলিশ পরিচয় দিলেও ওই সময় তাদের পরনে পুলিশের পোশাক ছিল না। তাদের একজনের হাতে থাকা হাতকড়া তাকে পরিয়ে দেয়া হয়েছিল। পরে তারা তার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। তবে পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

এদিকে ভুক্তভোগী তরুণকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে তার পরিবার তাকে খুঁজতে থাকেন। ফোন করা হয় থানায়। এ সময় এএসআই আনোয়ারুলকে সাদা পোশাকে গোগ্রাম বাজারে দেখতে পান স্থানীয়রা। স্থানীয় লোকজন তার কাছে ভুক্তভোগীর বিষয়ে জানতে চান। একপর্যায়ে স্থানীয় ব্যক্তিরা তাকে অবরুদ্ধ করেন। পরে প্রেমতলী তদন্তকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসমান গণি অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। সেখানে গিয়েই লোকজনকে লাঠিপেটা করেন তিনি। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয়রা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরে গোদাগাড়ী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মতিন ও গোদাগাড়ী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সোহেল রানা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে এএসআই আনোয়ারুলকে সেখান থেকে নিয়ে যান।

তবে ওই তরুণকে তুলে নিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এএসআই আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি জানান, ঘটনার সাথে জড়িত না হলেও তাকে ফাঁসানো হয়েছে।

আর প্রত্যাহার হওয়া এসআই রেজাউল করিম দাবি করেন, আমি এ ঘটনার সাথে জড়িত না। তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মনে করেছে, আমাকে পুলিশ লাইনে রাখা দরকার, তাই রেখেছে।

জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, এ ঘটনার সাথে কারা জড়িত, তা তদন্ত করা হচ্ছে। আর সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থেই চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্ত শেষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement