১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


‘নিরাপদ’ ট্রেনে দুর্ঘটনা আতঙ্ক

-

- ১৬ মাসে নিহত দেড় শতাধিক, আহত শত শত
- ভোগান্তি নিত্যসঙ্গী সেবা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ছোট বড় ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটছে। কখনো দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে হতাহত হচ্ছে আবার কখনো ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বাংলাদেশে যোগাযোগব্যবস্থার সবচেয়ে নিরাপদ বাহন হিসাবে পরিচিত ট্রেন চলাচলে হঠাৎ দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এই পথের যাত্রীরা এখন সবচেয়ে বেশি আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন।

বাংলাদেশ রেলওয়ে নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেলওয়ের দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিনিয়ত উদাসীনতা ও গাফিলতির কারণে সাম্প্রতিক সময়ে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটছে। তারা বলছেন, একই সাথে বিগত দিনে ঘটে যাওয়া ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ চিহ্নিত ও গঠিত তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণে দুর্ঘটনার ঘটনা বাড়ছে কি-না সেটিও সংশ্লিষ্টদের খতিয়ে দেখা উচিত বলে তারা মনে করছেন।

তাদের মতে, ট্রেনযাত্রা নিরাপদ করতে এবং দুর্ঘটনার হার কমাতে হলে রেললাইনের ওপর দিয়ে চলাচলকারী মানুষগুলোর মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি ট্রেনের চালকসহ সংশ্লিষ্টদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি যারা ভালো কাজ করছেন তাদের প্রমোশনসহ সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে। দুর্ঘটনা কমাতে হলে সিগন্যালিংয়ের কাজে প্রশিক্ষিত ও যোগ্য লোক নিয়োগ দিতে হবে।

রেলওয়ে পরিবহনব্যবস্থা সম্প্রসারণ এবং আধুনিকায়নের মাধ্যমে দেশব্যাপী নিরাপদ, সাশ্রয়ী, দক্ষ ও পরিবেশবান্ধব রেলওয়ে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার মিশন নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে কাজ করলেও সাম্প্রতিক সময়ে ঘটছে তার উল্টো। নিরাপদ রেল নেটওয়ার্র্কিংওয়ের পরিবর্তে এখন ভ্রমণে থাকা যাত্রীদের অধিকাংশ সময় থাকতে হচ্ছে ‘দুর্ঘটনা আতঙ্ক’ নিয়ে। কখন কোন এলাকায় ট্রেন যাওয়ার পর ক্রসিংয়ে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে যায়, আবার একলাইনে দুই ট্রেন ঢুকে পড়ে, কখন যে মুখোমুখি সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যায় সেটি নিয়েই তাদের টেনশনের মধ্যে থাকতে হয় বলে যাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে সরেজমিন খোঁজ নিতে গেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী যাত্রী সবুজ মিয়া নয়া দিগন্তকে বলেন, আমি প্রতি সপ্তাহে সুযোগ পেলে ট্রেনে বাড়ি যাই। ইদানীং দুর্ঘটনার কথা শুনছি। অ্যাক্সিডেন্ট নিয়ে শুধু আমি না আমার পরিবারও থাকে টেনশনে। পরিবার থেকে তাকে বলা হয়েছে, প্রয়োজনে সময় বেশি লাগুক তারপরও বাসে যাওয়ার জন্য। দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, শিডিউল মোতাবেক ট্রেন না ছাড়ায় অনেক সময় চালক সময় কাভার করার জন্য দ্রুতগতিতে ট্রেন চালায়। এর ফলে ঘটে যায় দুর্ঘটনায়। এমনিতেই ইঞ্জিনের বয়স অনেক বেশি। জোরে চালাতে গেলে তখন দুর্ঘটনায় পড়ে। এটা আমার মতামত। চট্টগ্রাম যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা যাত্রী শহিদুল হক নয়া দিগন্তকে বলেন, ট্রেন দুর্ঘটনা এখন প্রায়ই ঘটছে। কেন ঘটছে সেটা আর আমরা সঠিকভাবে জানতে পারছি না। তিনি বলেন, আমরাতো জানি ট্রেন নিরাপদ বাহন। একটু ভিড় হলেও নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে যেতে পারব এই গ্যারান্টি পাই। এখন দেখছি, ট্রেনে উঠে অ্যাক্সিডেন্ট আতঙ্কে থাকতে হয়। শুধু আমি নই, আমার মতো অনেককেই। এর মধ্যে দেখি আবার রেলের ভাড়াও বেড়েছে। আমাদের এই গরিবের বাহনে যদি ভাড়া বাড়ানো হয় তাহলে এত টেনশনে না থেকে বিকল্প পথেই যাতায়াত করব। এছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না। যোগ করেন তিনি। তিনি এও বলেন, ট্রেন দুর্ঘটনা হলে আমাদের ভোগান্তির শেষ থাকে না। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার দেখা মতে, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্টেশনে আগের চেয়ে এখন শৃঙ্খলা ফিরেছে। তবে সেবার মান এখনো ঠিকভাবে ফিরে আসেনি। সবার আগে দুর্ঘটনা কিভাবে কমানো যায় সেদিকে কর্তৃপক্ষের বেশি নজর দেয়া উচিত।

সর্বশেষ গত ৩ মে সকাল ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে গাজীপুরের জয়দেবপুর স্টেশনের দক্ষিণে আউটার সিগন্যালে মালবাহী ট্রেনের সাথে যাত্রীবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৯টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে অন্তত চারজন আহত হন। এতে ঢাকার সাথে উত্তর-পশ্চিম রুটের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনসহ দেশের অনেক রেলস্টেশনে ও ট্রেনে ভ্রমণ করা ট্রেনগুলোতে আটকে থেকে অবর্ণনীয় ভোগান্তিতে পড়েন হাজার হাজার কর্মজীবী ও ভ্রমণপিপাসু। প্রাথমিকভাবে সিগন্যালম্যানের ভুলের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জয়দেবপুর স্টেশন মাস্টার হানিফ মিয়া জানিয়েছেন। দুর্ঘটনায় মালবাহী ট্রেনের ৫টি এবং যাত্রীবাহী কমিউটার ট্রেনের ৪টি বগি লাইনচ্যুত হয়। কমিউটার ট্রেনে যাত্রী কম থাকায় হতাহতের সংখ্যা কম হয়েছে। দুর্ঘটনায় কমিউটার ট্রেনের লোকোমাস্টারসহ (ট্রেনের চালক) ৪ জন আহত হয়েছেন। ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই ঘটনার পর গত ৫ মে বিকেল পর্যন্ত ট্রেনের সময়সূচি স্বাভাবিক করতে পারেনি বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, রংপুর বিভাগের ট্রেনগুলো এখনো বিলম্বে ছাড়ছে। বাকিগুলোর চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। দুর্ঘটনার কারণে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারগামী পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেন ছাড়ে তিন ঘণ্টা দেরিতে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। শুধু এই ট্রেনের নয়, ঢাকা থেকে অনেক ট্রেনই সময়মতো না ছাড়ার কারণে শত শত যাত্রীকে স্টেশনেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এর আগে কুষ্টিয়ায় মালবাহী ট্রেনের ধাক্কায় পুলিশের এসআই নিহত হন। তারও আগে রাজবাড়ীতে মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটে। যাত্রীদের মধ্যে থেকে অনেকে আবার প্রশ্ন তুলছেন, নিরাপদ ট্রেনকে অনিরাপদ বানাচ্ছে কারা?

গতকাল সোমবার দুপুরের পর রেলপথমন্ত্রী মো: জিল্লুল হাকিমের সাথে টেলিফোনে এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। পরে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইফতেকার আলম রাজনের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, স্যার একটি মিটিংয়ে রয়েছেন। ২০২৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ট্রেনে কতগুলো দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং কতজন মারা গেছেন এমন পরিসংখ্যান জানতে চাইলে তিনি এর জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালক (জনসংযোগ) নাহিদ সাহেবের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। পরে পরিচালক নাহিদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোন ধরেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একটি-দু’টি দুর্ঘটনা নয়, গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত মোট ১৬ মাসে বাংলাদেশ রেলওয়েতে দেড়শতাধিক ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এতে কমবেশি দেড় শতাধিক যাত্রী নিহত ও অসংখ্য যাত্রী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেন।

এর মধ্যে ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে রেল দুর্ঘটনার একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করে শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন্স রিপোর্টার্স ফোরাম নামের একটি সংস্থা। গত বছরের ৫ আগস্ট প্রকাশিত ওই পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৬ মাসে রেল দুর্ঘটনায় ১৩১ জন মারা গেছেন। এই সময়ে আহত হয়েছেন ১১০ জন। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাসে সর্বোচ্চ ৪৪টি দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় ৩৭ জন নিহত ও ৮ জন আহত হন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। ওই সংস্থাটি ঢাকার বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত দুর্ঘটনার তথ্য সূত্র হিসেবে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, জানুয়ারি মাসে ১২টি দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহত ও ৭ জন আহত হয়েছিলেন। মার্চ মাসে ১৮টি দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহত এবং পাঁচজন আহত, এপ্রিল মাসে ১৭টি দুর্ঘটনায় যথাক্রমে ২০ ও ৬৯ জন নিহত ও আহত, মে মাসে ২৪টি দুর্ঘটনার ঘটনায় ২৫ জন নিহত ও আটজন আহত এবং জুন মাসে ২২টি দুর্ঘটনায় ১৯ ও ১৩ জন নিহত ও আহত হয়েছিলেন। সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে রেল দুর্ঘটনার ৯টি কারণ চিহ্নিত করার কথা বলেছে। এর মধ্যে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, সিগন্যালিং সিস্টেমের ত্রুটি, বিপজ্জনক লেভেলক্রসিং, ইঞ্জিন ধারণক্ষমতায় অতিরিক্ত কোচ সংযোজন, রেলপথে পাথরের অভাব, ঝুঁকিপূর্ণ রেলসেতু, আধুনিক প্রযুক্তির অভাব, জনবলের স্বল্পতা ও নড়বড়ে ট্র্যাকের ব্যবহার। রেললাইনে নিম্নমানের স্লিপার ও ফিশপ্লেটসহ বিভিন্ন উপকরণ। পর্যবেক্ষণে, রেলপথ সম্প্রসারণ করা হলেও পুরনো ট্র্যাকগুলো সংস্কার না হওয়ায় দ্রুতগতির ট্রেন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। যার ফলে ট্রেন চলাচলে কাক্সিক্ষত সুফল মিলছে না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এরপরও ঘটতে থাকে একের পর এক ট্রেন দুর্ঘটনা।

চলতি বছরের ১৭ মার্চ বিকেলে কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার হাসানপুর রেলওয়ে স্টেশনের কাছে একটি যাত্রীবাহী ট্রেনের ৯টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ ঘটনায় অসংখ্য মানুষ আহত হয়। দুর্ঘটনার পর ঢাকা, ময়মনসিংহ, জামালপুর ও সিলেটের সাথে চট্টগ্রামের রেলযোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
এর আগে গত বছরের ২৩ অক্টোবর ঢাকা থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে কিশোরগঞ্জ জেলায় একটি যাত্রীবাহী ট্রেন এবং একটি মালবাহী ট্রেনের সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৮ জন নিহত হয়েছিলেন। এ ঘটনায়ও শতাধিক যাত্রী আহত হন। ওই সময় ভৈরবের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাদিকুর রহমান সবুজ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, যাত্রীবাহী ট্রেনটি যখন ঢাকার পথে ট্র্যাক পরিবর্তন করার চেষ্টা করছিল তখন বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মালবাহী ট্রেন তার শেষ দু’টি বগিতে ধাক্কা দেয়। দু’টি বগিতে ৩০০ জন যাত্রী ছিলেন।

বৃষ্টিতে লাইনের নিচে মাটি দেবে গেছে : ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল যোগাযোগ বন্ধ
গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা জানান, ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে গয়েশপুর বাজারের অদূরে পিঠাগুড়ির ব্রিজ হেলে পড়ায় ঢাকা -ময়মনসিংহ রেল যোগাযোগ ধরে বন্ধ রয়েছে।

জানা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে উপজেলার পাইথল ইউনিয়নের গয়েশপুর বাজারের কাছে পিঠাগুড়ির ব্রিজ। ব্রিজের সংস্কার কাজ চলমান। গত দুই দিনের অতি বৃষ্টির কারণে ব্রিজের লাইনের নিচে মাটি দেবে যাওয়াতে ট্রেন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ট্রেনের শিডিউলের বিপর্যয়ে যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেন কাওরাইদ এবং হাওর এক্সপ্রেস ট্রেন মশাখালি স্টেশনে প্রায় তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ফলে দূরে ট্রেন যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছে। এমতাবস্থায় ঢাকা-ময়মনসিংহ লাইনে চলাচলকারী যাত্রীরা বিকল্প পথে যাতায়াত শুরু করে।
গফরগাঁও রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো: সেলিম আল হারুন বলেন, সংস্কারকর্মীরা ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করতে লাইনে কাজ করছেন। আশা করছি, খুব দ্রুতই রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হবে।


আরো সংবাদ



premium cement