০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


করের বোঝা বাড়ছে

অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান সব নাগরিকের সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার। গ্রামের হতদরিদ্র মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় বিভিন্ন ভাতার ব্যবস্থা থাকলেও শহরের ভাসমান ছিন্নমূল মানুষদের তা নেই। আগামীকালের জাতীয় বাজেটে এদের জন্য কোনো বরাদ্দ থাকছে কী? : নাসিম সিকদার -

বাজেট ২০২৩-২৪
- রিটার্ন স্লিপ নিতে গুনতে হবে ২ হাজার টাকা
-ব্যক্তি শ্রেণীর আয়করমুক্ত সীমা বাড়ছে

দেশের জনগণের ওপর আরেক দফা করের বোঝা বাড়ছে। বিভিন্ন পণ্যের কর হার বাড়ানো হচ্ছে। কিছু কিছু পণ্যের বিদ্যমান কর রেয়াত সুবিধা তুলে দেয়া হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের আমদানিতে শুল্কহার বাড়ানো হচ্ছে। শূন্য আয় (করযোগ্য সীমার নিচে বার্ষিক আয়) দেখিয়ে বিনা পয়সায় বর্তমানে রিটার্ন জমা স্লিপ (প্রাপ্তি স্বীকারপত্র) পাওয়া যায়। এখন আর বিনা পয়সায় রিটার্ন জমা স্লিপ পাওয়া যাবে না। করযোগ্য আয় না থাকলেও আগামীতে রিটার্ন জমা স্লিপ নিতে দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে। আর রিটার্ন জমার স্লিপ না নিলে সরকারি-বেসরকারি ৪৪ ধরনের সেবা পাওয়া যাবে না। এভাবে নানাভাবে করের জাল বিস্তার করা হচ্ছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে এ ঘোষণা দিবেন বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এমনিতেই সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এর ওপর নতুন করে কর হার বাড়ানো হলে বাজেটের পর পণ্যের দাম আরো বেড়ে যাবে। এতে জনদুর্ভোগ আরো বেড়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে কলম, সিগারেট, জর্দা-গুল, খেজুর, সিমেন্ট, কাজু বাদাম, মাইক্রো ওভেন, এলপি গ্যাস সিলিন্ডার, টয়লেট টিস্যু, প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈজসপত্র, বিদেশী টাইলস, মোবাইল ফোন, বাসমতি চাল, চশমার ওপর শুল্ক-কর অথবা ভ্যাট বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ফলে নিত্যব্যবহার্য এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে। নতুন অর্থবছরে বাসমতি চাল আমদানিতে ভ্যাট বসানো হতে পারে।

সূত্র জানায়, প্লাস্টিকের তৈরি সবধরনের টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালি সামগ্রীর জন্যও অতিরিক্ত ২ শতাংশ ভ্যাট গুনতে হবে। কারণ এসব পণ্যের উৎপাদনে ভ্যাট বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বর্তমানে এসব পণ্যের উৎপাদনে ৫ শতাংশ ভ্যাট আছে। অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি গৃহস্থালিসামগ্রী ও তৈজসপত্রের ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে কিচেন টাওয়াল, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন টিস্যু, ফেসিয়াল টিস্যু/পকেট টিস্যু ও পেপার টাওয়াল উৎপাদনে ৫ শতাংশ ভ্যাট আছে, এটি বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে তাজা ও শুকনা খেজুর আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, দেশে বাদাম চাষকে উৎসাহিত করতে কাজু বাদাম আমদানিতে শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৩ শতাংশ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর ফলে আমদানি করা কাজু বাদামের দাম বাড়তে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ফল ও বাদামের আমদানি শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়ায়, সামনে বাদামসহ বিভিন্ন ফলের দাম বাড়তে পারে।

শুল্ক ফাঁকি রোধে নতুন অর্থবছরের বাজেটে সবধরনের ওভেন আমদানির শুল্ক ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে মোট করহার ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এতে বিদেশী ওভেনের দাম বাড়তে পারে। অবশ্য দেশে ওভেন উৎপাদনের ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেয়া আছে।
বর্তমানে সারা দেশে রান্নার কাজে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যাপকহারে ব্যবহৃত হয়। আগামী অর্থবছরের বাজেটে সিলিন্ডার উৎপাদনে ব্যবহৃত স্টিল ও ওয়েল্ডিং ওয়্যার আমদানিতে শুল্ক আরোপ এবং উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ফলে সামনে সিলিন্ডারের দাম বাড়তে পারে।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে সবধরনের সিগারেটের দাম বাড়তে পারে। নিম্নস্তরের এক প্যাকেট (২০ শলাকার) সিগারেটের (হলিউড, ডার্বি) দাম ৯০ টাকা, মধ্যমস্তরের (স্টার, নেভি) সিগারেটের দাম ১৩৪ টাকা, উচ্চস্তরের (গোল্ডলিফ) সিগারেটের দাম ২২৬ টাকা এবং অতি উচ্চস্তরের (বেনসন, মালবোরো) সিগারেটের দাম ৩০০ টাকা করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তবে বিড়ির দাম অপরিবর্তিত থাকবে।
মোবাইল ফোনকে বিলাসী পণ্য বিবেচনায় নিয়ে বাজেটে ভ্যাট আরোপ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বর্তমানে মোবাইল ফোন উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি আছে, সেখানে ২ শতাংশ ভ্যাট বসানো হচ্ছে। আর সংযোজন পর্যায়ে ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ এবং ৫ শতাংশ থেকে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। এ কারণে খুচরা পর্যায়ে মোবাইল ফোনের দাম বাড়তে পারে।

কলম উৎপাদনে বর্তমানে ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে, সেখানে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এতে কলমের দাম বাড়তে পারে। চশমার ফ্রেম ও সানগ্লাস আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সেই সাথে উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সাইকেলের যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সেই সাথে শিরিষ কাগজ আমদানিতেও শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে।
নতুন বাজেট বাড়ি নির্মাণের খরচ বাড়বে। বাড়ি নির্মাণের প্রধান উপকরণ সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার আমদানিতে বর্তমানে টনপ্রতি ৫০০ টাকা শুল্ক আছে, এটি বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হতে পারে। এ কারণে সিমেন্টের দাম বাড়তে পারে। বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত বিদেশী টাইলস আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এ কারণে বিদেশী টাইলসের দাম বাড়তে পারে। মূলতঃ দেশীয় টাইলস শিল্পকে সুবিধা দিতে এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

অবশেষে ব্যক্তি শ্রেণীর আয়করমুক্ত সীমা বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানের আয়করমুক্ত সীমা ব্যক্তির ক্ষেত্রে তিন লাখ টাকা রয়েছে। অর্থাৎ কারো বাৎসরিক আয় তিন লাখ টাকা হলে তাকে আর আয়কর দিতে হয় না। এখন এই সীমা বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। শুধু তাই নয়, নারী ও বয়স্ক নাগরিকদেরও আয়করমুক্ত সীমা বর্তমানে সাড়ে তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে চার লাখ টাকা করা হচ্ছে। প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে এই সীমা সাড়ে ৪ লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে চার লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বসবাসরত করযোগ্য ব্যক্তিদের ন্যূনতম আয়কর ৫ হাজার টাকায় অপরিবর্তিত রাখা হচ্ছে।
বর্তমানে দেশে ব্যক্তিপর্যায়ে টিআইএন সনদধারীর সংখ্যা প্রায় ৮৬ লাখ। এর মধ্যে মাত্র ৩২ লাখ ব্যক্তি আয়কর রিটার্ন জমা দেন। এর মধ্যে প্রায় আট লাখের করযোগ্য আয় নেই। রিটার্ন দাখিল বাড়ানোর পদক্ষেপের ঘোষণা থাকবে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্যে। করযোগ্য আয় না থাকলেও বিভিন্ন সেবা নিতে কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র যারা নেবেন, তাদের ওপর কর আরোপ করার প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায়। প্রমাণপত্র পেতে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর আরোপ হতে পারে। বর্তমানে পাঁচ লাখ টাকার বেশি ব্যাংক ঋণ গ্রহণ ও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগসহ ৩৮ ধরনের সেবা পেতে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র লাগে। আগামী অর্থবছরে এর সাথে আরো ছয় ধরনের সেবা যুক্ত হতে পারে।

রিটার্ন স্লিপ নিতে গুনতে হবে ২ হাজার টাকা : শূন্য আয় (করযোগ্য সীমার নিচে বার্ষিক আয়) দেখিয়ে বিনা পয়সায় আগামীতে রিটার্ন জমা স্লিপ (প্রাপ্তি স্বীকারপত্র) পাওয়া যাবে না। করযোগ্য আয় না থাকলেও আগামীতে রিটার্ন জমা স্লিপ নিতে দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে। আর রিটার্ন জমার স্লিপ না নিলে সরকারি-বেসরকারি ৪৪ ধরনের সেবা পাওয়া যাবে না। এর মধ্যে রয়েছে ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ, সঞ্চয়পত্র কেনা, ব্যাংক ঋণ, গাড়ির ফিটনেস নবায়ন ও বাড়ির নকশা অনুমোদনের মতো সেবা।
এদিকে, আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে টিআইএনধারীর সংখ্যা এক কোটিতে উন্নীত করতে চায় রাজস্ব বোর্ড। এ জন্য বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় এনবিআরের শাখা কার্যালয় স্থাপন ও জনবল নিয়োগের মাধ্যমে নতুন করদাতা শনাক্ত করা হবে। এ ছাড়া আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারী স্কিম গ্রহণের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ের করদাতাদের সহজে কর প্রদানসহ রিটার্ন দাখিলে উদ্বুদ্ধ করা হবে। কর আদায়ে সহযোগিতা করার জন্য বেসরকারি এজেন্ট নিয়োগেরও পরিকল্পনা রয়েছে এনবিআরের। তবে এই এজেন্টদের কর আদায়ের ক্ষমতা থাকছে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement
জনগণকে নিরপেক্ষভাবে সেবা দিতে পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ আইজিপির বিরোধী দলবিহীন পার্লামেন্টের নামে দেশের সম্পদ নষ্ট করার এখতিয়ার কারো নেই: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চলতি মাসে ঢাকা আসছেন ডোনাল্ড লু কমলাপুর মোড় থেকে টিটিপাড়াগামী যানবাহন চলাচল ৬ মাস বন্ধ জনগণকে নিরপেক্ষভাবে সেবা দিতে পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ আইজিপির ধুনটে ট্রাকটরে পিষ্ট হয়ে শিশু নিহত আফগান মাটি ব্যবহার করে পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে টিটিপি : ডিজি আইএসপিআর ইউরোপ যেতে ভূমধ্যসাগরে ডুবে মারা যাওয়াদের ১২ ভাগই বাংলাদেশী সব হজযাত্রীর ভিসা হবে, সঠিক সময়েও যাবে : ধর্মমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাকরি এখনই বাতিল নয় : সুপ্রিম কোর্ট শঙ্কায় ম্যানইউ কনফারেন্স লিগও

সকল