দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের শপথ নেয়া অবৈধ দাবি করে ২৯০ সংসদ সদস্যদের পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিটটি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার সাকিব মাহবুব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান।
এ বিষয়ে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আমরা মনে করি যে শপথ গ্রহণের দিন থেকেই সংসদ সদস্যদের কার্যভার গ্রহণ করা হয়। কিন্তু আদালত বলেছেন, সংসদের প্রথম অধিবেশন থেকে সংসদ সদস্যদের কার্যভার গ্রহণ করা হয়েছে। এখন আমরা এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাবো।
মোখলেছুর রহমান বলেন, রিট আবেদনে দাবি করা হয়, দশম সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই একাদশ সংসদে নির্বাচিতরা শপথ নিয়ে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। অথচ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিতরা গত ৩ জানুয়ারি শপথ নিয়েছেন। সংসদের প্রথম অধিবেশন বসেছিল ৩০ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী সংসদের প্রথম অধিবেশন বসার দিন থেকে সংসদ সদস্যরা কার্যভার গ্রহণ করে থাকেন। ফলে আগে শপথ নিলেও তাতে সংবিধান বা আইনের ব্যত্যয় ঘটেনি। ফলে রিট আবেদনটি সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। তিনি বলেন, আদালতের এই আদেশে প্রমাণিত হলো, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিতদের এমপি হিসেবে শপথ নেয়া ও পদে থাকা বৈধ, সংবিধানসম্মত।
সাংবাদিকদের আদালতে বসতে দিলেন বিচারপতি : এ দিকে এমপিদের শপথ প্রসঙ্গে রিটের আদেশের সময় দাঁড়িয়ে সংবাদ সংগ্রহ করা সাংবাদিকদের বসতে দিলেন আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ। একই সাথে ওই বেঞ্চের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমানের কাছে তিনি জানতে চান, সাংবাদিকরা পেছনের দিকে দাঁড়িয়ে থাকেন কেন? জবাবে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সাংবাদিকরা চাইলে পেছনের দিকে বসতে পারেন।
বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেন, পেছনের দিকে থাকলে আদালতের মন্তব্য গণমাধ্যমকর্মীদের শুনতে অসুবিধা হয়। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে এবং জাতীয় সংসদে সাংবাদিকদের বসার জন্য নির্ধারিত জায়গা আছে। কিন্তু হাইকোর্ট বিভাগে দেখছি না। এ সময় সাংবাদিকদের সামনের সারিতে বসার ব্যবস্থা করে দিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে মৌখিকভাবে নির্দেশ দেন তিনি।
এরপর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল উপস্থিত সাংবাদিকদেরকে সামনের দিকে বসতে অনুরোধ করেন।
আদালতে রিট আবেদনটি দায়ের করেছিলেন আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ।
এর আগে গত ১৭ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নেয়া শপথের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করেছিলেন হাইকোর্ট। এরপর ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন নতুন করে একই গ্রাউন্ডে রিট দায়ের করেন।
গত ৮ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের শপথ বাতিল করে গেজেট প্রকাশের দাবি জানিয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে লিগ্যাল নোটিশ দেন। আইনজীবী মো: তাহেরুল ইসলাম তাওহীদের পক্ষে নোটিশটি প্রেরণ করেন ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। গত ১৩ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে ওই নোটিশের জবাব চাওয়া হয়। জবাব না পেয়ে এই রিট আবেদন করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হয়। নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় পায় আওয়ামী লীগ। দশম জাতীয় সংসদের পাঁচ বছর পূর্তি হয় ২৮ জানুয়ারি। এর এক দিন পরই একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন হয়।