১৭ মে ২০২৪, ০৩ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫
`


পোশাকশ্রমিকদের রেশনিংয়ের জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখার দাবি

জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের গোলটেবিল বৈঠক : নয়া দিগন্ত -

স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সরকার যেভাবে এক কোটি টিসিবির কার্ডের ব্যবস্থা করেছে, ঠিক একইভাবে পোশাকশ্রমিকদের রেশনিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য আসন্ন বাজেটে আলাদা বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে ‘গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আসন্ন বাজেটে বরাদ্দ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ দাবি জানান। এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র।
শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেহেতু ১ কোটি লোকের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা করেছেন, সে জায়গায় আরো ৪৭ লাখ শ্রমিকের রেশনিং ব্যবস্থা করা প্রধানমন্ত্রী জন্য তেমন একটা কঠিন বিষয় হবে না। এখানে মালিক পক্ষ যদি সরকারের সাথে এ বিষয়ে কথা বলে তাহলে হয়তো বিষয়টি কার্যকর হতে পারে।
আসছে বাজেটে আলাদা করে রেশনিং ব্যবস্থার ওপর আলাদা বরাদ্দ থাকার প্রয়োজন আছে মন্তব্য করে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে ট্রেড ইউনিয়ন করতে অনেক কষ্ট করতে হয়। সেখানে রাষ্ট্র ও মালিক পক্ষ বাধা হিসেবে দাঁড়ায়। দেশের অর্থনীতি ও ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার আমি আলাদা করে দেখতে পারি না, দুটোই এক। দেশে শ্রমিকের মজুরি নাকি ৫৬ শতাংশ বেড়েছে, সে তুলনায় বাজারমূল্য কি মজুরির সাথে সামঞ্জস্য হয়েছে? তিনি বলেন, শ্রমিক যদি ভালো থাকে তাহলে যেমন মালিক পক্ষের সুবিধা তেমনি রাষ্ট্রেরও সুবিধা হয়। কারণ শ্রমিক সুস্থ থাকলে তার থেকে আরো বেশি আউটপুট পাওয়া যাবে, উৎপাদনশীলতা বাড়বে। শ্রমিকের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করলে তার ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে, পাশাপাশি মালিকের ওপরও চাপ অনেক কমবে। আমরা আশা করব, আসছে বাজেটে রেশনিং ব্যবস্থার ওপর আলাদা বরাদ্দ থাকবে। শুধু রেশনিং ব্যবস্থা চালু করলেই হবে না, সুনির্দিষ্টভাবে বলতে হবে কোন ধরনের বা কী উপায়ে রেশনিং ব্যবস্থা করা হবে। মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা: ফৌজিয়া মোসলেম বলেন, নারীরা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে গার্মেন্ট সেক্টরে ঢুকেছে বলে কারখানাগুলো এত কম মূল্যে শ্রমিক পাচ্ছে এবং এই সেক্টর এতটা বিকশিত হয়েছে। তবে একজন নারীর ক্ষেত্রে গার্মেন্টে কাজ করা অবস্থায় ৩৫ বছর হয়ে গেলে তিনি তখন আর কাজ করতে পারেন না। মোট কথা তারা একটা বয়সে কর্মঅক্ষম হয়ে পড়বেন। গার্মেন্ট সেক্টরে যে প্রণোদনা দেয়া হয়, তা কোন খাতে ব্যবহার করা হয় তা দেখতে হবে। এটা কি বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যবহার হয় নাকি শুধু বিদেশে পাচার করার জন্য ব্যবহার করা হয়? মোট কথা সামগ্রিক লক্ষ্যটা যদি সুন্দর না হয় তাহলে কোনো কাজই পরিপূর্ণ সুন্দর হয় না। গার্মেন্ট সেক্টরে রেশনিং ভর্তুকি দিলে সরকারের সুনাম বাড়বে উল্লেখ করে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, সর্বশেষ তথ্য মতে দেশের খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশ। যে কারণে এখন থেকে শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা খুবই জরুরি। বিবিএসর জরিপেও দেখা যায় আমাদের দেশে আয় বৈষম্য অনেক বেড়েছে। বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, রেশনিংয়ের বিষয়ে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে দাবি জানানো হয়েছিল। এখনো দাবি জানানো হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবরও বলা হয়েছে। আমি আশা করি এবারের বাজেটে সরকার রেশনের জন্য বরাদ্দ রাখবে। বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকদের রেশনিং ব্যবস্থা করতে সরকারকে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে। সাধারণ মানুষকে টিসিবির পণ্য কম মূল্যে দিয়ে যে সুবিধা দেয়া হচ্ছে, সেখানে যাদের ওপর দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নির্ভর করে তাদের জন্য সামান্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু এত বড় কোনো বিষয় নয়। মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেলে শ্রমিকদের খাদ্যচাহিদা মেটাতে রেশনিং ব্যবস্থা চালুর প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ। গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি ইদ্রিস আলী। সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রুহুল আমিন।


আরো সংবাদ



premium cement