২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এসএ গেমসে স্বর্ণের খাদ!

-

বাংলাদেশের ইতিহাসে সব দিক থেকে এবারের এসএ গেমসে সর্বোচ্চ অর্জন ১৯টি স্বর্ণ, ৩৩টি রৌপ্য ও ৯০টি তা¤্রপদকসহ মোট ১৪২টি পদক। আকাশে উড়ার মতো সাফল্য এলেও মূলত ক্রীড়াঙ্গনে পিছিয়েই রয়েছে বাংলাদেশ। খাদ ছাড়া যেমন স্বর্ণের গহনা হয় না। তেমন বাংলাদেশের ১৯ স্বর্ণপদকেও রয়েছে খাদ। আর এই খাদের নাম ভারত।
২০১০ সালে ঘরের মাটিতে এত দিন ১৮ স্বর্ণই ছিল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। সেটি কমে ৪ স্বর্ণতে এসে ঠেকেছে ২০১৬ সালে গৌহাটিতে। এবার নেপাল গেমসে বাজিমাত ১৯ স্বর্ণে। যার দশটিই এসেছে অ্যারচারি থেকে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে গর্ব করার মতো ১৯৮৫ সালে সাঁতারে মোশাররফ হোসেন একাই পাঁচটি স্বর্ণপদক গলায় ঝুলানোর রেকর্ড রয়েছে। এটি অক্ষত আছে এখনো। তবে এবার ট্রিপল হ্যাটট্রিকের রেকর্ড করেছেন অ্যারচারির সোহেল রানা, রোমান সানা ও ইতি খাতুন। তারা তিনজনই তিনটি করে স্বর্ণপদক অর্জন করেন। কম্পাউন্ড একক ইভেন্ট থেকে বাকি স্বর্ণপদকটি পেয়েছেন সোমা বিশ্বাস। এ ছাড়া কারাতে থেকে তিনটি, ক্রিকেট ও ভারোত্তোলন থেকে দু’টি করে, তায়কোয়ানদো ও ফেন্সিং থেকে একটি করে স্বর্ণ জিতেছেন লাল-সবুজের অ্যাথলেটরা।
১৯ স্বর্ণপদকের মাঝে খাদের পরিমাণই বেশি দেখছেন ক্রীড়া বোদ্ধারা। অ্যারচারিতে দশে দশ স্বর্ণ এসেছে ঠিকই তবে প্রতিদ্বন্দ্বী বলতে ভুটান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা। শক্তিশালী ভারত নিজেদের কোন্দলে নিষিদ্ধ রয়েছে অ্যারচারি থেকে। তবে তারা এক মাস আগে থাইল্যান্ডে ওয়ার্ল্ড অ্যারচারি নামে খেলেছে ২১তম এশিয়ান অ্যারচারি চ্যাম্পিয়নশিপে। যেখানে বাংলাদেশের প্রকৃত ফলাফল হলো একটি ব্রোঞ্জ পদকও মিলেনি। একমাত্র রোমান সানা তারও আগে অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করেছেন নিজের যোগ্যতায়। সে সাফল্যই মূলত সব অ্যারচারের আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি। তবে ভারতের বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন সব অ্যারচার ও কর্মকর্তারা। নিজেদের খাটো না করার মানসিকতায় রোমান সানা, অসীম কুমার, কাজী রাজীব আহমেদ চপল বলেছেন, ‘আমরা পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েই এসেছি। আমাদের অনুশীলনেও ফলাফল ছিল আন্তর্জাতিক মানের। তবে হ্যাঁ, ভারত থাকলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও জোরদার হতো। তারাও আমাদেরকে শক্ত প্রতিপক্ষ মানতে বাধ্য হতো।’
ক্রিকেট পুুরুষ ও মহিলা বিভাগ থেকে যে দু’টি স্বর্ণ এসেছে সেখানেও ছিল না ভারত। অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল শ্রীলঙ্কাই ছিল মূলত শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। পুুরুষ দল তেমন একটা বেগ না পেলেও ফাইনালে সালমা বাহিনীকে চোখ রাঙিয়েছে শ্রীলঙ্কা মহিলা দল। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৭ রানের। যেটি টপকাতে পারেনি শ্রীলঙ্কা অনূর্ধ্ব ২৩ দল। অথচ বাংলাদেশের জাতীয় দলটিই খেলেছে গেমসে। এখানে ভারত পাকিস্তান থাকলে স্বর্ণপ্রাপ্তি অতটা সহজ হতো না বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য।
কারাতে ডিসিপ্লিনে তিনটি ইভেন্টে স্বর্ণ পেয়েছেন আল আমিন, প্রিয়া ও অন্তরা। যাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়ে অন্যান্য দেশের সাথে। যেখানে ছিল না ভারত। পার পেয়ে গেছেন ডেমোনস্ট্রেশন ইভেন্ট কারাতে। কিন্তু কুমিতে (সামনা-সামনি ফাইট) কেউ পেরে ওঠেননি। মার খেয়ে হাসপাতালে যেতে হয়েছে প্রিয়াকে। একই দশা ছিল তায়কোয়ানদোতে। বাংলাদেশকে প্রথম সোনা এনে দেয়া দীপু চাকমা অবশ্য ভারতকে হারিয়েই জিতেছেন। যেটি ছিল ডিসপ্লে শো। পরবর্তীতে বডি কন্ট্রাক ফাইটে প্রচুর মার খেয়েছেন বাংলাদেশের তায়কোয়ানদো খেলোয়াড়রা।
ভারোত্তোলনের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদকে টেকনিক্যাল লোক হিসেবেই জানেন সবাই। যিনি আগ থেকেই জানতে পেরেছেন ৭৬ কেজিতে ভারতের কোনো প্রতিযোগী অংশ নিচ্ছে না। ফলে মাবিয়া আক্তার সীমান্তকে ৮ কেজি ওজন বাড়িয়ে খেলানো হয় ওই ইভেন্টে। স্ল্যাচে ৮৩ ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১০৫ কেজি উঠিয়ে শ্রীলঙ্কার প্রতিযোগীকে অনায়াসেই পরাজিত করে টানা দ্বিতীয়বারের মতো স্বর্ণপদক জিতেন মাবিয়া। ৯৬ কেজিতে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি স্বর্ণপদক জিতেন জিয়ারুল। এখানেও ছিল না ভারতের কোনো ভারোত্তোলক। ২০১০ সালে ঢাকা এসএ গেমসে পুরুষ ভারোত্তোলনে বাংলাদেশের হামিদুল ইসলামের পর ৯ বছর পর স্বর্ণ জিতেন জিয়ারুল। এখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল নেপালের ভারোত্তোলক।
এবার নতুন করে যুক্ত হওয়া ফেন্সিং ডিসিপ্লিনে নিজের নামটি লিখালেন ফাতেমা বেগম। স্বর্ণের লড়াইয়ে নেপালের রবিন থাপাকে ১৫-১০ পয়েন্টে হারিয়ে স্বর্ণপদক গলায় ঝুলান তিনি। এখানেও ছিল না ভারতের আধিপত্য।
তারপরও বাংলাদেশের নামটি লিখা থাকবে রেকর্ডের খাতায়। অনেক ডিসিপ্লিনের ইভেন্টগুলোতে ছিল মাত্র তিন দেশের প্রতিযোগী। যেখানে হেরেও নিদেন পক্ষে ব্রোঞ্জ জিতেছেন অ্যাথলেটরা। স্বপ্ন দেখানো ফুটবলে স্বর্ণবঞ্চিত, সাঁতার, শুটিংয়ে হতাশা ছাপিয়ে অ্যারচারিতে দশে দশ, ফেন্সিংয়ে অংশ নিয়েই স্বর্ণ, মাবিয়ার ব্যাক টু ব্যাক স্বর্ণপদক, ৯ বছর পর কারাতে ডিসিপ্লিনে তিনটি স্বর্ণ, ২০১০ সালে ১৮ স্বর্ণ পেরিয়ে ১৯ স্বর্ণ ইত্যাদি ভুলিয়ে দিবে অনেক কিছু। জোগাবে সামনে চলার প্রেরণা।


আরো সংবাদ



premium cement