০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


পুঁজি রক্ষায় শেয়ার ছাড়ছেন বিনিয়োগকারীরা

-

- ডিএসইর সূচক তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে
- ৯০ কোম্পানি জেড শ্রেণীতে পাঠাতে চায় ডিএসই
- এক সপ্তাহে ১০ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা চলে গেছে

দিন যাচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার রুগ্ণ থেকে আরো রুগ্ণ হচ্ছে। এক ধরনের বেসামাল অবস্থা এই বাজারের। অবস্থা যখন বেগতিক তখন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বৈঠকে বসে। আর সেই সিদ্ধান্ত ভেস্তে যাচ্ছে। এক সপ্তাহে দু’টি সিদ্ধান্ত নেয়ার পরই বাজার আরো বিগড়েছে। ডিএসইর মূল সূচক এখন গত তিন বছরের মধ্যে সর্ব নিম্ন অর্থাৎ ৫ হাজার ৫১৮ পয়েন্টে। ক্রমাগত দর হারিয়ে আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা। শেয়ার বিক্রি বা ছেড়ে দেয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। গড়ে প্রতিদিন ৭১ শতাংশই ছিল বিক্রির চাপ। কিন্তু কেউ কিনতে চাচ্ছে না এই পরিস্থিতিতে। ফলে গত সপ্তাহে দু’বাজার থেকে মূলধন চলে গেছে ১০ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। এই বাজার এখন বিনিয়োগকারীদের মরণফাঁদ। এ দিকে ঢাকা স্টক কর্তৃপক্ষ ৯০টি কোম্পানিকে জেড শ্রেণীতে নামিয়ে দেয়ার প্রস্তাব বিএসইসিতে পাঠিয়েছে।

সাপ্তাহিক লেনদেনে ডিএসইর তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ব্যাংকিং খাতের শেয়ার বিনিয়োগকারীরা বেশি পরিমাণে বিক্রি করতে চাচ্ছেন। এ ছাড়া দর পতনের কারণে লেনদেন নিম্নমুখীতে ছিল সিরামিকস, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সাধারণ বীমা ও জীবন বীমা, ট্যানারি এবং টেক্সটাইল খাতের কোম্পানির শেয়ারগুলো। ব্যাংকিং খাতে ৩৬টির মধ্যে ২৪টিই দরপতনে, প্রকৌশল খাতের ৪২টির মধ্যে ৩৬টি, সাধারণ বীমা খাতের ৪৩টির মধ্যে ৩৯টি, জীবন বীমা খাতের ১৫টির মধ্যে ১৫টিই, ফার্মাসিউটিক্যালস খাতের ৩৩টির মধ্যে ২২টি, মিউচুয়াল ফান্ডের ৩৩টির মধ্যে ৩১টি এখন দরপতনের কবলে।

অব্যাহত পতনে সদ্য সমাপ্ত সপ্তাহে ডিএসইর মূল সূচক ডিএসইএক্স ১৬৮.২১ পয়েন্ট হারিয়েছে, ডিএসই-৩০ ১০ পয়েন্ট, শরিয়াহ ২৯.২৯ পয়েন্ট এবং এসএমই সূচক ৪০ পয়েন্ট হারিয়েছে। লেনদেনে অংশ নেয়া ৪১১টি কোম্পানির মধ্যে ৩২৭টি কোম্পানি ছিল দর পতনের। ৫৭টির দর বেড়েছিল, ১০টির দর অপরিবর্তিত এবং ১৮টি লেনদেনে অংশ নেয়নি। এই বাজার থেকে মূলধন চলে গেছে ৬ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা বা ০.৯৬ শতাংশ। ব্লক মার্কেটে ১৫১ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার টাকার, এসএমই মার্কেটে ১০৬ কোটি ১৯ লাখ ১০ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে।
আর চট্টগ্রাম পুঁজিবাজারে সব সূচকই গড়ে ৩০০ পয়েন্ট কমেছে। সিএএসপিআই কমেছে ৪২৮.৭৬ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক কমেছে ৩৩৪.৯১ পয়েন্ট এবং সিএসসিএক্স ২৪৪.৯০ পয়েন্ট কমেছে। দুই কোটি ৩১ লাখ ২৭ হাজার ২৭১টি শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড লেনদেন হয়েছে মোট ৮১ কোটি ৫৭ লাখ ৩৪ হাজার ৩৮৭ টাকায়। অব্যাহত দর পতনে বাজারমূলধন থেকে তিন হাজার ৬২৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা চলে গেছে।

বাজারমূলধনে এখন এ শ্রেণীর শেয়ারের অংশীদারিত্ব ৫৫.৪৭ শতাংশ, বি শ্রেণীর ৩০.৮৯ শতাংশ, এন শ্রেণীর ১০.২০ শতাংশ এবং জেড শ্রেণীর ৩.৪৩ শতাংশ। লেনদেনে অংশ নেয়া ৩০৭টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছিল ৪৫টির, দরপতনের শিকার ২৪৭টি এবং দর অপরিবর্তিত ১৫টি।
এ দিকে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) নতুন করে তালিকাভুক্ত আরো ৯০টি কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে পাঠানোর সুপারিশ করেছে। গত সপ্তাহে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এই বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। একই সাথে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সম্মতি চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়। পরবর্তিতে ডিএসইর এই সিদ্ধান্তকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি আটকে দেয় বলে জানা গেছে।

সূত্রে জানায়, ডিএসইর রেগুলেশন অনুযায়ী অনেক কোম্পানি ক্যাটাগরি পরিবর্তন হয়ে জেড ক্যাটাগরিতে যাওয়ার যোগ্য। তার পরিপ্রেক্ষিতে সেসব কোম্পানির ক্যাটাগরি পরিবর্তনের জন্য বিএসইসির অনুমতি চায় ডিএসই। কিন্তু বর্তমান বাজার পরিস্থিতি ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় ডিএসইর এই সিদ্ধান্ত আটকে দিয়েছে বিএসইসি।
প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্লেষক রয়েল ক্যাপিটালের পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২.৯৬ শতাংশ পয়েন্ট কমে ডিএসইএক্স সূচক এখন ৫ হাজার ৫১৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে। শেয়ারপ্রতি আয় কমে এখন ৯.৪৮ এ অবস্থান করছে। পুরো সপ্তাহে শেয়ার বিক্রির চাপ ছিল ৭১ শতাংশ এবং কেনার চাপ ছিল মাত্র ২৯ শতাংশ। তবে ব্যাংকিং খাতের শেয়ার ছেড়ে দেয়ার প্রবণতা ও চাপ বেশি ছিল। তারা বলছে, চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে বিনিয়োগকারীরা। আর সে কারণেই নিজের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে স্বল্পমেয়াদে মুনাফা তুলে পুঁজিকে নিরাপদ করছে। কারণ তারা এই বাজারের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement