২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গাপতিলকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন রস টেলর  

-

ব্যাট হাতে খুবই বাজে সময় পার করছেন মার্টি গাপতিল। এই ওপেনার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ ছাড়া বাকি ম্যাচগুলোতে তেমন রানই করতে পারেননি। এই নিয়ে কম সমালোচনার মুখে পড়তে হয়নি তাকে। অথচ এই ওপেনারই এখন ভাসছেন প্রশংসায়। তা ব্যাট হাতে ঝড় তোলার জন্য নয়। দুর্দান্ত এক রান আউটের জন্য। সাবেক ভারতীয় ক্যাপ্টেন ও উইকেটরক্ষক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে তিনি যখন সরাসরি থ্রোতে রান আউট করেন এর আগ পর্যন্ত প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করতে যাচ্ছিল ভারত। নিউজিল্যান্ডের নিশ্চিত জয় ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা ও ধোনির সপ্তম উইকেট জুটির বিশ্বকাপ রেকর্ড ১১৬ রান। প্রয়োজনীয় ২৪০ রান থেকে কিছু দূরে তারা। একটু আগেই আউট জাদেজা ট্রেন্ট বোল্টের বলে ক্যাচ দিয়ে। ৫৯ বলে ৭৭ রান তার ব্যাট থেকে। এরপর ভারতীয়দের ফাইনালে নিয়ে যাওয়ার জন্য শেষ ভরসা হিসেবে লড়ছিলেন ধোনি। অবশেষে তার দুই রানের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে তাকে সাজঘরে এবং ভারতকে দেশে ফেরার ফিরতি টিকিট কাটা নিশ্চিত করেন গাপতিল। তাকে এই দুর্দান্ত থ্রোর উৎসাহ দিয়েছেন ব্যাটসম্যান রস টেলর। গাপতিলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু টেলর। সেমিফাইনালেও ব্যাট হাতে ব্যর্থ গাপতিল। এর পরই টেলর তাকে এই বলে আত্মবিশ্বাসী করেন, ব্যাট হাতে কিছু করতে পারছ না কিন্তু এমন কিছু করো যা হবে অসাধারণ। এই উৎসাহ বাক্যেই বাড়তি প্রেরণা পান কিউই ওপেনারটি। তার এক থ্রোতেই সেমিতে ছিটকে গেল ভারত। আর টানা দু’বারের মতো ফাইনালে নিউজিল্যান্ড।
১০ বলে ২৫ দরকার ২০১১ সালের পর আবার ভারতের ফাইনালে যাওয়ার জন্য। তখনই দলকে জেতানোর শেষ চেষ্টা চালান ধোনি। লকি ফার্গুসনের আগের বলেই পয়েন্টের ওপর দিয়ে ছক্কা মারেন এম এস ধোনি। ফার্গুসনের পরের বলটিও ছিল শর্ট বল। ধোনির পক্ষে অবশ্য এই বল স্কোয়ার লেগ দিয়ে সীমানা ছাড়া করা সম্ভব হয়নি। ৩৮ বছর বয়সী ভারতীয় ব্যাটসম্যানটির পক্ষে প্রাণান্ত চেষ্টা করেও সেই বলে দুই রান নেয়া হয়নি। গাপতিলের থ্রোতে এলোমেলো স্ট্যাম্প। এই থ্রোয়ের সময় স্ট্যাম্পের পাশে ছিলেন না উইকেটরক্ষক। বলটি ওভার থ্রো হলেই বাড়তি রান যোগ হতো ভারতের খাতায়। অবশ্য গাপতিল সেদিকে ভ্রƒক্ষেপ করেনি। নিজেই দায়িত্ব নিয়ে বলটি ছোড়েন। তা হয়েও যায় নিশানাভেদী। সাথে সাথে ভারতীয়দের কান্না আর ব্ল্যাক ক্যাপসদের উল্লাস। সঠিক সময়ে যথাযথ থ্রোটি গাপতিল ও তার বন্ধু টেলরের কথপোকথনেরই ফসল।
রস টেলর জানান, রান খরা অব্যাহত থাকার পর আমি তাকে বলেছিলাম, এমন কিছু করো যা হবে অসাধারণ। চিন্তু করুন পরিস্থিতিটির কথা যখন সে রান পাচ্ছে না; যা তার ব্যাট হাতে বেমানান। এটি তার আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরিয়েছে। এই সময়ে তাকে তো উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যথাসম্ভব পাশে দাঁড়াতে হবে। সেমিফাইনালের মতো ম্যাচে এমন আত্মবিশ্বাসই জরুরি। আমি মনে করি ওই রান আউট এবং জেমি নিশামের ক্যাচই ম্যাচ জিতিয়েছে নিউজিল্যান্ডকে। এখন গাপতিলের ব্যাটে রান পাওয়ার জন্য ভাগ্যও দরকার।
জাদেজা ও ধোনির জুটতে শতরানের ওপর আসা প্রসঙ্গে টেলর বলেন, এটা ছিল মানসিক একটা চাপ। ব্যতিক্রমী ওই উইকেটে শুরুতে মূল স্তম্ভ উইলোধারীদের হারানোর পর জাদেজা নিজেই সব দায়িত্ব নেন। চাপ মুক্ত রাখতে চান ধোনিকে। চাপের মুখে তাদের শতরানের জুটি। সত্যিই অসাধারণ। তবে আমরা জানতাম, আমাদের প্রয়োজন এই দুই জনের যেকোনো একটি উইকেট। তাহলে নতুন ব্যাটসম্যান ক্রিজে এসে চাপে পড়বে। অবশেষে আমরা তা করতে পেরেছি। একটু দেরিতে এই যা।
তবে গাপতিল যে এভাবে রান আউট করবেন তা কেউ ভাবেনি। কারন এ ধরনের রান আউটের সময় তার থ্রো সব সময়ই মিস হতো। বোলার টিম সাউদি মজা করে বললেন, যখন প্রয়োজন নেই তখনই গাপতিলের থ্রো স্ট্যাম্পে লাগত। কিন্তু দরকারের সময় মিস। তবে এখন সবাই তাকে নিয়ে খুশি। আসলে ম্যাচের আগেই আমাদের পরিকল্পনা ছিল ফিল্ডিংয়ের সময় দুর্দান্ত ক্যাচ ধরে বা রান আউট করে জয়ে ভূমিকা রাখার। সূত্র : নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড।


আরো সংবাদ



premium cement