২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ষড়যন্ত্রের যাঁতাকলে ব্যাডমিন্টন

-

বছর বছর ধরে ষড়যন্ত্রের যাঁতাকলে পিষ্ট বাংলাদেশের ব্যাডমিন্টন। নিজেদের সুবিধার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে খেলোয়াড়দের। শাটলাররা কখন যে কর্তাদের জালে আটকে যান তা তারা বুঝতেও পারেন না। যখন বুঝতে পারেন তখন আর কোনো উপায় থাকে না। খেলতে হলে কর্তাদের শেখানো পথে হাঁটতে হবে তা না হলে জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন তিমিরেই থেকে যাবে। তাদের ব্যবহার করে ক্ষমতার পটপরিবর্তনও করা হয়। হাতেগোনা কয়েকজনই বছর বছর ধরে এই ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করছেন। ২০১২ সালে ফেডারেশনের পটপরিবর্তনে বিরাট ভূমিকা রাখে এই চক্রটি। এবারো সে পথেই হাঁটছে তারা। ওই সময় নিজেরা করেছে, এবার ব্যবহার করা হচ্ছে তাদের স্টুডেন্টদের।
২০১১ সালে আন্তর্জাতিক সিরিজ বয়কট করে শাটলাররা। কারণ অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে অনেক অজানা তথ্য এবং ষড়যন্ত্রের বিষয়টি। বিভিন্ন ঘটনা স্বীকার করলেও ক্ষমতার পটপরিবর্তনের কথা এড়িয়ে গেছেন সবাই। তবে ওই সময়ের এক কর্মকর্তা বিষয়টি স্বীকার করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘শাটলাররা যখন একাট্টা হয়ে ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে তখন সিনিয়ররা তাদের অভয় দিয়ে বলেছেন- ঠিক আছে, তোমরা যখন এটা করেই ফেলেছ তখন আর কি করা। সামনে নির্বাচনে সহায়তা করো, তোমাদেরকে আমরা দেখবো। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের একটি তদন্ত রিপোর্টও পরিবর্তন করে ফেলা হয়।’
ওই সময় আন্তর্জাতিক সিরিজ বয়কটের ঘটনা বিরাট প্রভাব ফেলে ব্যাডমিন্টনে। সাধারণ সম্পাদক মাহবুবের অনুপস্থিতিতে সে সময়ের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন জাহিদুল হক কচি। তার সাথে এক মহিলা শাটলারের যৌন হয়রানির বিষয়টিকে ইস্যু করে বিচারের দাবিতে সোচ্চার হন খেলোয়াড়রা। সে সময় শীর্ষ শাটলারের তালিকায় ছিলেন এনাম, পরশ, রইস, সাইফুদ্দিন, দুলাল প্রমুখ। তাদের গাইড হিসেবে কাজ করতেন রাসেল কবির সুমনরা। আর সর্বগোড়ায় ছিলেন জোবায়েদুর রহমান রানা (যিনি পরে সাধারণ সম্পাদক হন)। কচির অহেতুক ক্ষমতা প্রদর্শনে ফেডারেশনে অশান্তি বিরাজ করে। আম্পায়ার মিলনের সাথেও তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। কচির সুবিধার্থেই সব নিয়ম কানুন পরিবর্তন হয়ে যায়। এমনকি ওই সময়ের সেরা স্পন্সর নীট কনর্সানের সাথেও সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
তবে বয়কটের বিষয়ে কচি বলেন, ‘ক্যাম্পের নিয়মকানুন মানেনি ওই মেয়েটি। তখন ক্যাম্প কমান্ডার বাবুলকে বলেছি সবাই অনুশীলন করছে ওই মেয়েটি কেন ঘুরাঘুরি করছে, তাকে শাস্তি দিন। যে কারণে পরে মেয়েটি ক্ষুব্ধ হয়ে আমার বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ উঠিয়েছে। যা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি। তা ছাড়া বয়কটের অন্য কারণ হলো সে সময় এনায়েত উল্লাহ ও এলিনা মিক্সড ডাবলসে জুটি হতে চেয়েছিল। বাংলাদেশের স্বার্থে এনাম ও এলিনাকে জুটি করেছিলাম। তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে এনায়েত অন্যান্য শাটলারদের আমার বিপক্ষে ক্ষেপিয়ে তুলে।’
এনায়েত অভিযোগ উপেক্ষা করে বলেন, ‘ক্যাম্পে সকল শাটলাররা কচির মেয়ে ঘটিত এই অন্যায়কে মেনে নিতে পারেনি। এটি আরো স্পর্শকাতর হয় যখন টিভি চ্যানেলে বিষয়টি উঠে আসে। মূলত তখনি শাটলাররা তার বিচার না হওয়া পর্যন্ত খেলতে অস্বীকৃতি জানায়।’
সার্বিক বিষয়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন রাসেল কবির সুমন জানান, ‘বয়কটের ঘটনায় কারো ইন্ধন ছিল না। কচির মেয়ে ঘটিত কর্মকাণ্ডেই বয়কটের ঘটনা ঘটে। এর চেয়ে বেশি কিছু মনে করতে পারছি না। তবে এর সাথে ক্ষমতা পরিবর্তনের কোনো মোটিভ ছিল না।’
এবার ক্ষমতায় আছেন আমির হোসেন বাহার। যিনি ব্যাডমিন্টনের লোক নন বলে যে যা বলেন তিনি তাই করতে চান। ফোরামের কল্যাণেই তিনি সাধারণ সম্পাদক। এবার তাকে হটানোর জন্য চলছে ষড়যন্ত্র। ৭ বছর আগে যারা কলকাঠি নাড়িয়েছেন এবার তাদের শিষ্যদের দিয়েই কলকাঠি নাড়াচ্ছেন। বর্তমানের শীর্ষ শাটলার লোকমান, মাঙ্গাল, গৌরব, সালমান, আকিব, সিবগাত। মালয়েশিয়া কোচের অধীনে ক্যাম্প শুরু হলেও যোগ দেননি শীর্ষ শাটলাররা। শীতকালে খ্যাপ খেলে শাটলাররা কিছু টাকা পয়সা উপার্জন করেন। যে কারণে ক্যাম্পে যোগ দেননি কেউই। ব্যাডমিন্টন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধু খ্যাপের জন্যই ক্যাম্প বর্জন করেনি শাটলাররা। ২০১১ সালের পুনরাবৃত্তি করতে চাচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীরা। ওই সময় ওরা করেছে এবার তাদের স্টুডেন্টদের দিয়ে করাচ্ছে। ফের ক্ষমতায় আসতে চায় তারা। তবে একটি বিষয় ধাঁধাঁয় ফেলে দিচ্ছেÑ নিখিল চন্দ্র তো ফেডারেশনের লোক। তার স্টুডেন্ট সিবগাত ও আকিব কেন ক্যাম্পে আসছে না !!!


আরো সংবাদ



premium cement