০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`


স্পেশাল অলিম্পিক টিটিতে গোল্ডের প্রত্যাশা

-

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ ইনডোর স্টেডিয়ামের দক্ষিণ প্রান্তের শেষ টেবিলে চোখ আটকে গেল। অভিজ্ঞ হাতের ছোঁয়ায় পিংপং বলটি এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাচ্ছে। সামনে এগোতেই রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে আটকে গেল দৃষ্টি। এরা যে আমাদেরই সমাজে অবহেলিত থাকা বিশেষ শিশু। প্রস্তুতি নিচ্ছে আগামী ১৪-২১ মার্চ আবুধাবিতে হতে যাওয়া স্পেশাল অলিম্পিক ওয়ার্ল্ড সামার গেমসে খেলার। আমরা যাদের স্পেশাল চাইল্ড, প্রতিবন্ধী শিশু বলি তারাই বলল টিটি ইভেন্ট থেকে গোল্ডের প্রত্যাশা করছে। সুস্থ মনমানসিকতায় অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে বেড়ে ওঠা সবল খেলোয়াড়রা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বর্ণপদকের কথা কল্পনাও করতে পারে নাÑ সেখানে বিশেষ খেলোয়াড়রা শোনাচ্ছেন অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জয়ের কথা।
এমন আশার কথা শুনানোর কারণও রয়েছে। তারাই প্রথম নয়, এর আগে ২০১১ সালে গ্রিসে, ২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়ায় এবং ২০১৫ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক টিটিতে স্বর্ণপদক জিতেছে উত্তরসূরিরা। দলটির কোচ গৌতম কুমার দাস জানালেন, ‘তাদের প্রত্যাশা অমূলক নয়। এবার তাদের স্বর্ণজয়ের সম্ভবনা প্রচুর। তাদের যে স্কিল আছে তাতে আমরা স্বর্ণ পাওয়া অবিশ্বাস্য নয়।’
২০০৮ সাল থেকে স্পেশাল শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন গৌতম দাস। ওই সময়ের জাতীয় টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নও তিনি। উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে এমপিএড করার সময় বিলকিস নামে একজন স্পেশাল শিশুদের টিটি প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করার অফার দেন। তখন থেকেই এদের ভালোবাসায় আবদ্ধ হয়েছেন। স্পেশাল শিশুরা আন্তরিক, অল্পতেই খুশি ও কন্ট্রোল করা সহজ বলে এদের মায়া ছাড়তে পারছেন না। তার কথায়, ‘বিশ্বের অন্য বিশেষ শিশুরা যেমন সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে আমরা তেমনটি পাই না। প্রতিবারই আমাদের চ্যালেঞ্জ থাকে। গেমসের সময় সবার স্কিল টেস্ট করে গ্রুপিং হয়। আশা করছি গ্রুপিং যেভাবেই হোক পদকবঞ্চিত হবো না।’ গৌতমের সহকারী হিসেবে কাজ করছেন শামসুন্নাহার মনি। তিনি ২০১৩ সাল থেকে এদের নিয়ে কাজ করছেন। ৭ মার্চ পর্যন্ত অনুশীলন হবে বলে জানালেন তিনি।
স্পেশাল খেলোয়াড় বৃষ্টি খাতুন কানেও শুনেন না, কথাও বলতে পারেন না। ইশারায় জানালেন, প্রথমবারের মতো বিদেশ যাচ্ছেন। দেশের সুনাম বয়ে আনবেন। সবার কাছে দোয়া চাইলেন। আরেকজন হলেন নড়াইলের সাজ্জাদ হোসেন। তিনি মোটামুটি কথা বলতে পারেন, ‘বাংলাদেশের পতাকা উড়াতে চাই। পদকের জন্যই বিদেশ যাবো।’ এদের সাথে যাচ্ছেন স্বাভাবিক খেলোয়াড় চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটিতে পড়–য়া বিকেএসপির সাবেক শিক্ষার্থী দেব চাকমা ও উত্তরা ভার্সিটিতে বিপিএড করা রুকাইয়া আলম। তারা ইউনিফাইড ইভেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
উভয়েরই ভারতে গিয়ে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। রুকাইয়া জানালেন, ‘এ এক ভিন্ন রকমের অভিজ্ঞতা। ওদের কারণেই আমরা অলিম্পিকে খেলার সুযোগ পাচ্ছি। আসলেই ওরা স্পেশাল কারণ ওরা আমাদের থেকে এগিয়ে।’

 


আরো সংবাদ



premium cement