১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


গাজায় যুদ্ধবিরতি : ৩ ধাপের চুক্তিতে যা বলা হয়েছে

দোহাভিত্তিক হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া - ফাইল ছবি

গাজায় যে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবটি ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস গ্রহণ করেছে, তাতে তিনটি পর্যায়ের কথা বলা হয়েছে।

হামাসের গাজা শাখার নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ডেপুটি খলিল আল-হায়া আল জাজিরাকে বলেন, যে প্রস্তাবটিতে তারা রাজি হয়েছেন তাতে তিনটি পর্যায় বা ধাপ রয়েছে। প্রতিটি পর্যায় বা ধাপ ৪২ দিন করে স্থায়ী হবে।

তিনি বলেন, 'প্রথম পর্যায়ের প্রতম দিনে সাময়িকভাবে সামরিক অভিযান বন্ধের সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি থাকবে।'

তিনি বলেন, দ্বিতীয় ধাপে 'সামরিক ও বৈরি অভিযান বিরত থাকার স্থায়ী' ঘোষণা দেয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, এই চুক্তির গ্যারান্টর হবে মিসর এবং যুদ্ধকে আবার ফিরে আসা অনুমোদন করা হবে না।

তিনি আরো বলেন, মধ্যস্ততাকারীরা হামাসকে অবগত করেছেন যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চুক্তিটি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

ইসরাইলের হারেৎজ পত্রিকার খবর অনুযায়ী, হামাস সূত্র দাবি করেছে যে তারা যুক্তরাষ্ট্র, কাতার এবং সেইসাথে মিসরের কাছ থেকে নিশ্চয়তা লাভ করেছে যে তিন পর্যায়েল চুক্তি বাস্তবায়িত হওয়ার পর ইসরাইল আর যুদ্ধ শুরু করবে না।

গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ভেতরে হামাসের হামলার পর এই যুদ্ধ শুরু হয়। হামাস প্রায় ২৫২ জনকে বন্দী করে গাজায় নিয়ে আসে। এরপর থেকে গাজায় নৃশংসভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। ইসরাইলি হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তাদের বেশিভাগই নারী ও শিশু।

যুদ্ধবিরতিতে রাজি নয় ইসরাইল! রাফায় হামলা শুরু
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব গ্রহণ করার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানালেও তা গ্রহণ করতে রাজি নয় ইসরাইল। তারা বলছে, যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবাচ 'ইসরায়েলের মুখ্য দাবি থেকে অনেক দূরে।' তবে তারা তারপরও তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করার জন্য প্রতিনিধি দল পাঠাবে।

সোমবার রাতে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর অফিস জানায়, যুদ্ধ মন্ত্রিসভা 'হামাসের ওপর চাপ প্রয়োগের' লক্ষ্যে রাফায় ইসরাইলি বাহিনীর অভিযান কার্যকর করতে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা আরো জানায়, ইসরাইল পণবন্দীদের মুক্তি এবং যুদ্ধের অন্যান্য লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য হামাসের ওপর চাপ দিতে অভিযান অব্যাহত রাখবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, হামাসের সর্বশেষ প্রস্তাবটি 'ইসরাইলের মুখ্য দাবিগুলো থেকে অনেক দূরে।' বিবৃতিতে একই সময়ে বলা হয়, 'ইসরাইলের কাছে গ্রহণযোগ্য শর্তাবলী হাসিলের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টার লক্ষ্যে' ইসরাইল ওয়ার্কিং-লেভেলের দল পাঠাবে।

এদিকে তেল আবিবে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নিতে পণবন্দী অনেক পরিবারের সদস্যরা বিক্ষোভ শুরু করেছে। তারা ড্রাম বাজিয়ে, বুলহর্ন ফুঁকে এবং আলো জ্বালিয়ে চুক্তিটি গ্রহণ করে তাদের প্রিয়জনদের ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছে।

এদিকে ইসরাইলি বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তাদের সৈন্যরা পূর্ব রাফায় 'টার্গেট করে' হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে।

উল্লেখ্য, কয়েক ঘণ্টা আগে ইসরাইল এক লাখ ফিলিস্তিনিকে গাজার দক্ষিণে রাফা থেকে সরে যাবার আদেশ দেয়। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মিত্র রাফা অভিযানের বিরোধিতা করেছে। রাফায় প্রায় ১৪ লাখ ফিলিস্তিনি, যা গাজার মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেক, আশ্রয় নিয়েছে।

এর আগে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে হামাসের সম্মতির খবর শুনে রাফার মানুষ আনন্দে ফেটে পরে এই ভেবে যে, হয়তো এখন আর আক্রমণ হবে না।

হামাসের সম্মতি

যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব গ্রহণ করে হামাস জানায়, ইসরায়েলের সাথে দীর্ঘ সাত মাসব্যাপী যুদ্ধ স্থগিত করতে তারা মিসরীয়-কাতারি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।

এই গ্রুপ সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের সর্বোচ্চ নেতা ইসমাইল হানিয়ে কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও মিসরের গোয়েন্দামন্ত্রীর সাথে ফোনালাপে এই খবর জানিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই দেশ কয়েক মাস ধরে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে আলাপ-আলোচনায় মধ্যস্থতা করে আসছে। ইসরাইলের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

ইসরাইলি সামরিক অভিযানের আগে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে রাফা শহর খালি করা শুরু করতে ফিলিস্তিনিদের নির্দেশ দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরে এই ঘোষণা করা হয়েছে। ইসরাইল বলছে, রাফা হল হামাসের শেষ শক্ত ঘাঁটি।

হামাসের ওই ঘোষণার খবরে রাফার রাস্তায় মানুষ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।

সূত্র : আল জাজিরা, টাইমস অব ইসরাইল, ভয়েস অব আমেরিকা


আরো সংবাদ



premium cement