৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সংবাদ সম্মেলনে ড. মঈন খান

অযোগ্য নেতৃত্বে পিছিয়ে পড়ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

নয়াপল্টনে বিএনপির সংবাদ সম্মেলন : নয়া দিগন্ত -

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, শিক্ষাব্যবস্থায় চেপে বসা দুর্বল ও অযোগ্য অদক্ষ নেতৃত্বের কারণে পিছিয়ে পড়ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পুরনো পাঠদান পদ্ধতি, অনুন্নত সিলেবাস, শিক্ষক নিয়োগে রাজনীতি, অপ্রতুল গবেষণা কার্যক্রম ও অসমৃদ্ধ লাইব্রেরির কারণে এ বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তাল মিলিয়ে উঠতে পারছে না।
গতকাল রোববার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. মঈন খান বলেন, শিক্ষকের নেতৃত্বে বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক সেক্টরগুলোতে ছাত্রছাত্রীদের ভিজিটে নিয়ে যাওয়া এবং দেশ-বিদেশের নামীদামি অধ্যাপক ও সফল পেশাজীবীদের অতিথি শিক্ষক হিসেবে আনা হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ রকম আধুনিক পাঠদান পদ্ধতি ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রচলিত হয়ে গেলেও আমাদের প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান পদ্ধতি স্কুলের পাঠদান পদ্ধতি থেকে ভিন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আজো পাঠ্যবই থেকে স্কুলের শিশুদের যেভাবে পড়ানো হয়ে থাকে সে রকমই একমুখী লেকচারভিত্তিক পদ্ধতিই অনুসরণ করা হয়। কিন্তু উন্নত বিশ্বের নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একমুখী লেকাচার ছাড়াও ক্লাসরুমে ইন্টার-অ্যাকটিভ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে এ গ্রুপ বা ইন্ডিভিজুয়াল অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হয়, সারপ্রাইজ কুইজ বা টেস্ট নেয়া হয়, গ্রুপ বা ইন্ডিভিজুয়াল প্রেজেন্টেশন নেয়া হয়, মাল্টিমিডিয়া সরঞ্জামের সহায়তা নিয়ে অডিও বা ভিডিও ক্লিপিংস দেখানো হয়।
তিনি বলেন, সম্প্রতি লন্ডনভিত্তিক টাইমস হায়ার এডুকেশন এশিয়ার ৪১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে আমাদের সবার গর্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থান করে নিতে পারেনি। তা বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে হাজারের মধ্যেও নেই। কেন? সেটা আজ জাতির কাছে বড় প্রশ্ন। কোর্স কারিকুলাম বা সিলেবাস উন্নত বিশ্বের নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তাল মিলিয়ে হালনাগাদ করা হয় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো থেকে ছাপা হওয়া নামী প্রকাশকের পাঠ্যবইয়ের বদলে অখ্যাত ভারতীয় বা অনুন্নত বিভিন্ন দেশের প্রকাশকের পাঠ্যবই বেছে নেয়া হয় ক্লাসরুমে পাঠদানের জন্য।
বিএনপির সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ মানসম্মত পাঠদানের জন্য অতীব জরুরি একটি বিষয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব আজ চরম আকার ধারণ করেছে। দলীয় রাজনৈতিক কর্মী অর্থাৎ ছাত্রলীগের কর্মীকে নিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে ভোটার তৈরির চেষ্টা করা হয়, যাতে শিক্ষক রাজনীতিতে প্রভাব বজায় রাখা সম্ভব হয়। এ ছাড়া দ্রুতগতি সম্পন্ন ইন্টারনেটসহ সমৃদ্ধ লাইব্রেরি বা গ্রন্থাগার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান পদ্ধতির সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিটি আজ পুরনো বইয়ের একটি প্রদর্শনী কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে, যেখানে জ্ঞানান্বেষণে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা কদাচিৎ পা ফেলে থাকেন।
মঈন খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কথা শিক্ষা ও গবেষণার স্থান। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কার্যক্রম অপ্রতুল। উপরন্তু প্রশ্নবিদ্ধ শিক্ষক নিয়োগের কুপ্রভাব দৃৃশ্যমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উৎপাদিত গবেষণার পরিমাণ ও মানের ক্ষেত্রে। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের পরীক্ষা নেয়া এবং খাতা দেখার মতো কাজের জন্য বাড়তি সময় দেয়ার কারণেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা মৌলিক গবেষণায় অংশগ্রহণের জন্য পর্যাপ্ত সময় বের করতে পারেন না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এক সময় অনেক বিদেশী ছাত্রছাত্রী পড়তে এলেও আমার জানা মতে এই মুহূর্তে একজনও বিদেশী শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত নাই।
মঈন খান বলেন, একটি জাতিকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য সে জাতির শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়াই যথেষ্ট। আজ যদি কেউ বলে, অশিক্ষা, কুশিক্ষা ও নকল দিয়ে সরকার এই কাজটিই এ দেশে করছে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে কি?
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement