২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে জটিলতা বিপাকে অনেক নিবন্ধনধারী

-

বেসরকারি অনেক স্কুল-কলেজে শিক্ষক নিয়োগে জটিলতা দেখা দিয়েছে ২০১৮ নীতিমালার কারণে। বিপাকে পড়েছেন নিয়োগের জন্য অনেক মনোনীত শিক্ষক প্রার্থী। নীতিমালাসংক্রান্ত জটিলতা সুরাহার জন্য অনেক শিক্ষক প্রার্থী বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ এনটিআরসিএর কাছে গিয়েও কোনো সুরাহা না পাওয়ায় অনেকে প্রস্তুতি নিচ্ছেন আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার।
নি¤œ মাধ্যমিক থেকে শুরু করে ডিগ্রি পর্যায় পর্যন্ত বেসরকারি স্কুল ও কলেজের জন্য সর্বশেষ জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা জারি করা হয় ২০১৮ সালের জুন মাসে। এ নীতিমালা জারির পর থেকে এখন পর্যন্ত এনটিআরসিএ কর্তৃক কোনো শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়নি। এ অবস্থায় ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর সারা দেশের বেসরকারি স্কুল কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩৯ হাজার ৫৩৫টি শূন্য পদের বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করে নিবন্ধনধারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে। নিবন্ধনধারী যে শিক্ষকদের জন্য এসব শূন্যপদে বাছাই করা হয়েছে তারা সবাই ২০১৮ নীতিমালা জারির আগের নীতিমালার শর্ত অনুযায়ী এনটিআরসিএ কর্তৃক বিভিন্ন সময় গ্রহণ করা নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন এবং উত্তীর্ণ হয়েছেন। কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে কার্যকর করা হয়েছে ২০১৮ সালে জারি করা নীতিমালা। এক নীতিমালার অধীনে পরীক্ষা গ্রহণ করে তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে পরবর্তীতে জারি হওয়া আরেক নীতিমালা কার্যকর করায় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের জটিলতা দেখা দিয়েছে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। কারণ আগে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব শর্ত ছিল তার অনেক ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হয়েছে ২০১৮ এর নীতিমালায়। ফলে ২০১৮ সালের নীতিমালা জারির আগে যেসব শিক্ষক বিভিন্ন স্কুল-কলেজে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য যোগ্য ছিলেন তাদের অনেকেই অযোগ্য হয়ে পড়েছেন ২০১৮ নীতিমালা অনুযায়ী।
নিয়োগের ক্ষেত্রে এনটিআরসিএ কর্তৃক ২০১৮ সালের নীতিমালা কার্যকরের আদেশ দেয়ায় অনেক নিবন্ধনধারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য আবেদনেরই যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী এক শিক্ষক প্রার্থী আর্তি প্রকাশ করে বলেন, আগের নীতিমালার শর্ত অনুযায়ী পরীক্ষা গ্রহণ করে পরের নীতিমালা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এ কেমন অবিচার আমাদের প্রতি? আমরা কী অপরাধ করেছি? নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও বছরের পর বছর অপেক্ষা করেছি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য। কিন্তু অনেক দিন পর যখন নিয়োগের সুযোগ এলো তখন আমাদের আটকে দেয়া হলো নতুন শর্ত দিয়ে। অথচ আমাদের নিয়োগের জন্য বাছাই করা হয়েছে। আত্মীয়স্বজন সবাই জেনেছে আমার চাকরি হয়েছে। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য গেলে তারা জানিয়েছে নিয়োগ দেয়া যাবে না। কারণ আমি ২০১৮ এর নীতিমালার শর্ত অনুযায়ী অযোগ্য হয়ে গেছি। এখন এ অবস্থায় পানিতে ঝাঁপ দিয়ে মরা ছাড়া আর কোনো গতি দেখছি না।
বেসরকারি স্কুল-কলেজে শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে এনটিআরসিএ ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত শূন্য পদের তালিকা সংগ্রহ করে সারা দেশের স্কুল- কলেজ থেকে। মোট ৩৯ হাজার ৫৩৫টি শূন্য পদের তালিকা পায় তারা। এরপর ৩০ ডিসেম্বর এনটিআরসিএ কর্তৃক গৃহীত প্রথম থেকে ১৪তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে একটি সম্মিলিত জাতীয় মেধা তালিকা প্রকাশ করে যাতে কয়েক লাখ নিবন্ধনধারীর নাম স্থান পায়। পরবর্তীতে ১৮ ডিসেম্বর এনটিআরসিএ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে শূন্য পদের বিপরীতে আবেদনের জন্য জাতীয় মেধা তালিকায় স্থান পাওয়াদের মধ্য থেকে। আবেদন শেষে এনটিআরসিএ ৩৯ হাজারের অধিক নিবন্ধনধারীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য মনোনীত করে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে।
ভুক্তভোগী অনেক শিক্ষক অভিযোগ করেছেন তারা এনটিআরসিএর ভুল সিদ্ধান্ত এবং অবহেলার শিকার। এর কারণ এনটিআরসি ১৮ ডিসেম্বর জারি করা গণবিজ্ঞপ্তিতে বলেছে ২০১৮ সালের নীতিমালা অনুযায়ী আবেদন করতে হবে। কিন্তু তার আগে তারা যে জাতীয় মেধা তালিকা প্রকাশ করেছে সেখানে প্রথম থেকে সর্বশেষ ১৪তম নিবন্ধনধারীদের মধ্য থেকে নাম বাছাই করা হয়েছে। ২০১৮ সালের নীতিমালা অনুযায়ী ১৩তম নিবন্ধন পরীক্ষা বা তার আগের অনেক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অনেক নিবন্ধনধারীই আবেদনের যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। তাই ২০১৮ সালের নীতিমালা অনুযায়ী যারা নিয়োগের অযোগ্য তাদের নাম মেধা তালিকায় কেন রাখল।
ভুক্তভোগীরা জানান, আমরা তো মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছি। পরে এনটিআরসিও আমাদের নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে। একদিকে তারা নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে আরেক দিকে পরে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠানের কাছে বলছে আমাদের যেন নিয়োগ দেয়া না হয় ২০১৮ নীতিমালার শর্ত পূরণ না করলে। এ কেমন ভূমিকা পালন করছে এনটিআরসিএ।
ভুক্তভোগীরা জানান, যেহেতু নিয়োগের ক্ষেত্রে ২০১৮ নীতিমালা কার্যকর হবে তাই এনটিআরসিএ জাতীয় মেধা তালিকা এবং নিয়োগের জন্য সুপারিশকৃতদের বাছাই করার ক্ষেত্রে সফটওয়ার পরিবর্তন করার দরকার ছিল। কিন্তু তা তারা করেনি।
মহিউদ্দিন ফারুক নামে একজন ভুক্তভোগী জানান, আমাকে উত্তরখানের একটি কলেজে কম্পিউটার অপারেশনের জন্য প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু নিয়োগের জন্য গেলে কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাকে জানিয়েছে, আমি ২০১৮ নীতিমালা অনুযায়ী অযোগ্য। তা ছাড়া আমাকে এমপিও পদের জন্য নিয়োগের সুপারিশ করা হলেও কলেজ থেকে বলা হয়েছে নিয়োগ দিলেও তারা বেতন-ভাতা কোনো কিছুই কলেজ থেকে দেবে না যতদিন আমার পদ এমপিওভুক্ত না হয়।
নাম প্রকাশের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, আমিও কলেজে কম্পিউটার অপারেশন প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশকৃত। আমি যখন স্কুলে একই বিষয়ে নিয়োগের জন্য আবেদন করি তখন ইন্টারনেটে ফরম জমা দেয়ার সময় শেষপর্যায়ে আমার কাছে জানতে চাওয়া হয় আমি তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স করেছি কি না। এর ফলে আমি স্কুলে আবেদন করতে পারিনি। কিন্তু কলেজে আবেদনের সময় এ ধরনের কোনো কিছু আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়নি। তাই স্বাভাবিকভাকেই আমি ধরে নিয়েছি আমি আবেদনের যোগ্য। তা ছাড়া আমার আবেদনের যাবতীয় তথ্য এনটিআরসিএ সরবরাহ করেছে এবং আমাকে তারাই নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে। কিন্তু সুপারিশ করার পর বলছে আমার ক্ষেত্রে ২০১৮ নীতিমালা কার্যকর করা হয়েছে এবং আমি বাদ পড়েছি।
মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, আমার জানা মতে ২০১৮ সালের নীতিমালা এখন পর্যন্ত সর্বত্র বাস্তবায়ন করা যায়নি। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে এ নীতিমালা পুরোপুরি চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা চাই আমাদের এ নীতিমালার বাইরে রাখা হোক। কারণ আমরা এ নীতিমালা জারির আগে পরীক্ষায় পাস করেছি। এ নীতিমালা জারির পর এখন পর্যন্ত আর কোনো পরীক্ষায় নেয়নি এনটিআরসিএ।

 


আরো সংবাদ



premium cement
রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছাড়াল যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভিসা সহজ করার আহ্বান প্রবাসী প্রতিমন্ত্রীর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে অংশীদার হওয়া উচিত : শি জিনপিং ওকাব সভাপতি নজরুল ইসলাম, সম্পাদক জুলহাস আলম পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে চুয়েট ১১ মে পর্যন্ত বন্ধ, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত নরসিংদীতে হিট স্ট্রোকে শিশুর মৃত্যু হিলিতে ভটভটি-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ২ ‘গাজার ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করতে ১৪ বছর লাগতে পারে’ সখীপুরে ছাগল চুরির মামলায় মা-ছেলে কারাগারে ‘অন্যায়ের সাথে নয়া দিগন্তের সাংবাদিকরা কখনোই আপোষ করেন না’

সকল