০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


তাপদাহে দেশে লবণের উৎপাদন বেড়েছে

দামে নাখোস চাষিরা
উপকূলে লবণ উৎপাদনে ব্যস্ত চাষিরা হ এসএম রহমান -


সারা দেশে চলছে তীব্র তাপদাহ। এতে জনজীবন অতিষ্ঠ হলেও দেশের উপকূলে বেড়েছে লবণের উৎপাদন। এখন প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩৯ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হচ্ছে। ২৫ এপ্রিল একদিনে ৩৮ হাজার ৩৪০ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। এ নিয়ে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদন ২১ লাখ ১৮ হাজার ৭৬২ মেট্রিক টন ছাড়িয়েছে। গত মৌসুমে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত লবণ উৎপাদন হয়েছিল ১৮ লাখ ৩৯ হাজার ৩ মেট্রিক টন।

এদিকে উপকূলে লবণ উৎপাদন বাড়লেও চাষিরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কিছু মজুদদার ও মাঠপর্যায়ে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারণে। এ কারণে তারা এখন প্রতি মণ লবণ মাত্র ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ প্রতিমণ লবণ উৎপাদনে গড়ে ৩৩০ থেকে ৩৪০ ও ৩৫০ টাকার উপরে উৎপাদন খরচ পড়ছে। বাঁশখালী সনুয়ার লবণ চাষি মো: বেলাল ও আমির হোসেন বলেন, প্রতি কানি জমিতে পলিথিন পানি, জমি তৈরি ও জমির মূল্য এবং শ্রমিক খরচসহ এক লাখ টাকা থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা খরচ হয় হচ্ছে চলতি মৌসুমে। অন্য দিকে প্রতি কানি জমিতে লবণ উৎপাদন ৩০০ মেট্রিক টনের মতো।
তারা জানান, বর্তমানে লবণ বিক্রি করে তারা লোকসান গুনছেন। চলতি মৌসুমে (২৩-২৪) লবণ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ লাখ ২৮ হাজার মোট্রিক টন।

বিসিক লবণ প্রকল্পের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) জাফর ইকবাল ভূইয়া গতকাল বিকেলে নয়া দিগন্তকে জানান, বর্তমানের তাপদাহ বা তাপমাত্রা বাড়ায় লবণ উৎপাদন বেড়েছে। উৎপাদনের এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
এ দিকে গতকাল মাঠে উৎপাদিত অপরিশোধিত প্রতি মণ লবণ পাইকারি বিক্রি হয়েছে গড়ে ৩২০ টাকা ধোলাই খরচ ছাড়া। তবে একই সময়ে গত মৌসুমে প্রতি মণ লবণ পাইকারি বিক্রি হয়েছিল ধোলাই খরচ ছাড়া ৪০০ টাকার উপরে। সে কারণে উপকূলের হাজার হাজার চাষি উৎপাদিত লবণের মূল্য নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। বাঁশখালী সনুয়ার লবণ চাষি মো: বেলাল বলেন, মাঠে লবণের দাম বেশি কমে যাচ্ছে সে কারণে তারা খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। সরকারিভাবে মাঠে উৎপাদিত লবণের মূল্য বেঁধে দেয়া হলে চাষিরা লবণ উৎপাদন নিয়ে টেনশনে থাকত না। তিনি উৎপাদিত লবণের মূল্য সরকারিভাবে নির্ধারণ করার দাবি করেছেন।

মাঠে উৎপাদিত লবণের পাইকারি মূল্য হ্রাস পাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিসিক লবণ প্রকল্পের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া প্রতি বছরই যখন লবণ উৎপাদন বেশি হয় তখন বাজারে পাইকারি মূল্য কিছুটা কমে আসে। তবে দীর্ঘদিন ধরে উপকূলের মজুদদার ও পাইকারি লবণ ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে মাঠপর্যায়ে চাষিরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। লবণ মজুদদার প্রসঙ্গে চানতে চাইলে তিনি জানান, গত মৌসুমে (২০২২) মুজুদারদের সংখ্যা ছিল ১০৬৬ জন। এবার মজুদদারদের সংখ্যা আরো বেশি হয়েছে। তিনি জানান, চট্টগ্রাম কক্সবাজারের চাষিদের প্রতি মণ অপরিশোধিত লবণ উৎপাদনে গড়ে ৩০০ টাকার উপরে খরচ পড়ছে।

চলতি মৌসুমে সাগর উপকূলে চাষিরা আগাম প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামলেও ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী ঘন কুয়াশা ও মাঝেমধ্যে বৃষ্টিপাত হওয়াসহ বৈরী আবহাওয়ার কারণে দেশের উপকূলে লবণ উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছিল। তবে সেই অনিশ্চয়তা কেটে এখন জোরে চলছে লবণ উৎপাদন।
জানা গেছে, বিগত দুই বছর ধরে মাঠে পাইকারি লবণের মূল্য বেশি হওয়ার পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কারণে চলতি লবণ উৎপাদন মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই মধ্য অক্টোবর থেকে নতুন লবণ উৎপাদনে মাঠে নামে চাষিরা। মাঠে পাইকারি দাম বেশি পাওয়ায় গত ২০২২-২০২৩ মৌসুমে লবণ চাষের পরিধি, চাষি, মৌজা এবং ঘোনার সংখ্যা বেড়েছে।
সে কারণে গত মৌসুমে লবণ চাষের মাঠের পরিমাণ বেড়ে ৬৬ হাজার ২৯১ একরে দাঁড়িয়েছিল। অপর দিকে লবণ চাষির সংখ্যা বেড়ে হয়েছিল ৩৯ হাজার ৪৬৭ জন। অন্যদিকে দুটি নতুন মৌজাসহ গত মৌসুমে মৌজার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৭ এবং লবণ চাষে ঘোনা আগের ৮৮৮ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৫৯টি।

জানা গেছে, এক সময়ে দেশে প্রতি বছর সোডিয়াম সালফেটের আড়ালে লাখ লাখ মেট্রিক টন লবণ আমাদানি করত অসাধু ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া মিথ্যা ডিক্লারেশনের মাধ্যমেও লাখ লাখ মেট্রিক টন লবণ আমদানি করা হতো। সে কারণে দেশে লবণ উৎপাদন করে চাষিরা লাভের মুখ দেখত না। এ নিয়ে দৈনিক নয়া দিগন্তে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ হওয়ার প্রেক্ষিতে সরকার লবণ শিল্প ও চাষিদের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে বিদেশ থেকে আমদানির ওপরে শুল্কহার ৩২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮৯ শতাংশ করেছে। এ কারণে বিদেশ থেকে আনা লবণের দাম বেশি পড়ায় আমদানিকারকরা অতিরিক্ত লবণ আমদানিতে নিরুৎসাহিত হওয়ায় দেশে লবণ শিল্পে প্রাণ ফিরে আসে। বিদেশ থেকে লবণ আমদানির শুল্ককর বাড়ানোয় লবণের চেয়ে দেশে উৎপাদিত লবণের কদর বেড়েছে। জানা গেছে, প্রতি বছর ১৫ নভেম্বর থেকে পরের বছরের ১৫ মে পর্যন্ত লবণ উৎপাদনের সরকার নির্ধারিত মৌসুম ধরা হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement