০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সাংবাদিক ইউনিয়ন ময়মনসিংহের বার্ষিক সভায় নেতারা

বর্তমান সরকারের আমলে সাগর-রুনিসহ ৬০ সাংবাদিক খুন হয়েছেন

-


সাংবাদিক ইউনিয়ন ময়মনসিংহের সম্মেলনে সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, মুক্ত পরিবেশ ছাড়া মুক্ত সাংবাদিকতা করা যায় না। দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নেই বলেই আজ সাংবাদিকরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এ সরকারের আমলে সাগর-রুনিসহ ৬০ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, সাংবাদিক হত্যার কোনো বিচার হচ্ছে না। ১০৮ বার সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন পিছিয়েছে। চার শতাধিক গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশ ৪২ ধাপ পিছিয়েছে। সম্পাদক মাহফুজ আনাম-মতিউর রহমান থেকে কেউ রেহাই পাচ্ছে না সরকারি নিপীড়ন থেকে। আজ যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে শুধু সাংবাদিক নয় গণতন্ত্রকামী সব মানুষকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিকল্প নেই।

গতকাল ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সাংবাদিক ইউনিয়ন ময়মনসিংহের সভাপতি আইয়ুব আলীর সভাপতিত্বে জেইউএমের বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী। আলোচনা করেন, বিএফইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক এরফানুল হক নাহিদ, দফতর সম্পাদক আবু বকর, ম হামিদুল হক মানিক, আমান উল্লাহ আকন্দ জাহাঙ্গীর। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জেইউএমের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। প্রধান অতিথির বক্তব্যে রুহুল আমিন গাজী বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যম ভয়াবহ সঙ্কটকাল পার করছে। গণমাধ্যমের টুঁটি এমনভাবে চেপে ধরা হয়েছে যে এর স্বাধীনতা এখন পুরোপুরি বিপন্ন। দুঃশাসন পাকাপোক্ত করতে গণমাধ্যমকে হুমকি, ভয় প্রদর্শন, সাংবাদিক হত্যা, গ্রেফতার, নির্যাতন চলছেই। কথায় কথায় গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। সাংবাদিকদের জেলে ঢুকানো হচ্ছে। নানান কালা কানুন তৈরি করে গণমাধ্যমকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলা হয়েছে। গণমাধ্যম শিল্পে একটা ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করায় গণমাধ্যম এখন সত্য তুলে ধরতে পারছে না। এসব কারণে গণমাধ্যম দিন দিন জনগনের আস্থা হারিয়ে ফেলছে।

বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম গণমাধ্যম হতে পারছে না। সত্য তুলে ধরতে না পারায় সংবাদমাধ্যম দিন দিন মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলছে। যা সংবাদমাধ্যমকে অস্তিত্বের সঙ্কটে ধাবিত করছে। গণমাধ্যম সব সময় জনগণের পক্ষে থাকার কথা। কিন্তু কিভাবে জানি না, জনগণের সাথে গণমাধ্যমের একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। কালে কালে সে দূরত্বটা বাড়ছেই শুধু। আমরা জানি না আমাদের মিডিয়া মালিকরা তা অনুধাবন করছেন কিনা! আমাদের সবচেয়ে বড় সঙ্কট হচ্ছে গণতন্ত্রের সঙ্কট। গণতন্ত্র না থাকলে গণমাধ্যমের যে স্বাধীনতা থাকে না তা আমরা হাঁড়ে হাঁড়ে টের পাচ্ছি।

ফ্যাসিবাদী শাসনের কারণে সংবাদমাধ্যম গণমুখী সস্কৃতি হারিয়ে ফেলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য প্রধান বাধা হচ্ছে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি।
সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে, বেশির ভাগ মালিক হয় রাজনীতিক না হয় ব্যবসায়ী। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, মিডিয়াকে ব্যবসায়িকভাবে টিকিয়ে রাখার কৌশলের অংশ হিসেবে বাকস্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক অধিকার ও নাগরিক তথ্য অধিকার হরণকারী কালাকানুন মেনে চলার পথ বেছে নিয়েছেন এসব মালিকরা। মিডিয়াকে ব্যবসায়ীরা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। এখানে সরকারি দলের নেতা, এমপি-মন্ত্রী, প্রশাসনের বড় কর্মকর্তা কিংবা সচিবদের অপব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি নিয়ে, প্রকল্প বাস্তবায়ন দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে, রাষ্ট্রীয় খরচের মডেল নিয়ে মিডিয়ায় আলোচনা করা যায় না, প্রশ্ন তোলা যায় না। মালিকদের লিপ্সার কারণে সেলফ সেন্সরশিপের সংস্কৃতিতে মিডিয়াকর্মীরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এর ফলে সরকারের বিধিনিষেধের চেয়েও মালিকদের দলদাস প্রবণতা গণমাধ্যমের চরিত্র নষ্ট করে ফেলছে। সম্পাদকরা প্রধানমন্ত্রীর প্রেস কনফারেন্সে গিয়ে প্রশ্ন না করে তৈল মর্দনে ব্যস্ত থাকেন। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীর প্রেস কনফারেন্স এখন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি।

 


আরো সংবাদ



premium cement