০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর মূলধন কমলো ১২ হাজার কোটি টাকা

পুঁজিবাজারে বন্ধ ওটিসি মার্কেট
-

টানা ছয় সপ্তাহ ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর গেল সপ্তাহ কিছুটা পতনের মধ্য দিয়ে পার করেছে দেশের শেয়ারবাজার। এতে এক সপ্তাহে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা কমে গেছে। এর আগে টানা ছয় সপ্তাহের উত্থানে ডিএসইর বাজার মূলধন ৫০ হাজার কোটি টাকার ওপরে বাড়ে। গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৭৪ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা; যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা; অর্থাৎ গেল সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১১ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা।
আগের ছয় সপ্তাহে বাজার মূলধন বাড়ে ৫১ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা। এ হিসাবে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা মূলধন বৃদ্ধির পর প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা কমলো। এ দিকে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ৮৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৮২টির। আর ১২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৩০ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট বা দশমিক ৪২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ২৭৭ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি গেল সপ্তাহে কমেছে ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচক।
গত সপ্তাহে সূচকটি কমেছে ১৫ দশমিক ২১ পয়েন্ট বা দশমিক ৯৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৮৩ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
অন্য দিকে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের সপ্তাহেও বেড়েছে। সপ্তাহজুড়ে এ সূচকটি বেড়েছে ২৭ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বা ১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১৫০ দশমিক ৩০ পয়েন্ট বা ৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।
গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ২২৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় দুই হাজার ৭৭৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা; অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৫৫৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা বা ১৯ দশমিক ৯১ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১১ হাজার ১২২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ১৩ হাজার ৮৮৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে দুই হাজার ৭৬৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বা ১৯ দশমিক ৯১ শতাংশ।
এ সময় ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫৮৯ কোটি ৮৫ লাখ আট হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৩৬ কোটি ২৭ লাখ ৫১ হাজার টাকা। ২০৩ কোটি ৮৩ লাখ ২৬ হাজার টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস।
এ ছাড়াও লেনদেনের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছেÑ সাইফ পাওয়ার টেক, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স, আইপিডিসি ফাইন্যান্স ও ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
ওটিসি মার্কেট বন্ধ : বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের ‘ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেটের (ওটিসি)’ কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ওটিসি মার্কেট চালু হয়েছিল। বাংলাদেশের মূল পুঁজিবাজার থেকে তালিকাচ্যুত কোম্পানির এবং অতালিকাভুক্ত শেয়ার লেনদেন করার জন্য ওটিসি মার্কেট চালু হয়।
বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৬১টি ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে ৪৭টি কোম্পানি ওটিসিতে তালিকাভুক্ত আছে। কোনো কোনো কোম্পানি দুই পুঁজিবাজারেই তালিকাভুক্ত আছে। এর মধ্যে ২৩টি কোম্পানিকে স্মল ক্যাপিটাল প্লাটফর্মে পাঠানো হয়েছে। ১৮টি কোম্পানিকে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) পাঠানো হয়েছে। বাকি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজার থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরিকল্পনায় রাখা হয়েছে।
যেসব কোম্পানি ওটিসি মার্কেট থেকে স্মল ক্যাপিটাল প্লাটফর্মে ও অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) পাঠানো হবে তাদেরকে বলা হয়েছে এক মাসের মধ্যে তাদের শেয়ার ডিমেট করে ফেলতে। ২৯টি কোম্পানিকে পুঁজিবাজার থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরিকল্পনায় রাখা হয়েছে সেগুলোর বিষয়ে বিএসইসির এক্সিট প্ল্যানের নোটিফিকেশন অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে; অর্থাৎ এসব কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবে।
ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বলেন, ওটিসি বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্তটি একটি সঠিক সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশে যেভাবে ওটিসি মার্কেট ব্যবহার হতো, সেটি ভুল। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ওটিসি মার্কেট ব্যবহার হয় যেসব কোম্পানির শেয়ার তালিকাভুক্ত নয়, সেগুলো লেনদেন করতে। কিন্তু বাংলোদেশে ওটিসি মার্কেট ব্যবহার হত একটি ডাম্পিং গ্রাউন্ড হিসেবে।


আরো সংবাদ



premium cement