২৪ মে ২০২৪, ১০ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৫ জিলকদ ১৪৪৫
`

ফারাক্কার প্রভাবে ভাঙছে নবগঙ্গা-মধুমতি

ফারাক্কার প্রভাবে ভাঙছে নবগঙ্গা-মধুমতি - ছবি : সংগৃহীত

ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেয়ায় নড়াইলের মধুমতি-নবগঙ্গা নদীতে মাত্রাতিরিক্ত পানি বেড়ে গেছে। নিচু এলাকা যেমন প্লাবিত হচ্ছে, তেমনি মধুমতি-নবগঙ্গার বিভিন্ন এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভাঙনের কবলে পড়ে কয়েক বছরে পুরোনো মধুমতি নদীর ঘাঘা, মল্লিকপুর, শিয়েরবর, মাকড়াইল নবগঙ্গা নদীর করগাতি, ছোট কালিয়া, শুক্তগ্রামসহ ১৫টি পয়েন্টে হাজারও বসতঘর জমিসহ নানা স্থাপনা নদীগর্ভে চলে গেছে। ফারাক্কার প্রভাবে নবগঙ্গা নদীর শুক্তগ্রাম-হাচলা আর মধুমতি নদীর তেতুলিয়া এলাকাসহ কয়েকটি এলাকা নতুন করে ভাঙতে শুরু করেছে।

গত ৪-৫ দিনে শুক্রগ্রাম ও বাজার এলাকায় নবগঙ্গা নদীর পানি লোকালয়ে ঢুকতে শুরু করেছে। সেই সাথে হঠাৎ ভাঙনে শতাধিক বাড়িঘর ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন অব্যাহত থাকলেও ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ‘উদাসীনতায়’ গৃহহীন হয়েছে কালিয়া উপজেলার কয়েকশ বাসিন্দা। এখনও ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন এলাকার কয়েক হাজার মানুষ।

সূত্র জানায়, গত বছরে নবগঙ্গার তীব্র ভাঙনে বিলীন হয়েছে শুক্রগ্রাম এলাকার পালপাড়া, আশ্রয়ন প্রকল্পসহ কয়েক হাজার একর জমি। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে প্রায় শতাধিক বাড়ি-ঘর গাছপালাসহ ফসলি জমি। ভাঙন আতঙ্কে আশপাশের এলাকার মানুষ ঘরবাড়ি, গাছ-পালা সরাতে শুরু করেছে।

শুক্রগ্রামের প্রবীণ ইলিয়াস আলী বলেন, ‘গত ৩৫ বছরে নবগঙ্গা নদীতে এমন পানি দেখিনি। আমাদের বাড়িটি এক রাতেই নদীর মধ্যে চলে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এখন যে বালির বস্তা ফেলছে তা নদীতে যাচ্ছে, ভাঙনে কোনো কাজে আসছে না।’

স্থানীয়দের অভিযোগ, চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই নবগঙ্গার বিভিন্ন অংশে ভাঙনের আশঙ্কা থাকলেও স্থানীয়দের কোনো আবেদনে সাড়া দেয়নি জনপ্রতিনিধি কিম্বা পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ভাঙনের মধ্যে নদী থেকে বালি তুলে তা ভরে জিও ব্যাগ ফেলায় ব্যস্ত থাকলেও তা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। ভাঙনের কবলে পড়ে বাস্তুহারা মানুষের শেষ সম্বল বাড়ি সরানোর কাজে ব্যস্ত থাকলেও প্রশাসনের লোকেরা তাদের খবরও নিচ্ছেন না, ঠিকমতো খাবারও জুটছে না। নবগঙ্গার ভাঙনে গ্রামটির বহু পরিবার সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। ভাঙনের শিকার অসহায় পরিবারগুলো বাজারে, নদীর পাড়ে আকাশের নিচে, রাস্তার পাশে ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে ভাঙা বাড়ির চাল, আসবাবপত্র নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। মাটির ভিটার ওপরেই আশ্রয় নিয়েছে কয়েকটি পরিবার।

ক্ষতিগ্রস্ত জুলমত শেখ বলেন, ‘গত ৫ দিন ধরে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি, গ্রামের লোকেরা কিছু খাবার দিলে তাই খাচ্ছি, আমাদের আর যাবার কোনো জায়গা নেই। কোথায় যাব, কী খাব বুঝে উঠতে পারছি না।’

চরপাড়ার ষাটোর্ধ্ব তোবারেক শেখ বলেন, তিনবার নদী ভাঙনে বাড়ি-ঘরসহ ৩৫ একর ফসলি জমি নদীতে গেছে। সর্বশেষ ২ একর ৫৬ শতক জমি ছিল বসতবাড়ি। ভাঙতে ভাঙতে এখন মাত্র ১৫ শতক জমি আছে, এখন আমরা নিঃস্ব।

গত বর্ষা মৌসুম থেকে তীব্র ভাঙনে নবগঙ্গা নদী গ্রাস করেছে শুক্রগ্রামের প্রায় দেড় শ বসতবাড়ি। এবার মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে প্রায় তিনশ বছরের পুরনো শুক্রগ্রাম বাজার। যেকোনো মুহূর্তে নদীপাড়ের পাকারাস্তাটি ভেঙে গেলে সরকারি স্থাপনাসহ মসজিদ, মন্দির ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষে কথা বলেন বাবরা-হাচলা ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন পিকুল। তিনি বলেন, এটা একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এবারের হঠাৎ ভাঙনে পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি পদক্ষেপ নিয়েছে, আশা করি এই ভাঙন ঠেকানো যাবে।

বর্ষা মৌসুমের শুরুতে কাজ না করে ভাঙনের মধ্যে ফেলা জিও ব্যাগ কোনো কাজে আসছে এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, স্থানীয় ঠিকাদাররা কাজ করতে আগ্রহী না হওয়ায় সময়মতো কাজ শুরু হয়নি।

তবে ঠিকাদারদের অভিযোগ, জরুরি (ইমার্জেন্সি ওয়ার্ক) কাজের ক্ষেত্রে ও পাউবো কমকর্তারা ১০ ভাগ পিসি (ঘুস) নেয় বলেই ঠিকাদাররা কাজ করতে চান না। আর তাই বাধ্য হয়েই নির্বাহী প্রকৌশলী নিজেই চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নেন।

এসব বিষয়ে জানতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জুলফিকার আলীকে কয়েকবার ফোন করে তাকে পাওয়া যায়নি। সূত্র: ইউএনবি


আরো সংবাদ



premium cement
রাফায় হামলা বন্ধে আইসিজের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা জৈন্তাপুরে দু’পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ৭ জন আহত আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষা নতুন নিয়মে হবে : শিক্ষামন্ত্রী রাফায় যুদ্ধ বন্ধের নির্দেশ আইসিজের : যা বললেন ইসরাইল সবার শেষে বিশ্বকাপ দল ঘোষণা পাকিস্তানের ‘খুশী যতক্ষণ থানায় ছিল নিজের সন্তানের মতো যত্ন করেছি’ আদালতের কর্তব্য হচ্ছে সকল বিচার প্রার্থীর ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা : প্রধান বিচারপতি আইসিজের রায়কে স্বাগত জানালো হামাস এবার জাতীয় নির্বাচনে আমাদের লোকেরাও ভোট দিতে যায়নি : বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী নেতাকর্মীদের খোঁজ-খবর নিতে বগুড়ায় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মুন্না দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ছুটে চলেছে শিশু! ফেসবুকে ভাইরাল

সকল