২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


বরগুনার বেতাগীর বাড়িতে হাজারো মানুষ

নতুন ঘরের স্বপ্ন পূরণ হলো না হাদিসের

-

ইউক্রেনে রকেট হামলায় নিহত বাংলাদেশী জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান আরিফের মৃত্যুর খবরে তার বরগুনার বেতাগীর গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শোকার্ত পরিবারকে দেখতে হাজারো মানুষ ভিড় জমিয়েছেন। হাদিসের লাশ পেতে সরকারের কাছে আকুতি জানিয়েছে তার পরিবারসহ জেলাবাসী।
হাদিসুর রহমান আরিফের বয়স হয়েছিল ২৯ বছর। তার গ্রামের বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নে। কদমতলা বাজারসংলগ্ন চেয়ারম্যান বাড়ির বাসিন্দা আবদুর রাজ্জাক (অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক) ও আমেনা বেগম দম্পতির বড় ছেলে হাদিসুর। সবশেষ বাড়িতে এসেছিলেন মাস ছয়েক আগে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা-বাবা।
গত বুধবার স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে এ রকেট হামলা হয়। নিহত হাদিসুর জাহাজের সামনে বাইরে অবস্থান করায় হামলায় তিনি নিহত হন। হামলার খবর গণমাধ্যমকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে নিশ্চিত করেন জাহাজটিতে থাকা একজন সহকর্মী নাবিক।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ পাওয়া হাদিস চট্টগ্রাম মেরিন অ্যাকাডেমির ৪৭তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। লেখাপড়া শেষ করে তিনি এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি নেন।
সরেজমিন তার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ঘটনা শুনে গ্রামের মানুষে পুরো বাড়ি ভরে গেছে। তারা এসে বাকরুদ্ধ বাবা, মাসহ পরিবারকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। ইউক্রেনে জাহাজটি আটকা পরার পর থেকেই নানা শঙ্কার মধ্যে ছিলেন পরিবারটি। তাদের সেই শঙ্কাই সত্যি হলো। এখন সন্তানের লাশ ফেরা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন তারা। এমভি বাংলার সমৃদ্ধি এ জাহাজটিতে পাঁচ বছর ধরে চাকরি করছিলেন তিনি।
নিহতের ছোট ভাই তারেক বলেন, আমরা জাহাজে থাকা ভাইয়ের সহকর্মীদের কাছেই মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছি। এরপর থেকেই আমার বাবা বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছেন আর মা অজ্ঞান হয়ে গেছেন। তিনি আরো বলেন, গত বুধবার সকালেও ভাই আমাদের সাথে কথা বলেছেন। সেই সময়ে ফোনে ভাই বলেন, আমাদের আর ভাঙা ঘরে থাকতে হবে না। বাড়িতে এসেই যেভাবে হোক নতুন ঘরের কাজ শুরু করব। স্বজনদের জানিয়েছিলেন, আটকে থাকা জাহাজ ছাড়া পেলে শিগগিরই বাড়ি ফিরবেন। ফোনালাপে ইউক্রেনে বোমা, গুলির শব্দ ও যুদ্ধের অবস্থা নিয়েও কথা হয়। ভীতিকর পরিস্থিতি নিয়ে আরিফ শঙ্কিত ছিলেন বলেও জানান তিনি। তারেক কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা একনজরের জন্য হলেও ভাইয়ের লাশটা শুধু দেখতে চাই।
বিয়ের জন্য স্বজনরা মেয়েও দেখে রেখেছিলেন। ঈদের পরেই বাবা-মায়ের পছন্দ অনুযায়ী বিয়ে করার কথা। মেজো ভাই তরিকুল ইসলাম আক্ষেপ করছেন ,‘পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম আমার ভাইয়া, সে আমাদের ছেড়ে চলে গেল। এখন আমরা কিভাবে পড়াশোনা করব? আরেক ছোট ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্স বলেন, ‘জাহাজে আঘাত হানার সময় বড় ভাই বাইরে এসে মুঠোফোনে আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। তবে হঠাৎ একটি গোলা এসে পড়ে জাহাজটিতে। বিকট শব্দের কারণে কিছুই শুনতে পাইনি।’ এরপর বুধবার রাতেই জানতে পারলাম ভাই হাদিসুর মারা গেছেন।’
এ বিষয়ে বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুহৃদ সালেহীন নয়া দিগন্তকে বলেন, জেলা প্রশাসন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতার মাধ্যমে নিহত হাদিসুর রহমান আরিফের লাশটি দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবে। তবে তার দেহটি অক্ষত আছে কি না তা এখনো জানা সম্ভব হয়নি, জানার পরে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
সিরামিকের কাঁচামাল ‘ক্লে’ পরিবহনের জন্য জাহাজটি তুরস্ক থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের জলসীমায় পৌঁছায়। তবে যুদ্ধাবস্থা এড়াতে জাহাজটিকে সেখানে পৌঁছানোর পরই পণ্যবোঝাই না করে দ্রুত ফেরত আসার জন্য নির্দেশনা দেন শিপিং করপোরেশনের কর্মকর্তারা। শেষ মুহূর্তে বন্দরের পাইলট না পাওয়ায় ইউক্রেনের জলসীমা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি এ জাহাজটি।


আরো সংবাদ



premium cement