১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫
`


আইসিসির সম্ভাব্য গ্রেফতারি পরোয়ানার চাপে নেতানিয়াহু

-

- বন্দিমুক্তি ও আগাম নির্বাচনের দাবিতে ইসরাইলজুড়ে বিক্ষোভ
- ইসরাইলবিরোধী সমাবেশ থেকে আটক মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করার অভিযোগে হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর এই গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে নেতানিয়াহু প্রচণ্ড চাপে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইসরাইলি বিশ্লেষক বেন কাসপিট। খবর : টাইমস অব ইসরাইল ও আনাদোলু এজেন্সি। এ দিকে হামাসের কাছে আটক দুই বন্দীর নতুন ভিডিও প্রকাশের পর সব বন্দীকে ফিরিয়ে আনার দাবিতে ইসরাইলে রাস্তায় বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার মানুষ। এ সময় তারা ইসরাইলে আগাম নির্বাচনেরও দাবি জানান। অন্য দিকে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জিল স্টেইনসহ কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ।
গতকাল রোববার হিব্রু ভাষার সংবাদমাধ্যম ওয়াল্লা নিউজকে ইসরাইলি বিশ্লেষক বেন কাসপিট জানিয়েছেন, নেতানিয়াহু এবং অন্যরা হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সম্ভাব্য গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে প্রচণ্ড চাপে রয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইসরাইলের অবস্থানের জন্য এটি খুবই খারাপ একটি বিষয় হবে। নেতানিয়াহু ও অন্যান্য ইসরাইলি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যেন আইসিসি পরোয়ানা জারি না করে সে জন্য কূটনৈতিক যুদ্ধে নেমেছে ইসরাইল। তাদের সাথে যোগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও।

বিশ্লেষক বেন কাসপিট আরো জানিয়েছেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা ঠেকাতে অব্যাহতভাবে টেলিফোনে কথা বলে যাচ্ছেন নেতানিয়াহু। তার মূল নজর এখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের ওপর। নেতানিয়াহুর বিশ্বাস বাইডেনের সহায়তা নিয়ে তিনি গ্রেফতারি পরোয়ানা থেকে রক্ষা পেতে পারেন। প্রভাবশালী ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজকে অপর এক বিশ্লেষক আমোস হারেল লিখেছেন, আইসিসির প্রধান প্রসিকিউটর করিম খান এই সপ্তাহে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন বলে ধারণা করছে ইসরাইলি সরকার। আর এ বিষয়টি মাথায় রেখে এখন তারা কাজ করছে।
জানা গেছে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ছাড়াও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োহাভ গ্যালান্ট এবং সেনাপ্রধান হেজরি হালেভির বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হতে পারে। হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য নয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল। কিন্তু সদস্য না হয়েও তারা এখন পরোয়ানা ঠেকাতে কাজ করছে। কারণ যদি পরোয়ানা জারি হয় তাহলে এই আদালতের সদস্য দেশগুলোতে গেলেই নেতানিয়াহুকে গ্রেফতার করা হবে। ২০২৩ সালের ১৭ মার্চ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল আইসিসি।
ইসরাইলজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। টানা প্রায় সাত মাস ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন সাড়ে ৩৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। ইসরাইলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাকেও লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। এত কিছুর পরও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হাতে আটক থাকা বেশির ভাগ বন্দীকেই উদ্ধার করতে পারেনি ইসরাইল। এর মধ্যেই আটক দুই বন্দীর ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে গাজায় আটক বন্দীদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে ইসরাইলে রাস্তায় বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার মানুষ।

এ সময় তারা ইসরাইলে আগাম নির্বাচনেরও দাবি জানান। গাজায় আটক বন্দীদের মুক্তির দাবিতে এবং আগাম নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে গত শনিবার হাজার হাজার মানুষ ইসরাইলজুড়ে বিক্ষোভ করেছে। ইসরাইলি সম্প্রচার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা ইসরাইলের কাপলান স্কোয়ারে জড়ো হন এবং গাজায় ফিলিস্তিনি উপদলের সাথে বন্দিবিনিময় চুক্তি এবং আগাম নির্বাচনের দাবি জানান। সম্প্রচার কর্তৃপক্ষের মতে, গাজায় আটক বন্দীদের পরিবারও এ দিনের বিক্ষোভে অংশ নেয় এবং বিক্ষোভকারীদের সামনে বক্তৃতা দেয়। ইসরাইলি সংবাদপত্র ইয়েদিওথ আহরোনোথ জানায়, বিক্ষোভের একপর্যায়ে কাপলান স্কোয়ারে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ ছাড়া আরো হাজার হাজার ইসরাইলি তেল আবিবের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে বিগিন স্ট্রিটেও জড়ো হয়েছিলেন। অনেক লোক পশ্চিম জেরুসালেমে ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগের বাড়ির কাছেও বিক্ষোভ করেছেন বলে ইয়েদিওথ আহরোনোথ জানিয়েছে। এ সময় তারা গাজায় আটক থাকা ব্যক্তিদের ফিরিয়ে আনার দাবির পাশাপাশি আগাম নির্বাচনের আহ্বানও জানান।
এ ছাড়া হাজার হাজার ইসরাইলি সিজারিয়ায় প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনের কাছে এবং হাইফায়ও হাজার হাজার ইসরায়েলি বিক্ষোভ করেছে। বার্তা সংস্থা আনাদোলু বলছে, হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসাম ব্রিগেডের প্রকাশিত একটি ভিডিওতে গাজায় আটক দুই বন্দীকে ইসরাইলি সরকারের কাছে তাদের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য বন্দিবিনিময় চুক্তি করার দাবি জানাতে দেখা যাওয়ার পর ইসরাইলে বিক্ষোভ আরো তীব্র হয়েছে।

ইসরাইলি সংবাদপত্র ইয়েদিওথ আহরোনোথ জানিয়েছে, ভিডিওটির প্রতিক্রিয়ায় বন্দীদের পরিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরাইলকে অবশ্যই রাফাহ (আক্রমণ) বা (হামাসের সাথে) চুক্তির মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে। এ ছাড়া এই পরিবারগুলো গাজায় আটক বন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য সরকারি সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, এমনকি যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে হলেও এই পথে হাঁটার দাবি জানিয়েছে তারা।
তেল আবিব বিশ্বাস করে, গাজায় এখনো ১৩৪ জন ইসরাইলি বন্দী আটক রয়েছে। অন্য দিকে ইসরাইল তার কারাগারগুলোতে প্রায় ৯ হাজার ফিলিস্তিনিকে আটকে রেখেছে। অবশ্য ইসরাইলি মিডিয়া ২৪০ থেকে ২৫৩ ইসরাইলি বন্দীর গাজায় আটক থাকার কথা বলে থাকে। যার মধ্যে তিনজনকে ইসরাইল মুক্ত করেছিল এবং ১০৫ জনকে হামাস গত বছরের নভেম্বরে বন্দিবিনিময় চুক্তির সময় মুক্তি দিয়েছিল। এ ছাড়া ইসরাইলি হামলার কারণে আরো ৭০ জন বন্দীর নিহত হওয়ার কথা বলে থাকে হামাস।
ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরাইলের আক্রমণের ফলে এখন পর্যন্ত সাড়ে ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরো ৭৭ হাজারের বেশি মানুষ। এ ছাড়া ইসরাইল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী আটক : সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জিল স্টেইন-সহ কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ। যুক্তরাষ্ট্রে এবং এর বাইরেও ইসরাইলের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসজুড়ে বিক্ষোভ হচ্ছে। যেখানে ইসরাইলকে গাজা যুদ্ধের অবসান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরাইলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ থেকে শত শত লোককে গ্রেফতার করছে পুলিশ। এসব বিক্ষোভ-সমাবেশ থেকে ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে ইসরাইলকে ধ্বংস করে ফেলারও আওয়াজ উঠছে।
স্টেইন হলেন ইহুদিবিরোধী ইসরাইলি কর্মী। ২০২৪ সালের নির্বাচনে গ্রিন পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী তিনি। সেন্ট লুইসে ফিলিস্তিনিপন্থী শিক্ষার্থীরা দাবি করছে যে, ইউনিভার্সিটি বোয়িং কোম্পানির সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহকারী থেকে ইসরাইলের কাছে অস্ত্র বিক্রির বিষয় বন্ধ হোক। বোয়িং সেন্ট লুই অঞ্চলের একটি প্রধান নিয়োগকারী।
সামগ্রিকভাবে গ্রিন পার্টির মতো স্টেইনও ইসরাইল বা বিডিএসের বিরুদ্ধে বয়কট, অপসারণ এবং নিষেধাজ্ঞা আন্দোলনকে সমর্থন করেন। তিনি ইসরাইলকে অগণতান্ত্রিক আমেরিকান মিত্র সৌদি আরব এবং মিসরের সাথে রাখেন। তার ওয়েবসাইটে, তিনি গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের পদক্ষেপকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement