২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পলিথিন নিষিদ্ধ হলেও বাধাহীন ব্যবহার

ভয়াবহ পরিবেশ দূষণেও সবাই নির্বিকার

-

পলিথিন বর্জ্য এখন বৈশ্বিক উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। নর্দমা খাল বিল ধ্বংস করে সাগরের দূষণ বাড়িয়ে দিয়েছে। জলভাগে শিকারি পাখিসহ অন্য প্রাণীর দেহে এই কৃত্রিম তন্তুর আশঙ্কাজনক উপস্থিতি দেখা গেছে। এতে বহু প্রাণী প্রাণও হারাচ্ছে। এভাবে এটি মানুষের খাদ্যচক্রে প্রবেশ করেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, মানবদেহে অচিরেই এটি দুরারোগ্য ব্যাধির কারণ হতে পারে। এ ছাড়াও এই বর্জ্য সরাসরি বড় ধরনের পরিবেশ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। আইন-কানুনের বালাই নেই এমন সব দেশে প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহারে রীতিমতো অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এমন অরাজক দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম দিকে।
২০০২ সালে পলিথিন ব্যবহার নিয়ে দেশে একটি আইন পাস হয়। সে অনুযায়ী, এর উৎপাদন ও বিপণন নিষিদ্ধ। এতে জেল জরিমানা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়। তবে এই আইনে এখন পর্যন্ত কেউ শাস্তি পেয়েছেন বলে আমাদের জানা নেই। খবর হচ্ছে, দীর্ঘ ২০ বছরে পলিথিন ব্যবহারের মাত্রা শতগুণ বেড়েছে। ঢাকা ও এর আশপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে কারখানা। সরকারের পক্ষ থেকে এসব ব্যাপারে কোনো খোঁজখবর আছে বলে লক্ষণ নেই। ফলে বিভিন্ন ধরনের পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনকারী কারখানার সংখ্যা কত, তার সঠিক হিসাব দিতে পারবেন না কেউ। বিশেষ করে পুরান ঢাকা ও বুড়িগঙ্গার তীরে এটি একটি প্রতিষ্ঠিত শিল্প। এর বড় বড় কারখানা এখন ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতেও গড়ে উঠেছে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধু পুরান ঢাকায় ৫০০ কারখানা রয়েছে। আর রাজধানীতে সাত শতাধিক। সারা দেশে দেড় হাজার।
প্রতিদিন কী পরিমাণ পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যবহার হচ্ছে সে ব্যাপারেও নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই। তবে এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের কুফলে এরই মধ্যে দেশের মানুষ ভুগতে শুরু করেছে। গতানুগতিক বন্যার চিত্রটি দেশে পাল্টে গেছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগের মতো আচরণ দেখা যায় না। ফলে প্রায়ই তলিয়ে গিয়ে ফসলের বিপুল ক্ষতি হচ্ছে। শহরাঞ্চলে বন্যার প্রভাব ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। ঢাকায় নালা নর্দমা খাল বিল অল্পতে প্লাবিত হচ্ছে। পানি সরতে পারছে না; ফলে অস্বাভাবিক জলাবদ্ধতা হচ্ছে। অন্যদিকে শহরটির পার্শ্ববর্তী প্রত্যেকটি নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে এসব নদীর তলায় প্লাস্টিক বর্জ্যরে পুরুত্ব কয়েক মিটার হতে পারে। কোনো ধরনের প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতা না থাকায় সস্তা পলিথিন ব্যবহার শুরু হয়েছে প্রত্যেকটি খাতে। এমনকি যেগুলোতে সহজে পাটের ব্যবহার হতো সেগুলোতেও এর ব্যবহার হচ্ছে। শুধু ঢাকা শহরে প্রতিদিন এক কোটি ৫০ লাখের বেশি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার হয়। পরিবেশ অধিদফতরের তথ্য, প্রতি বছর দেশে ১০ লাখ ৯৫ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়।
মাত্রাতিরিক্ত পলিথিন ব্যবহার শেষ পর্যন্ত পুরো দেশকে একসময় বসবাসের অযোগ্য করে তুলবে। প্রশ্ন হলোÑ আইন আছে; দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাও আছে, এরপরেও এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না কেন? ঢাকায় শক্তিশালী নগর কর্তৃপক্ষ থাকলেও কেন নাকের ডগায় নিষিদ্ধ পলিথিন কারখানা চলছে, অবাধ বিপণন হচ্ছে। ধরে নেয়া যাক, সিটি করপোরেশন রাজনৈতিক বিবেচনায় এমন কাজ হতে দিচ্ছে। এর পরেও রয়েছে পরিবেশ অধিদফতর। এই সংস্থাটির আসলে কাজ কী? মাঝে মধ্যে কিছু পরিবেশবাদী সংগঠনের সচেতনতামূলক কর্মসূচি দেখা যায়। এর বাইরে এর ক্ষতিকর ব্যবহার নিয়ে কোথাও থেকে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। আমরা মনে করি, সরকারকে অবশ্যই দ্রুত এ ব্যাপারে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। খুব প্রয়োজনীয় ছাড়া বাকি সব পলিথিন-প্লাস্টিক উৎপাদন এবং বিপণন সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেশের পরিবেশ রক্ষায় কর্মসূচি নিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement