০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


গণহত্যার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ছড়াচ্ছে

ফিলিস্তিনিদের প্রতি নৈতিক সমর্থন

-


গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর এ হামলাকে সংবাদমাধ্যম যুদ্ধ বলছে। অথচ যুদ্ধে দুটো প্রতিপক্ষ থাকে- যাদের শক্তি সমান না হলেও কাছাকাছি থাকে। এখানে প্রতিদিন শত শত ফিলিস্তিনি নারী শিশু বৃদ্ধ হত্যার শিকার হচ্ছে। হামলাকারী ইসরাইলি বিমানবহর কিংবা ট্যাংকগুলোকে বাধা দেয়ার কেউ নেই। তারা প্রতিপক্ষের কাছ থেকে কোনো ধরনের সামরিক প্রতিবন্ধকতা পাচ্ছে না, এতে ইসরাইলি হতাহত ও তাদের সম্পদহানি অনুল্লেখযোগ্য। তাই গাজায় যা চলছে তাকে যুদ্ধ নয়; বরং গণহত্যা ও জাতিগত নিধন অভিযান বলা যায়।
বিশ্বমোড়লরা চোখের সামনে প্রতিদিন শত শত মানুষ হত্যাকে শুধু বৈধতা দিয়ে যাচ্ছে না, ক্ষেত্রবিশেষে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র ও নৈতিক সমর্থন দিয়ে কাজটি সহজ করে দিচ্ছে। এক কথায়, গণহত্যা থেকে ফিলিস্তিনিদের বাঁচার সব ধরনের পথ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র্রের ভেতর থেকে একটি শ্রেণীর মধ্যে বোধোদয় হচ্ছে। আমরা দেখেছি কিছু দিন আগে দেশটির বিমানবাহিনীর এক সদস্য ইসরাইলি দূতাবাসের সামনে আত্মহত্যা করে এর প্রতিবাদ করেছেন। সামাজিকমাধ্যমে লাইভে থেকে তিনি নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘আর কোনো গণহত্যায় অংশ নিতে চাই না। গাজা স্বাধীন করো।’ ইসরাইলের বর্বরতার বিরুদ্ধে এটি ছিল একটি জোরালো প্রতিবাদ। সেই সাথে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের প্রতি শক্ত বার্তা।

এরপরও যুক্তরাষ্ট্র্রের ইসরাইল নীতির কোনো পরিবর্তন দেখা গেল না। ফিলিস্তিন প্রশ্নে তাদের বিরোধিতা যেন আরো বেড়ে গেল। সম্প্রতি জাতিসঙ্ঘে তাদের পূর্ণ সদস্যপদ প্রাপ্তি ঠেকিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে থেকে গণপ্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। গাজায় ইসরাইলের হামলা বন্ধের দাবিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। ক্যামব্রিজ, ম্যাসাচুসেটস, হার্ভার্ডসহ সব প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ে জোরদার আন্দোলন শুরু হয়েছে। প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন। ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি মন্তব্য করেছেন- পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা।

গত বুধবার সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয়েছে টেক্সাস ইউনিভার্সিটিতে। ক্লাস বয়কট করে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসেন। বলপ্রয়োগ করে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে। আন্দোলন দমিয়ে দেয়ার জন্য এর বিরুদ্ধে বর্ণবাদী অভিযোগ আনা হয়েছে, একে ইহুদিদের বিরুদ্ধে ঘৃণা সৃষ্টিকারী হিসেবে চিহ্নিত করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। এর আগে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৬০ জন, নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেড় শ’ জনসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীরাও বিভিন্ন ক্যাম্পাসসহ পাবলিক প্লেসে তাদের অবস্থান জোরদার করছেন। তারা টানা বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট, ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারসহ কয়েকটি আন্দোলন সফলতা পেয়েছে। মূলত দেশের তরুণ সমাজ বিদ্যমান বঞ্চনা ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ওই সব আন্দোলন পরিচালনা করে। গাজায় গণহত্যার বিরুদ্ধে একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের তরুণরা জেগে উঠেছে। এ আন্দোলন যে বর্ণবাদী নয়, সেটি প্রমাণ করছে ইহুদি তরুণদের জোরদার অংশগ্রহণ। জায়নবাদীদের আক্রমণের ভয়ে নিজের নাম-পরিচয় গোপন রেখে অনেক ইহুদি এই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন।
সভ্য বিশ্বের সামনে মানবনিধনের এক বীভৎস ইতিহাস রচিত হলো গাজায়। দুর্ভাগ্য হলো- মানবতার ফেরিওয়ালারা এর বিরুদ্ধে অবস্থান না নিয়ে তাতে যেন ইন্ধন জোগাচ্ছে। উৎখাতের শিকার হওয়া ফিলিস্তিনিদের প্রতিকার পাওয়ার একটি সুযোগ এখন যেন আপনা-আপনি শুরু করেছে। আমেরিকার ভেতরে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। এবার এটি ইউরোপে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সারা বিশ্বের তরুণ সমাজের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে। বিশ্বব্যাপী গণপ্রতিবাদ অচিরে ইসরাইলকে বিচারের মুখোমুখি করাতে সহায়ক হতে পারে।

 


আরো সংবাদ



premium cement