০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`


রেলের ভাড়া বাড়ছে না

যাত্রীদের ব্যয় বাড়ছে

-

আগামী ৪ জুন থেকে ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে যাতায়াতকারী রেলযাত্রীদের পকেটের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে। রেল কর্তৃপক্ষ কিন্তু ভাড়া বাড়াচ্ছে না। শুধু ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে ভ্রমণের ক্ষেত্রে টিকিটে যে রেয়াত দেয়া হতো তা তুলে নিচ্ছে। এতে যাত্রীবাহী ট্রেনের যেসব যাত্রী ১০০ কিলোমিটার বেশি দূরত্বে যাবেন তাদের বাড়তি টাকায় টিকিট কিনতে হবে। সুতরাং ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে বলার সুযোগ নেই। তবে জনগণের ঘাড়ে ঠিকই চাপবে ৩০০ কোটি টাকার বাড়তি বোঝা।
বলা হয়েছে, রাজস্ব ঘাটতির কারণে বিভিন্ন খাত থেকে সরকারের আয় বাড়ানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে রেলওয়ের এ পদক্ষেপ। রেলের লোকসানও বছরে দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রেলের ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি সামনে আসে।
জটিল ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে যাওয়ার দরকার নেই। সাধারণ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, রেয়াত তুলে নেয়ায় লোকসানের সামান্য উঠে আসবে। কিন্তু বিপুল মূল্যস্ফীতির ভারে ন্যুব্জ জনগণের জন্য এটি হবে বোঝার ওপর শাকের আঁটির মতো দুর্বহ।
এর আগে ২০১২ সালে রেলের ভাড়া গড়ে ৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়, যা সম্ভবত ভাড়া বাড়ানোর এক বিশ্বরেকর্ড। ২০১৬ সালে বাড়ানো হয় আরো সাড়ে ৭ শতাংশ হারে। তারপরও রেলের লোকসানের কোনো সুরাহা হয়নি। রাজস্ব ঘাটতি জনগণের কারণে হয়নি। সরকারের ব্যর্থতার দায় জনগণের ঘাড়ে চাপানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। এ সিদ্ধান্তের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে একটি মাত্র রাজনৈতিক দলÑ বাসদ। আর কেউ টুঁ শব্দটি করেনি। কারণ দুর্বোধ্য নয়। বাসদ এক বিবৃতিতে বলেছে, বাস্তবে রেলওয়ের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে এডিবি থেকে নেয়া ঋণের শর্ত অনুযায়ী সরকার রেলের ভাড়া বাড়াচ্ছে।
এটি সত্য যে, রেলের উন্নয়নে বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ অনুসরণ না করে বরং ঋণ নিয়ে চটকদার সব মেগা প্রকল্প নেয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, রেলের আয় বাড়ানোর জন্য যাত্রীভাড়া বাড়ানো একমাত্র বা ঠিক উপায় নয়।
রাষ্ট্রের সেবা খাত হিসেবে এবং দরিদ্র জনগণের সবচেয়ে নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব বাহন হিসেবে রেলওয়েকে লাভজনক হতে হবেÑ এমনও কথা নেই। তবে একে লাভজনক করার বহু উপায় আছে। রেলওয়ের বিপুল অপচয়, দুর্নীতি ও লুটপাট বন্ধ করা, ইঞ্জিন, কোচ, ওয়াগন ও জনবল সঙ্কটের সুষ্ঠু সমাধান করা, রেলওয়ের সক্ষমতা বাড়ানো এবং এ সংস্থার মালিকানাধীন জমি ও সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হলে এটি লাভজনক না হওয়ার কারণ নেই। সরকার এসব পদক্ষেপ নেয়নি।
বিশেষজ্ঞরা রেলের মাথাভারী প্রশাসন কমানো, দক্ষ কর্মচারী ও কারিগর নিয়োগ, রেলকারখানার আধুনিকায়ন, অপচয়মূলক প্রকল্প বর্জনের কথা বলেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কাছে রেলের বকেয়া সমুদয় পাওনা পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ, রেলের হাজার হাজার একর বেদখলকৃত জমি উদ্ধার, রেল কর্মকর্তা-মন্ত্রণালয়-আমলাদের দুর্নীতি-লুটপাট রোধের মতো বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এসব যথাযথভাবে সম্পন্ন করা হলে দাতা সংস্থা বা অন্য কারো কাছে হাত পাতার বা ভাড়া বাড়ানোর দরকার হবে না। কিন্তু বাস্তবতা এই যে, সরকার সে পথে না গিয়ে বরং অসহায় সাধারণ মানুষের দুর্দশা আরো বাড়ানোর পথ নিয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement