০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির বিচার

রায় পেতে আর কত দিন

-


আইনশাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণী- বিচার বিলম্বিত হওয়ার মানে ন্যায়বিচারের পথ রুদ্ধ হওয়া। এই বিবেচনায় আইন-আদালতের উচিত যৌক্তিক সময়ে বিচারকাজ সম্পন্ন করা। কিন্তু আমাদের দেশে যেখানে বিচারহীনতাই সংস্কৃতি হয়ে উঠেছে সেখানে কাক্সিক্ষত সময়ে বিচার পাওয়া পরম সৌভাগ্য।

একইভাবে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি মামলার বিচারের ক্ষেত্রেও ঘটছে বিলম্ব। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা রায়ের অপেক্ষায় রয়েছেন বছরের পর বছর। ঘটনার ১১ বছর পূর্ণ হলেও মামলার বিচারপ্রক্রিয়ায় তেমন অগ্রগতি নেই। অথচ এ ঘটনা সারা বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিল। তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে আমাদের তৈরী পোশাক শিল্প।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রাজধানীর অদূরে সাভারে রানা প্লাজা নামের বহুতল ভবন ধসে পড়ে পাঁচটি পোশাক কারখানার অন্তত এক হাজার ১৩৮ শ্রমিক প্রাণ হারান। আহত হন আরো আড়াই হাজার। আহতদের অনেকে চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছেন। তাদের জীবন গ্লানিকর হয়ে উঠেছে। নেমে এসেছে দুর্বিষহ যন্ত্রণা। এ দুর্ঘটনাকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে মনে করা হয়।
ওই সময়ে প্রকাশিত গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ভবনের তৃতীয়তলার পিলার ও দেয়ালে ফাটল দেখা দেয়। পরের দিন ২৪ এপ্রিল শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাধ্য করে মালিকপক্ষ। এর সাথে যোগ দেন রানা প্লাজা ভবনের মালিক আবদুল খালেক ও তার ছেলে সোহেল রানা। রানা প্লাজা তৈরিতে ধাপে ধাপে অনিয়ম ও জালিয়াতির আশ্রয় নেয়ায় শেষ পর্যন্ত গোটা ভবনটি পরিণত হয় মৃত্যুকূপে।

এ ভয়াবহ ঘটনা নিয়ে শ্রমিক সংগঠনগুলোর দীর্ঘদিনের দাবি, ২৪ এপ্রিল ঘটা রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি দিবসকে জাতীয়ভাবে শ্রমিক শোক দিবস ঘোষণা করা, রানা প্লাজার জমি অধিগ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত ও আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা এবং হতাহত শ্রমিকদের এক জীবনের আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা। তবে তাদের দীর্ঘদিনের দাবির কোনোটিই বাস্তবায়ন করা হয়নি। উল্টো স্বজন হারানো শোকার্ত হাজারো মানুষ এখনো ঘটনাস্থল ঘিরে খুঁজে ফেরেন প্রিয়জনের স্মৃতি। একদিকে শোকাবহ পরিবেশ অন্যদিকে বিচার না পাওয়ার বেদনায় মুষড়ে পড়েছেন অনেকে। তাই তো প্রতি বছর ২৪ এপ্রিল তাদের দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয়ে ওঠে সেখানকার পরিবেশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রানা প্লাজা ধসে হতাহতের ঘটনায় সব মিলিয়ে ১৪টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে পুলিশের হত্যা মামলা, ইমারত নির্মাণ আইন না মেনে ভবন নির্মাণ করায় রাজউকের করা মামলা এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলা। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর ১১টি মামলা করে বলে জানা যায়। এর মধ্যে শুধু দুদকের করা দু’টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। বাকি মামলাগুলোর বিচারকাজ চলমান রয়েছে।
রানা প্লাজা ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে দায়ের করা সব মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে। একটি জীবনের মূল্য শুধু অল্প কিছু টাকা দিয়ে পরিশোধ হতে পারে না।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement