ছন্দে ফেরাতে হবে এদের জীবন
- ০৬ নভেম্বর ২০২১, ০২:৪০
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশে তিন কোটি ২৪ লাখ মানুষ নতুন করে গরিব হয়েছে। গ্রামের এবং শহুরে বস্তির যেসব ঝুঁকিপূর্ণ পরিবার গড়ে কম আয় করলেও দারিদ্র্যসীমার উপরে ছিল, তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন পরিবারগুলোর দুই-তৃতীয়াংশই গত আগস্টে দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছিল। তারাই দেশের ‘নতুন দরিদ্র’ জনগোষ্ঠী। নতুন দরিদ্রদের মোট সংখ্যা বর্তমান জনসংখ্যার ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ২০২১ সালের মার্চে অনুমিত ধারণার চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি। এ সময়ে মানুষের আয় কমেছে, চাকরি হারিয়েছেন অনেকে। বেকারত্বের হার মার্চের ৩ শতাংশ থেকে বেড়ে আগস্টে ১৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। প্রথম লকডাউনে ৪৫ শতাংশ পরিবার সামান্য ত্রাণ পেলেও দ্বিতীয় লকডাউনে সেটি নেমে আসে ২৩ শতাংশে। ব্যয়বহুল শহরের ব্যয় নির্বাহ করতে না পেরে গ্রামে কিংবা তুলনামূলক কম ব্যয়বহুল শহরে চলে যাওয়া ১০ শতাংশ বস্তিবাসী এখনো ফিরে আসেনি। দৈনিক আয়ের ভিত্তিতে বর্তমানে শহুরে বস্তির ৭৭ শতাংশ পরিবার গরিব, যা উদ্বেগজনক।
দ্য পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) পরিচালিত সমীক্ষায় এসব তথ্য জানা গেছে। গত বৃহস্পতিবার সমীক্ষার ফল তুলে ধরা হয়। আর্থিকভাবে দুর্বল জনগোষ্ঠীর ওপর করোনার প্রভাব জানতে গত আগস্টে সমীক্ষার চতুর্থ ধাপ পরিচালিত হয়। চলতি বছরের আগস্টে শহুরে বস্তি এবং গ্রামে করা সমীক্ষায় দেখা গেছে, সর্বশেষ লকডাউনের ফলে মানুষের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার হার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এর আগের ধাপের সমীক্ষাগুলো ২০২০ সালের এপ্রিল, জুন ও চলতি বছরের মার্চে করা হয়েছিল।
সমীক্ষার ফল প্রকাশ করে জানানো হয়, ২০২০ সালের জুনে নতুন দারিদ্র্যের হার অনুমান করা হয়েছিল ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ। ২০২১ সালের মার্চে এটি কমে ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ হয়। এপ্রিলে শুরু হওয়া করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় এ হার আগস্টে বেড়ে হয়েছে ১৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ। করোনা সঙ্কটে প্রাথমিক অবস্থায় আয় কমে গেলেও সে ধকল সামলে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু ১৮ মাস অতিবাহিত হলেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানার পর ফের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া বিপরীত দিকে ঘুরে যায়। নতুন দরিদ্রদের সমস্যা আরো বেড়ে যায়। ২০২১ সালের এপ্রিলে দ্বিতীয়বারের মতো লকডাউন দেয়ায় পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া আরো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আসলে আয় পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া বিপরীত দিকে হাঁটছে। অবস্থা এমন- নতুন গরিবদের মধ্যে অনেকেই জীবনযাপনের জন্য পেশা পরিবর্তনের মাধ্যমে আয়ের চেষ্টা চালিয়েছেন। এমনকি দক্ষতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়; এমন কাজেও অনেকে নিয়োজিত হন। ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ধারাবাহিকভাবে। মাথাপিছু খাদ্য ব্যয় মহামারীর আগের তুলনায় এখনো কম। ঝুঁঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী বিশেষত শিশুদের ওপর এ অবস্থা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
সঙ্গত কারণে এ কথা বলা যায়, করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে সামাজিক ন্যায়বিচার একটি মৌলিক প্রশ্ন। অর্থনৈতিক বৈষম্য কমিয়ে আনা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। কোনো ধরনের নীতি তৈরি না করে বা সামান্য কিছু সাহায্য করে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণীকে তুলে আনা যাবে না। এমন আশঙ্কা অমূলক নয় যে, নতুনভাবে গরিব হয়ে যাওয়া পরিবারগুলো দীর্ঘমেয়াদে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রে পড়তে পারে। অন্য দিকে, নতুনভাবে করোনা সংক্রমণের হুমকি এখনো বিদ্যমান। তাই স্বাস্থ্যসেবা, প্রশাসনিক এবং অর্থনৈতিক নীতিমালার সমন্বয়ে একটি সার্বিক পদক্ষেপ নেয়া না হলে কিছুতেই এ ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে না বলেই বিশেষজ্ঞদের অভিমত। দ্রুত এমন অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। এ ছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। তবে তা হতে হবে সঠিক তথ্য ভিত্তিতে; যাতে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা সরকারি-বেসরকারি অনুদান পেয়ে জীবনের গতি ফিরিয়ে আনতে পারেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা