রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকার সমুন্নত করুন
- ২৬ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর চালিত নৃশংস সেনা অভিযান নিয়ে জাতিসঙ্ঘ একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করতে পরিকল্পিতভাবে তাদের অন্যায় অভিযান পরিচালনা করে। সেই অভিযানের অংশ হিসেবে ২০১৭ সালে নারী ও শিশুদের ধর্ষণ করা হয়েছে। ধর্ষণের ওইসব জঘন্য ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত ও ইচ্ছাপূর্বক। এ ধরনের অমানবিক পৈশাচিকতা একটি বাহিনী গণহারে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত চালাতে পারে কেবল ওই বাহিনীর শীর্ষ পর্যায় থেকে এ ব্যাপারে সম্মতি থাকলেই। রাখাইন থেকে রোহিঙ্গারা এখন প্রায় উৎখাত হয়ে গেছে। ছিটেফোঁটা এখনো যারা রাখাইনে রয়েছে, তারা প্রতিনিয়ত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার। এ অবস্থায় মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য এই সেনাবাহিনীর বিচারের বিষয়টি জোরালোভাবে ওঠা দরকার। সেটা গুরুত্ব না পেয়ে স¤পূর্ণ অনিশ্চিত অনিরাপদ রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা কোনোভাবেই যৌক্তিক ও মানবিক হতে পারে না।
রাখাইনে এখনো দুই লাখেরও মতো রোহিঙ্গা রয়েছে। তাদের বেশির ভাগকেই বসতবাড়ি থেকে নিয়ে ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। এসব ক্যাম্পের জীবন অত্যন্ত অমানবিক। অন্য দিকে, নিজেদের বসতবাড়িতে রয়েছেন, এমন রোহিঙ্গাদের সংখ্যা নগণ্য। তাদের সেখানে রাখা হয়েছে বিচ্ছিন্ন করে। তারা কৃষি, মৎস্য ও বিভিন্ন ধরনের শ্রমজীবী; কিন্তু তাদের কাজের জন্যও বাড়ির বাইরে যেতে দেয়া হচ্ছে না। ফলে আবাদি জমি পড়ে রয়েছে। কোনো ফসল উৎপাদন করা যাচ্ছে না। সেখানে সাহায্য সংস্থাগুলোকেও ঠিকভাবে কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না। ফলে অর্ধাহার-অনাহারে মানবেতর জীবন কাটছে রোহিঙ্গাদের। স্থানীয় শহরে তাদের কিছু দোকানপাট চালু দেখতে পাওয়া যায়। সংবাদমাধ্যম খবর দিয়েছে, এগুলো জবরদস্তি করে চালু রাখছে সেনাবাহিনী। অনেক দোকানপাট লুটপাট হয়ে গেছে। সেগুলোতে পর্যাপ্ত মালামাল নেই। তারপরও প্রতিদিন এগুলো খোলা রাখতে হচ্ছে। এ ধরনের জোরপূর্বক কার্যক্রম মূলত বাইরের লোকদের দেখানোর উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে। এটা দেখানোই তাদের লক্ষ্য যে, রোহিঙ্গারা ‘স্বাভাবিক’ জীবনযাপন করছে সেখানে। এমন দম বন্ধ হওয়া চরম অবস্থায় পৃথিবীতে অন্য কোনো জাতিগোষ্ঠী নেই। জাতিসঙ্ঘের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের রোহিঙ্গা নির্মূল অভিযানের সময় ৮০ শতাংশ ধর্ষণ ঘটানো হয়েছে পূর্বপরিকল্পিতভাবে। এর ৮২ শতাংশ করেছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তবুও হত্যা, খুন ও ধর্ষণের জন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই; বরং চলছে এর বিপরীত কার্যক্রম। যারা এমন অপরাধের জন্য দায়ী, তারাই সেখানে প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গাদের নিপীড়ন-নির্যাতন করে যাচ্ছে। বিশ্বসম্প্রদায় কোনোভাবে এ বিচারের দায় এড়াতে পারে না।
আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ করছি, রোহিঙ্গাদের মৌলিক ও মানবিক অধিকার সমুন্নত করার জোরালো উদ্যোগ নেই। প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি। ফলে অপরাধীরাই রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছে। সেখানে থেকে যাওয়া সামান্যসংখ্যক রোহিঙ্গার ওপর এখনো চালানো হচ্ছে অমানবিক নির্যাতন। রোহিঙ্গাদের স্বাধীন ও নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করতে হলে সর্বাগ্রে অপরাধীদের সেখান থেকে সরিয়ে নিতে হবে। নির্যাতনের পরিবেশে রোহিঙ্গারা কিভাবে ফিরে যেতে পারে? এ ব্যাপারটি উপলব্ধি করতে হবে। সবার আগে সেখানকার পরিবেশ বসবাসের উপযোগী করতে হবে। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকা দরকার রাখাইনে একটি ইনসাফপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করার বিষয়ে। এটা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটা গুরু দায়িত্ব। মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সভ্য জাতিগুলো এ ট্রাজেডির ব্যাপারে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকতে পারে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা