৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


প্রত্যেকটি গুমের পেছনে আওয়ামী লীগ সরকার দায়ী : রিজভী

-


দেশের প্রত্যেকটি গুমের পেছনে আওয়ামী লীগ সরকার দায়ী বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। গতকাল দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
রিজভী বলেন, এক সময়ের জনপ্রিয় ছাত্রনেতা, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য স্বৈরাচার বিরোধী সাহসী কণ্ঠস্বর এম ইলিয়াস আলীর গুমের আজ ১২ বছর পূর্ণ হলো। তাকে ফিরে পাওয়ার অধীর অপেক্ষায় আজো প্রহর গুনছেন তার স্ত্রী-সন্তান-পরিবারসহ দেশের অগণিত নেতাকর্মী। শেখ হাসিনা সরকারের নির্দেশে ১২ সালের ১৭ এপ্রিল মধ্যরাতে রাজধানী বনানীর ২ নম্বর সড়কের সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গাড়িচালক আনসার আলীসহ তুলে নিয়ে যায় ইলিয়াস আলীকে। এরপর গাড়িটি পাওয়া গেলেও হদিস মিলেনি তাদের। এ কথা আজ জনগণের সামনে স্পষ্ট যে, এই ফ্যাসিবাদী সরকারই ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে। কর্তৃত্ববাদী শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রাম আর টিপাইমুখ বাঁধ ও সীমান্ত আগ্রাসনের প্রতিবাদে সিলেট অঞ্চলে গড়ে উঠা গণ আন্দোলনে নেতৃত্বের কারণে ইলিয়াস আলী রাষ্ট্রযন্ত্র ও দেশী-বিদেশী অপশক্তির গাত্রদাহের প্রধান কারণ ছিল। ইলিয়াস আলী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ইলিয়াস আলীর জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক দক্ষতায় ঈর্ষান্বিত সরকার রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে তাকে গুম করে রেখেছে। ইলিয়াস আলীকে গুম করার পর সরকার বহুবিধ নাটক সাজিয়েছে। ওই সময় তার বিরুদ্ধে অশোভন কথা লিখে দেয়ালে পোস্টার সাঁটিয়েছিল সরকারের এজেন্টরা।

তিনি বলেন, গুমের ঘটনার পর তার স্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে খুদে বার্তা পাঠিয়ে শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাতের আয়োজন এবং ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের করার আশ্বাস ছিল লোকদেখানো। কারণ ওই সময় বিএনপির পাঁচ দিন হরতাল ছিল। আর বিএনপির সে হরতাল ও আন্দোলনকে বন্ধ করার জন্যই ছিল ওই মিথ্যা আশ্বাস। গুম হওয়ার পরে থানায় জিডি করা হয়, কোর্টে মামলা করা হয়। এরপরও তাকে ফিরিয়ে দেননি শেখ হাসিনা। ইলিয়াস আলীর সন্ধানে দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অভিযান চালানোর হাস্যকর নাটক করতে দেখা যায়। উচ্চ আদালতে করা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসীনা রুশদীর লুনার রিট আবেদনের শুনানিও আটকে দেয় সরকার। অর্থাৎ অদৃশ্য হওয়া নাগরিককে ফেরত দেয়ার উচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে বাধাগ্রস্ত করে সরকার।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, সমাজে মানুষের মধ্যে ভয়, আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতার বোধ সৃষ্টির জন্যই গুমকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে আওয়ামী নাৎসিবাদী শাসকগোষ্ঠী। মূল লক্ষ্য বিরোধী কণ্ঠকে নির্মূল করা, দীর্ঘমেয়াদি ফ্যাসিবাদী শাসনকে নিষ্কণ্টক করা। এই সরকারের গোটা আমলটাই অপহরণ-গুম-খুন-ক্রসফায়ার এবং বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কোনো আর্তনাদ, হাহাহার তাদের বোধোদয় ঘটাতে পারেনি। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দেশ, গুম-খুনের দেশ হিসেবে পরিচিতি দান করেছেন। মহাদুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদের হরিলুট, জনগণের টাকা আত্মসাৎ করে ক্ষমতাঘনিষ্ঠ লোকজনদেরকে আঙুল ফুলে কলাগাছ বানানোর সুযোগ করে দিয়েছেন। গত দেড় দশক ধরে দেশের সম্পদের বিরাট অংশ তারা দুবাই, কুয়ালালামপুর, ইউরোপে পাচার করেছে। এই সব অনাচার জনচক্ষু থেকে সরিয়ে দিতে গুমের মতো নির্দয় অমানবিক পন্থা অবলম্বন করেছে সরকার।

ইলিয়াস আলীকে গুম করার ঘটনা কাকতালীয় বিষয় বা তাকে গুম করা শুধু সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল বলে আমরা মনে করি না- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের বুঝতে হবে কী কারণে ইলিয়াস আলী গুম হলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার পক্ষে টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে তার সোচ্চার অবস্থানের কারণে ইলিয়াস আলী আজ অদৃশ্য। যারা অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার তাদেরই অত্যন্ত সচেতনভাবে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে, গুম করা হচ্ছে, আয়নাঘরে আটক করে রাখা হচ্ছে। ভারতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তার প্রমাণ অভিনব গুমের শিকার হয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তাকে দুই মাস গুম করে রাখার পর পাচার করা হয়েছে ভারতে। সেখানে তারা তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে দেয়।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত গুম হয়েছে ৬৫০ জনের বেশি। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে গত ১৫ বছরে ছয় শতাধিক মানুষ গুম হয়েছেন। এর মধ্যে একটা অংশ যাদের লাশ পাওয়া গেছে। দেশী ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এবং জাতিসঙ্ঘ তাদের বিভিন্ন সেশনে অনবরত বাংলাদেশে গুমের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করলেও শেখ হাসিনার গুম সরকার এটা নিয়ে তাচ্ছিল্য করে আসছে। এ রকম অসংখ্য পরিসংখ্যান আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে রয়েছে।

রিজভী বলেন, গুম-খুন-ক্রসফায়ার বাহিনী র‌্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে গুমের মাত্রা কিছুটা কমলেও এখনো গুম হচ্ছে, তবে গুমের প্যাটার্ন চেঞ্জ হচ্ছে। সেটা হলো আগে যারা গুম হতো তারা আর ফেরত আসতো না। তবে এখন যারা গুম হচ্ছেন তারা ৫ দিন ৭ দিন এমনকি এক মাস পরেও কেউ কেউ ফেরত আসছে। অথবা লাশ পাওয়া যাচ্ছে। এই নৃশংস গুমের শিকার কেবল সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলীই নন, সাইফুল ইসলাম হিরু, সাবেক কাউন্সিলর চৌধুরী আলম, জাহিদুল করিম তানভীর, মো: মাজহারুল ইসলাম রাসেল, আল আমিন, সাজেদুল ইসলাম সুমন, মোহাম্মদ আবদুল কাদের ভূঁইয়া মাসুম, জাকির হোসেন, মুন্না, মীর আহমদ বিন কাশেম, আবদুল্লাহিল আযমী, ইফতেখার আহমেদ দিনার, সোহেল রানা, মাহফুজুর রহমান সোহেল, জুনায়েদ আহমেদ, আনসার আলী, আল মোকাদ্দাস হোসেন, মোহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহ, কে এম শামীম আখতার, হুমায়ুন কবির পারভেজসহ অসংখ্য বিরোধী নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। এসব ঘটনা দেশবাসীকে অজানা আতঙ্কে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। সরকার কোনোভাবেই ইলিয়াস আলীর গুমের দায় এড়াতে পারে না। একজন রাজনীতিবিদকে গুম করার মাধ্যমে তার আদর্শকে শেষ করা যায় না। রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবেলা করা উচিত। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি গুমের পেছনে আওয়ামী লীগ সরকার দায়ী। বিভিন্ন সময় তাদের মুখ থেকেই এ কথা বেরিয়ে আসছে। তাদের কেউ কেউ স্বীকারও করেছেন। গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা মানবতার সবচেয়ে ভয়াবহতম অপরাধ। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, প্রিয় নেতা এম ইলিয়াস আলীসহ সরকারের গুমের শিকার নেতাকর্মীসহ সবাইকে অক্ষত অবস্থায় যার যার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিন। অন্যথায় একদিন প্রতিটি গুম-খুনের দায়ে বিচারের জন্য তৈরি হন। রিজভী বলেন, বাংলাদেশে ভয়ের সংস্কৃতি চালু করেছে ভোট ডাকাত মাফিয়া সরকার। কথা বলতে ভয় পাচ্ছে অনেকেই। গুম, খুন, অপহরণ আতঙ্কে দেশের গণতন্ত্রকামী প্রতিটি নাগরিক। স্বীকার করতেই হবে, শেখ হাসিনার অনেক গুণ, দুর্নীতি-মিথ্যাচার, বাচালতা, টাকা পাচার, গুম, অপহরণ আর মানুষ খুন। এই গুণের কারণেই বিনাভোটের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বছরের পর বছর ধরে বন্দুকের জোরে রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে সক্ষম হচ্ছেন। তার র‌্যাব-পুলিশ অনেক ক্ষেত্রেই কন্ট্রাক্ট কিলিং চালিয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব বিএনপির কাছে তালিকা চেয়ে তারস্বরে চিৎকার করছেন। ওবায়দুল কাদের সাহেব কিসের তালিকা চাইছেন এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এর আগেও তো তালিকা দেয়া হয়েছিল। আর তালিকা তো আপনাদের কাছেই রয়েছে। জাতিসঙ্ঘ গুমের একটি তালিকা দিয়েছিল। আজ পর্যন্ত বিনাভোটের সরকার এর কোনো জবাব দিতে পারেনি।
বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহস্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল আদালতে জামিন আবেদন করলে তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তার মিথ্যা মামলা ও সাজা প্রত্যাহারসহ অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহ্বান জানান রিজভী।


আরো সংবাদ



premium cement
তীব্র তাপদাহে বামনায় সহকারী অধ্যাপকসহ ৪ শিক্ষার্থী অসুস্থ জবিতে ৪ দিন স্বশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা, ১ দিন অনলাইনে মার্কিন পুলিশে বাড়ছে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূতদের সংখ্যা পাথরঘাটায় ৩ দিন ধরে মাদরাসাছাত্র নিখোঁজ মির্জাগঞ্জে গাছ থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু আফগানিস্তানে মসজিদে বন্দুক হামলা, নিহত ৬ দেশের বেসরকারি সৌর প্রকল্পে ১২১.৫৫ মিলিয়ন ডলার অর্থায়ন এডিবির কটিয়াদীতে কালের সাক্ষী ৫০০ বছরের কোটামন দিঘি সখীপুরে ৩০০ কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে আউশ ধানের বীজ ও সার বিতরণ স্কুল-মাদরাসার ছুটি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বহাল থাকছে রাজবাড়ীতে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১

সকল