২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে দেশবাসী শঙ্কিত : রিজভী

-

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে দেশবাসী শঙ্কিত। একতরফা ও নিশিরাতের নির্বাচন করে আওয়ামী সরকার এখন আন্তর্জাতিকভাবেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তার কারণেই বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল মুখমণ্ডল ম্লান হয়েছে। তিনি বলেন, ক্ষমতালোভের কারণে আওয়ামী লীগ জনগণের প্রতি অমানবিক অবজ্ঞা করে আসছে। এরা গণতন্ত্রের প্রাণ হরণ করে গোটা জাতিকে খণ্ড-বিখণ্ড করেছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, দেশে এক ভয়াল নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি চলছে। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক লক্ষ্য হচ্ছে ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখা। তাই সহিংস সন্ত্রাসের ব্যাপক বিস্তার তাদের জন্য অপরিহার্য।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী দেশে-বিদেশে বিলাসী জীবন-যাপনকে নির্বিঘœ রাখতেই ক্ষমতার আড়ালে মহা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে। গণতন্ত্রকে কঙ্কালে পরিণত করে দেশ ও জনগণের ভবিষ্যৎকে বরবাদ করার জন্যই চিরস্থায়ী ক্ষমতার বলয় তৈরির অপচেষ্টা করে যাচ্ছে তারা। অবৈধ সরকারের রক্তচক্ষুর দানবীয় তাণ্ডবে বিরোধী দল, ভিন্ন মত, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মানুষের মৌলিক অধিকার সব কিছুকেই ডাকাতি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে জনগণের যে নবতরঙ্গের সৃষ্টি হয়েছে তা দেখে প্রধানমন্ত্রী আরো বেশি ক্রোধে- ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। জনতার এই উত্তাল ঢেউ দেখে সরকার শঙ্কিত হয়ে মনে করছেন-ঘুষ-দুর্নীতি-পুঁজি লুণ্ঠনের যে অভয়ারণ্য তৈরি করেছেন বাংলাদেশে সেটি হয়তো হাতছাড়া হয়ে যাবে। সে কারণেই বিরোধী কর্মসূচিতে দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গেস্টাপো বাহিনীর মতো হত্যার লাইসেন্স দিয়ে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ লজ্জা-শরম হারিয়ে এখন স্বঘোষিত দেশ নেতা হয়েছে।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনর উন্মাদ লীলায় গ্রামে- গঞ্জে-হাটে-ঘাটে-বন্দরে-বাজারে-শহরে লাশ পড়ছে, ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে ভিন্নমতের রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। ওঁৎ পেতে থাকা শিকারি বাঘিনীর মতো বিএনপির মিছিলের ওপর নির্দয় হৃদয়হীন পুলিশ গুলি চালিয়ে জীবন কেড়ে নিচ্ছে তরুণসহ বিভিন্ন বয়সী নেতাকর্মীদের।
তিনি বলেন, আওয়ামী সরকারের পুলিশবাহিনী বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের যেসব নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে তারা প্রায় সবাই শ্রমজীবী মানুষ। মাত্র তিন দিন আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারাম উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা নয়ন মিয়ার শরীরে পুলিশ বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। নয়ন অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান, মৎস্য শিকার করেই কোনো রকমে সংসার চালাতো। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় তার মৃত্যুতে এখন তার পরিবার পথে বসেছে।
রাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, অনাহার, অর্ধাহার, ডেঙ্গু ও রোগ-শোকে ধুঁকছে দেশের লোক, ঝরছে শিশুর প্রাণ, সারা দেশ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠিত। মানুষের স্বাভাবিকভাবে বাঁচার অধিকারকেও এই সরকার কেড়ে নিয়েছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের বিরুদ্ধে এক নিরন্তর অঘোষিত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের জমিদারি শাসনে গণতন্ত্র মরণাপন্ন। দেশের জনগণ এখন পরাধীন। মামলা-হামলা, ধরপাকড় বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ঘুম কেড়ে নেয়া হয়েছে, তারা কেউ বাড়িতে অবস্থান করতে পারছেন না। বাসা ও বাড়ির মহিলা সদস্যরা পর্যন্ত পুলিশি অসদাচরণের শিকার হচ্ছেন। সরকারের বিরুদ্ধে যারা সমালোচনা করছেন তাদের কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছে। রাজবন্দীদের ওপর অত্যাচার অব্যাহত রাখা।
রিজভী বলেন, ভিন্নমতের প্রতি এই সরকারের আক্রমণাত্মক আচরণের উদ্দেশ্যই হচ্ছে প্রতিবাদী স্বরকে থামিয়ে দেয়া, বিরুদ্ধ মত পেশের কোনো পথ না রাখা। দেশের জনগণ এখন রাগ-ঘৃণা ও প্রতিবাদের আগ্নেয়গিরি হয়ে আছে। বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর অনাচার চলতে থাকলে যেকোনো সময় প্রতিশোধের অগ্ন্যুৎপাতের মহাপ্লাবন বয়ে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের মিথ্যা মামলা, গায়েবি মামলা, পুলিশি নির্যাতন ও প্রেফতারের প্রতিবাদে আগামী ৩০ নভেম্বর বুধবার ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিভাগীয় সদরে (মহানগরগুলোতে) বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন রিজভী। তবে রাজশাহী ও কুমিল্লা বিভাগীয় সদর ওই কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে।


আরো সংবাদ



premium cement