২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হঠাৎ নৈরাজ্য বাসভাড়ায়

-

কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে রাজধানীর কিছু বাসে ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে শুরু হয়েছে নৈরাজ্য। দুই দফা করোনার ধাক্কায় অনেকেই যখন অর্থসঙ্কটে ভুগছেন, ঠিক তখনই উটকো এ ঝামেলায় বিপাকে পড়ে গেছেন সাধারণ যাত্রীরা। তবে সব রুটের বাস ভাড়াই যে বৃদ্ধি করা হয়েছে তা নয়, কয়েকটি রুটের কিছু কোম্পানির বাসের ক্ষেত্রে এমন নৈরাজ্য দেখা গেছে। যাত্রীদের অভিযোগ যার কাছ থেকে যেভাবে পারছে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। যা নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই বাসশ্রমিকদের সাথে যাত্রীদের বাগ্বিতণ্ডা হচ্ছে। এ ব্যাপারে শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সড়ক ও পরিবহন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।
সরেজমিন দেখা গেছে, বাসভাড়া বাড়ানোর এ প্রতিযোগিতায় নেমেছে অনাবিল, লাব্বাইক, শ্রাবণ, হিমালয়সহ আরো কয়েকটি পরিবহন। এ পরিবহনগুলো মূলত হানিফ ফ্লাইওভার ব্যবহার করে বা তার নিচের রাস্তা ব্যবহার করে।
ভুক্তভোগী যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনাকালে সরকারের পক্ষ থেকে ভাড়া দেড়গুণ করে দেয়া হয়েছিল। সে সময় অবশ্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে দুই সিটে একজন যাত্রী চলাসহ বিভিন্ন নিয়ম মেনে চলার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এখন করোনা পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো। আবার লকডাউনও শিথিল। সব কিছু স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে। অথচ এসব পরিবহন স্বাভাবিক ভাড়া নিতে চাইছে না। এই নিয়ে প্রতিবাদ করলে চালক-হেলপার-কন্ডাক্টরের হাতে তাদের লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে।
জানা গেছে, সাইনবোর্ড থেকে গাজীপুর রুটে যাতায়াত করা অনাবিল পরিবহন সাইনবোর্ড থেকে মানিকনগর, বৌদ্ধমন্দির পর্যন্ত স্বাভাবিক সময়ের ভাড়া ছিল ১৫ টাকা। এখন সেটি নেয়া হচ্ছে ২০ টাকা করে। এটি হানিফ ফ্লাইওভার এড়িয়ে তার নিচ দিয়ে চলাচল করে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হলেও অনাবিল পরিবহনের কিছু স্টাফ বেশি ভাড়া নিতে নিতে এটিকে প্রায় প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে। অনাবিলের দেখাদেখি ভাড়া বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে একই রুটের লাব্বাইক/লাভলী গাড়ি। তারা এক্ষেত্রে ওয়েবিল বা চেকপোস্টের অজুহাত দিয়ে বেশি ভাড়া দাবি করছে। তাদের মূল যুক্তি, অনাবিল ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে গিয়ে ২০ টাকা নিলে আমরা ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে আসি, সেক্ষেত্রে কেন ২০ টাকা দেবেন না। এ নিয়ে যাত্রীদের সাথে প্রায়ই বচসা হচ্ছে বাসস্টাফদের।
অন্যদিকে চিটাগাং রোড থেকে গুলিস্তান রুটে ভাড়া বাড়াতে শুরু করে হিমালয় নামের একটি পরিবহন। যাত্রী কম থাকলে সিটিং সার্ভিস দাবি করে তারা ১৫ টাকার ভাড়া ২০ টাকা নিতে শুরু করে। তাদের এই ধারা এখন অনুসরণ করছে শ্রাবণসহ আরো কয়েকটি পরিবহন। এ পথের যাত্রী ছোট চাকরিজীবী কাইয়ুম বলেন, করোনার দুই দফা ধাক্কায় অনেকেই এখন বেকার, অনেকের বেতন অর্ধেকের মতো কমে গেছে, এ অবস্থায় কোনো কারণ ছাড়াই ভাড়া ২৫ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের জন্য তা সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। আরেক যাত্রী আনোয়ার বলেন, আমাদের আয়ের পথগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমরা অনেক সমস্যার মধ্যে পড়েছি, এ অবস্থায় এভাবে ভাড়া বাড়ালে মাস শেষে না খেয়ে থাকার দশা হবে।
লাব্বাইক পরিবহনের যাত্রী সুমাইয়া বলেন, দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী মন্ত্রী রয়েছেন এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। তারপরও যেন এসব অনিয়ম দেখার কেউ নেই। বাসকর্মীদের কাছে ভাড়া বাড়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে, কেউই কোনো যুক্তি দেখাতে পারেননি। তাদের দাবি মালিকরা ভাড়া বাড়িয়েছেন, আমাদের কিছু করার নেই। আবার কোনো কোনো হেলপার সর্বোচ্চ যুক্তি হিসেবে বলেছেন, অন্যরা বাড়িয়েছে, তাই এ গাড়িতেও ভাড়া বেড়েছে।
যাত্রীরা এ ব্যাপারে আরো প্রতিবাদ জানাতে চাইলেও নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে অনেকে চুপ থাকছেন। কারণ সাইনবোর্ড এলাকাটি অনাবিল, লাব্বাইকসহ বেশ কয়েকটি পরিবহনের স্ট্যান্ড বা গ্যারেজ হিসেবে পরিচিত। এসব গাড়িতে যাত্রীদের প্রতিবাদ পছন্দ না হলে শারীরিকভাবে হেনস্তা হওয়ার রেকর্ড আছে। এমনকি এসব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও এ ব্যাপারে অভিযোগ দিয়ে কোনো সমাধান পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় এ রুটের যাত্রীরা ভাড়া নিয়ে পরিবহনগুলোর অরাজকতা বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement