২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ডিসিসিআই এর ওয়েবিনার

টেকসই গবেষণার জন্য শিল্প-শিক্ষা খাতের সমন্বয় জরুরি : শিক্ষামন্ত্রী

-

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘শিল্প-শিক্ষা খাতের সমন্বয়; নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত’ শীর্ষক ওয়েবিনার গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি, এমপি প্রধান অতিথি এবং বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ বিশেষ অতিথি হিসেবে এ ওয়েবিনারে যোগদান করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বৈশি^ক প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকার জন্য শিক্ষা ও শিল্প খাতের বিদ্যমান মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে এবং একই সাথে নতুন পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিজেদের দক্ষ করে তোলতে হবে। তিনি বলেন, বাণিজ্যিকভাবে গ্রহণযোগ্য টেকসই গবেষণা কার্যক্রমে শিল্প খাতকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে এবং এ ধরনের কার্যক্রমে বেসরকারি বিনিয়োগ একান্ত অপরিহার্য, যার মাধ্যমে বিশ^বিদ্যালয়গুলো প্রয়োজন মাফিক শিক্ষা কারিকুলাম প্রস্তুতের পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে সক্ষম হবে। তিনি দুই খাতের বিদ্যমান দূরত্ব কমিয়ে আনার ওপর জোরারোপ করেন এবং শিল্প খাতের দক্ষ মানবসম্পদের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে একটি ম্যাপিং করা খুবই জরুরি বলে মন্তব্য করেন।
স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রহমান বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কারণে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অভাবনীয় উন্নতি ও এসডিজি ভিত্তিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিবর্তন বাংলাদেশের শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি সর্বোপরি সামগ্রিক আর্থিক ব্যবস্থায় নতুন সম্ভাবনার সূচনা হয়েছে। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি জানান, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ শ্রমবাজারে প্রায় ৬৩.৫ মিলিয়ন লোক নিয়োজিত রয়েছে এবং প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ নতুন জনবল শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। তিনি বলেন, আমাদের প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থায় একজন শিক্ষার্থী বিশ^বিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি লাভের পরও শিল্প খাতে প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবে চাকরি পেতে বেশ প্রতিকূলতার মুখোমুখি হন। তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের বিশ^বিদ্যালয়গুলো থেকে শিক্ষাজীবন শেষ করার পর প্রায় ৩৮.৬ শতাংশ শিক্ষিত তরুণ কর্মহীন হয়ে পড়ে, যা কিনা শিল্প খাতের প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবকেই প্রমাণ করে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রতিযোগী সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং দক্ষ জনবল সৃষ্টির লক্ষ্যে শিল্প ও শিক্ষা খাতের সমন্বয়ের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, আমাদের শিক্ষা ও শিল্প খাতের মধ্যকার ব্যবধান অত্যন্ত বেশি, যা নিরসন এখন সময়ের দাবি। তিনি শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমে আরো বেশি হারে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার জন্য বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের আহ্বান জানান। ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, শিল্প খাতের প্রয়োজনের নিরিখে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা সম্ভব হলে, বিদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে, যার মাধ্যমে স্থানীয় মেধাবীদের কাজের সুযোগ বাড়বে। তিনি বিশ^বিদ্যালয়গুলোকে বর্তমান পরিস্থিতির ভিত্তিকে ক্যারিকুলাম প্রণয়নের আহ্বান জানান।
ওয়েবিনারের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো: সবুর খান। তিনি বলেন, বিশ^বিদ্যালয়গুলো শুধু প্রতি বছর গ্র্যাজুয়েট তৈরি করার ওপর গুরুত্ব না দিয়ে বরং তারা শিক্ষাজীবনে কতটুকু দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছে তার ওপর বেশি প্রাধান্য দেয়া প্রয়োজন। সবুর খান মনে করেন, শিল্প খাতকে বিশ^বিদ্যালয়ের সাথে সুদৃঢ় সমন্বয় বজায়ে রাখা প্রয়োজন, যার মাধ্যমে শিল্প খাতের প্রয়োজনের নিরিখে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে সক্ষম হবে। তিনি জানান, ব্লুমবার্গ প্রকাশিত ‘ইনোভেশন ইনডেস্ক ২০২১’ অনুযায়ী, উদ্ভাবনের দিক থেকে দক্ষিণ কোরিয়া সারা পৃথিবীতে নেতৃত্ব দিচ্ছে, আর এটি সম্ভব হয়েছে সে দেশে শিল্প ও শিক্ষা খাতের কার্যকর সমন্বয়ের মাধ্যমে এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার বাজারে বাংলাদেশের টিকে থাকার জন্য তিনি শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে আরো বেশি হারে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। সরকারি ও বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের মধ্যকার সর্বোত্তম চর্চা ও সাফল্যগুলো নিজেদের মধ্যে বিনিময় করা প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন সবুর খান।
নির্ধারিত আলোচনায় অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বুয়েটের ‘রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার ফর সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং’-এর পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান তালুকদার, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক তাহমিনা বিনতে মোস্তফা এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ‘ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’-এর অধ্যাপক ও পরিচালক ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার অংশগ্রহণ করেন। নাসিম মঞ্জুর বলেন, বেসরকারি খাতের পক্ষ থেকে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমে বিনিয়োগের অর্থের ওপর কর অব্যাহতির সুবিধা প্রদান করলে এ ধরনের কার্যক্রমে বিনিয়োগে বেসরকারি খাত আরো বেশি হারে উদ্বুদ্ধ হবে। তিনি দেশের মেধাস্বত্ব আইন ও প্যাটেন্ট আইনের যুগোপযোগীকরণের দাবি জানান, যার মাধ্যমে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গবেষণা কার্যক্রমে বিনিয়োগ আরো বৃদ্ধি পাবে। ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার বলেন, শিল্প ও শিক্ষা খাতের সমন্বয় বৃদ্ধিতে সরকারি নীতিসহায়তা খুবই জরুরি। তিনি খাত ভিত্তিক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি ‘এনডাউমেন্ট ফান্ড’ গঠনের প্রস্তাব করেন। বুয়েটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান তালুকদার বলেন, উদ্ভাবন ও গবেষণা কার্যক্রমকে একটি মেগা প্রকল্প হিসেবে বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এবং এ ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ খুবই জরুরি বলে মত প্রকাশ করেন। তাহমিনা বিনতে মোস্তফা বলেন, বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত মেধাবী, তবে তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরো দক্ষ করে তুলতে হবে, যেন তারা শিল্প খাতের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হয়। বিজ্ঞপ্তি

 


আরো সংবাদ



premium cement