২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শিল্পীদের কান্না শোনার কেউ নেই

-

করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পী ও কলাকুশলীদের এখন পথে বসার উপক্রম। যারা এতদিন মানুষকে আনন্দ দিয়ে আসছেন আজ তাদের কান্না শোনার কেউ নেই। কাজ হারিয়ে আর্থিক সঙ্কটে থেমে গেছে অনেকের স্বাভাবিক জীবন। এর মধ্যে শিল্পী থেকে শুরু করে কলাকুশলীরাও রয়েছেন। তবে সবচেয়ে সঙ্কটে পড়েছেন মিউজিশিয়ানরা। সঞ্চয় যা ছিল এতদিনে তাও শেষ। এখন দেয়ালে পিঠ আটকে গেছে। কী করবেন, কার কাছে যাবেন এমন ভাবনায় তারা দিশেহারা।
এরই মধ্যে করোনা কেড়েছে অনেক শিল্পীর জীবন। এর মধ্যে রয়েছেন, অভিনেতা সাদেক বাচ্চু, কে এস ফিরোজ, স্বপন সিদ্দিকী, সুরকার আলাউদ্দিন আলী, টিভি ব্যক্তিত্ব বরকত উল্লাহ, চলচ্চিত্র পরিচালক আফতাব খান টুলু, চলচ্চিত্র প্রযোজক মোজাম্মেল হক সরকার, এনটিভির অনুষ্ঠান প্রধান মোস্তফা কামাল সৈয়দ। এর বাইরে আক্রান্ত আছেন শতাধিক।
জানা গেছে, গত মে মাসে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় পাঁচ হাজার শিল্পী ও সংস্কৃতিসেবীকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দেয়। এ জন্য জেলাপর্যায়ে শিল্পকলা একাডেমির মাধ্যমে তালিকা তৈরির কথা জানানো হয়। কিন্তু সেই তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকেও সহায়তার বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন। সে তালিকাটিও এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তথ্য মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় আলাদাভাবে তালিকা তৈরি করে পাঠানোর পর সে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
অন্য দিকে তথ্য মন্ত্রণালয় চলচ্চিত্র শিল্পীদের তিন কোটি টাকা আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দেয়। কিন্তু সেই সহায়তা এখনো চলচ্চিত্র শিল্পীরা পাননি। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শিল্পীরা একবার তালিকা পাঠানোর পর তাতে ‘অসঙ্গতি’ থাকায় আবার নতুন করে তালিকা নেয়া হয়। সেই তালিকা এখনো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অভিনয় শিল্পী সঙ্ঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম নয়া দিগন্তকে জানান, মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার পর তারা ৩৫০ জন শিল্পীর তালিকা পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু সেখান থেকে তারা এখনো কোনো সহায়তা পাননি। তবে অভিনয় শিল্পী সঙ্ঘের পক্ষ থেকে বিদেশে অবস্থানরত শিল্পী ও দেশের দু’টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অনেকের সহযোগিতায় তারা তাদের সদস্যদের ২০ লাখ টাকা ও খাদ্যসহায়তা দিয়েছে। যারা বেকার হয়েছেন তাদের তিন মাস আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। এর বাইরে চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
অন্য দিকে নবগঠিত কণ্ঠশিল্পী পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ জানান, খুব বেশি আর্থিক সঙ্কটে আছেন এমন ১৫০ জনের মতো শিল্পী ও কলাকুশলীকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। এর বাইরে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতার বিষয়ে তারা জানেন না। তিনি বলেন, আগে কোনো সংগঠন ছিল না বলে সাংগঠনিকভাবে করোনাকালে কোনো সহযোগিতা করা হয়নি। তবে সম্প্রতি কণ্ঠশিল্পীদের একটি সংগঠন হয়েছে। যারা করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে সাহায্যের চেষ্টা চলছে।
অপর দিকে করোনাভাইরাসের পরিস্থিতিতে আর্থিক সঙ্কটে থাকা সঙ্গীতশিল্পী ও কলাকুশলীদের জন্য সরকারি অনুদান চেয়েছে সঙ্গীত শিল্পী ও কলাকুশলীদের সংগঠন সেভ দ্য বাংলাদেশ মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি (এসবিএমআই)। সংগঠনের উপদেষ্টা ফরিদ আহমেদ ও ব্যান্ড তারকা হাসান এক বিবৃতিতে সঙ্কটে পড়া শিল্পীদের জন্য সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শিল্পীরা সম্মানিত, তাই তারা রাস্তায় নেমে তাদের অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করতে পারছেন না। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা মুখ বুজেও সহ্য করতে পারছে না।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement