২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভাড়া নিয়ে নির্দয় বাড়িওয়ালা উৎকণ্ঠায় ভাড়াটিয়ারা

-

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্নআয়ের মানুষ বাসাভাড়া নিয়ে উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন পার করছেন। মহামারীর প্রাক্কালে বাড়িভাড়া না নেয়ার দু-একটি উদাহরণ থাকলেও বেশির ভাগ বাড়িওয়ালাই ভাড়া আদায়ে নির্দয় হয়ে পড়ছেন। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্থানে বাসা ভাড়া দিতে না পারায় বাড়িওয়ালাদের হাতে লাঞ্ছিত হচ্ছেন ভাড়াটিয়ারা। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় বাড়িওয়ালাদের হাতে বেশি নাজেহাল হচ্ছেন ভাড়াটিয়ারা। এমনকি মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার ঘটনাও ঘটছে।
করোনাভাইরাস নিয়ে নানা আতঙ্ক থাকলেও বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন রাজধানীর ভাড়াটিয়ারা। মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত সবাই বাড়িওয়ালাদের চাপে দিশেহারা। এ অবস্থায় ভাড়াটিয়ারা বাসা ছাড়তে পারছেন না, আবার সময়মতো ভাড়া দিতে না পারায় নাজেহাল হতে হচ্ছে তাদের।
প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এখন প্রায় সবকিছু বন্ধ। এ কারণে অনেক অফিস মার্চ মাসের বেতন দিতে পারলেও কেউ আবার পারেনি। কর্মজীবীদের যাদের কাছে টাকা গচ্ছিত ছিল, তাও শেষ হওয়ার উপক্রম। সংসার চালানো দায় হয়ে যাচ্ছে অনেকেরই। কিন্তু এসব সমস্যার মধ্যে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে বাসাভাড়া। রাজধানীর বেশির ভাগ পাড়া-মহল্লার ভাড়াটিয়াদের ভাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন বাড়ি মালিকরা। অনেককে জোর করে বের কিংবা বাড়ি ছেড়ে দেয়ার জন্যও বলছেন।
মারধর করে বের করে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে কয়েকটি। গত মঙ্গলবার পুরান ঢাকার হোসেনী দালান এলাকায় সময়মতো ভাড়া দিতে না পারায় বাড়িওয়ালার মারধরের শিকার হয়েছেন ভাড়াটিয়া হান্নান ও তার দুই ছেলে। এ ঘটনায় বাড়িওয়ালা রাজু ও তার ভাতিজাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হান্নান জানান, তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে পিঠা বিক্রি করেন। তার দুই ছেলে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন। করোনার কারণে তারা ব্যবসা করতে পারছেন না। এ কারণে তিন মাসের ভাড়া বকেয়া পড়েছে। ভাড়া নিয়ে বাড়িওয়ালা বিভিন্ন সময় হুমকি দিচ্ছিল।
অপর দিকে কলাবাগান ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে এক মাসের বকেয়া ভাড়ার জন্য ভাড়াটিয়ার বাসায় ভাঙচুর এবং তাদের বের করে দেয়ার ঘটনায় বাড়ির মালিককে গ্রেফতার করে র্যাব। নূর আক্তার শম্পা নামে ওই বাড়ি মালিক তার স্বামী শহিদুল্লাহ খানকে নিয়ে বাড়ির নিচতলার ভাড়াটিয়া সেলিম হোসেনের কাছে গিয়ে মার্চ মাসের ভাড়া চান। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির কারণে সব কাজ বন্ধ হওয়ায় আগামী মাসে এক সাথে ভাড়া দেবে বললে তারা মানেননি। পরে বাড়িওয়ালা বাসার জিনিসপত্র ভাঙচুর, মারধর করে ভাড়াটিয়ার পরিবারের সব সদস্যকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বের করে মূল গেটে তালা লাগিয়ে দেয়। সারা রাত বাড়ির বাইরে কাটানোর পরের দিন র্যাব-পুলিশের সহায়তায় ওই পরিবার বাসায় ঢোকে। একইভাবে রাজধানীর কামরাঙ্গিরচরে বাসা ভাড়ার জন্য একটি পরিবারকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয় বাড়িওয়ালা ও তার লোকজন।
বাড়িভাড়া নিয়ে ঢাকার বাইরেও চলছে নির্দয় আচরণ। ভাড়া দিতে দেরি হওয়ায় টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে জাহানারা বেগম নামে এক ভাড়াটিয়াকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। রাজধানীর মিরহাজীরবাগে একটি মুদি দোকানের সামনে বাড়ি ভাড়া নিয়ে আলাপ করছিলেন এক ব্যক্তি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, এখন তার ব্যবসা একেবারেই বন্ধ। দুই মাস ধরে বাসায়ই অবস্থান করছেন। এপ্রিল মাসের বাসা ভাড়া সময়মতো পরিশোধ করেছেন। কিন্তু আর্থিক সঙ্কট দেখা দেয়ায় চলতি মাসের ভাড়া দিতে দেরি হয়। কিন্তু মাস শেষ না হলেও এরই মধ্যে বাড়িওয়ালা তার কাছে তিনবার ভাড়া চেয়েছেন, রাগারাগীও করেন। মানসম্মানের চিন্তা করে তিনি ভাড়া নগদ দিতে না পারলেও ব্যাংক চেকে পরিশোধ করেন বলে জানান। একই এলাকার আরেক ভাড়াটিয়া জানান, সদরঘাটে তার দোকান রয়েছে। তবে দুই মাস ধরে দোকান বন্ধ রেখেছেন। হাতে জমা টাকা যা ছিল সবই খরচ হয়েছে। এর মধ্যে আবার বাড়িওয়ালার চাপ। তিনি বলেন, বাসায় বাজার না থাকা সত্ত্বেও মানসম্মানের ভয়ে বহু কষ্টে দুই দিন আগে বাড়িওয়ালাকে এক মাসের ভাড়া দিয়েছেন। শাহজাহানপুরের আরেক বাসিন্দা বলেন, তাকে বাড়িওয়ালা বাসা ছেড়ে দিতে বলেছেন। বিষয়টি তিনি কোনোভাবে সমাধান করলেও ভয়ে থাকেন।
সমস্যা হতে পারে এই ভয়ে অনেক ভুক্তভোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা তো আর ইচ্ছা করে ভাড়া ধরে রাখি না। করোনার কারণে একটি সঙ্কট চলছে। মানবিক বিচারে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু বাড়িওয়ালারা নির্দয় আচরণ করছেন। তাদের ভাড়া চাই। এ কারণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা।
অবশ্য বাড়িভাড়া নিয়ে এসব অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম সতর্ক করে বলেছেন, মহামারীর সম্মুখযোদ্ধা চিকিৎসক-নার্স ও মিডিয়াকর্মীদের সাথে ফ্ল্যাটের বাসিন্দা, ভাড়াটিয়া ও বিশেষ করে বাসার মালিক বিরূপ আচরণ করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই হুঁশিয়ারির মধ্যেও থেমে নেই কিছু বাড়িওয়ালার অন্যায় আচরণ।

 


আরো সংবাদ



premium cement