কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে চার লেনের দৃষ্টিনন্দন ফ্লাইওভার নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। কক্সবাজার শহরের সাথে সাগরপাড় বরাবর কলাতলী অংশে মেরিন ড্রাইভের সংযোগ না থাকায় হোটেল, মোটেলসহ পর্যটন শিল্প বিকাশে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এই ফ্লাইওভার নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, ১৯৯৩-৯৪ সালে থানা সংযোগ সড়ক (ফিডার রোড টাইপ-এ) হিসেবে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটি ২০০৪-০৫ অর্থবছরে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়। প্রথম পর্যায়ে কলাতলী থেকে ইনানী পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার, দ্বিতীয় পর্যায়ে ইনানী থেকে শিলখালী পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার এবং শেষপর্যায়ে শিলখালী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার। ১৯৯৩-৯৪ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নির্মাণ কাজ শুরুর সাথে সাথে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরকে হস্তান্তর করা হয়। ১৯৯৫ সালে সওজ কর্তৃক কলাতলী থেকে নিরিবিলি হ্যাচারি পর্যন্ত ১ দশমিক ৭ কিলোমিটার কাজ সম্পন্নের পরপরই সাগরের ভাঙনে তা ধুয়ে যায়। পরে মেরিন ড্রাইভের দায়িত্ব আবার সেনাবাহিনীকে দেয়া হয়।
বৈশ্বিক উষ্ণতা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো মেরিন ড্রাইভ এবং তৎসংশ্লিষ্ট সমুদ্রতীরকেও দারুণভাবে প্রভাবিত করেছে। সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের কারণে কলাতলী থেকে ইনানীর ২৪ কিলোমিটার অংশের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। ১৯৯৫ সালে কলাতলী থেকে নিরিবিলি হ্যাচারি পর্যন্ত সাগরেবিলীন হওয়ার পরও প্রথমপর্যায়ে বাকি সড়কে অনেক ক্ষতি হয়। বর্তমানে প্রচুর হোটেল-মোটেল ও পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। কিন্তু কক্সবাজার শহর থেকে মেরিন ড্রাইভের সাথে সংযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই অংশে একটি দৃষ্টিনন্দন এক দশমিক ২৫০ কিলোমিটার ফ্লাইওভার নির্মাণের এই উদ্যোগ। তবে এই কাজের দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দেয়া হয়েছে। কক্সবাজার শহরের সাথে মেরিন ড্রাইভের সংযোগ স্থাপন হলে কক্সবাজার থেকে সাবরাং পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন মেরিন ড্রাইভ সম্পন্ন হবে। আর এর জন্যই ৪৬৬ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটি এখন পিইসির অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এই প্রকল্পের আওতায় সেতু বা ফ্লাইওভার হবে ১.২৫ কিলোমিটার, দু’টি ভায়াডাক্ট যা ৮০ মিটার, ১.০২ কিলোমিটার পানি নিষ্কাশন অবকাঠামো, আরসিসি রিটেইরিং ওয়াল ২৪০ মিটার, সিসি ব্লক, ডাম্পিং ব্লক, ওয়াকওয়ে ১.০৬ কিলোমিটার এবং ৫১০ বর্গমিটার রোড মার্কিং কাজ হবে। ফ্লাইওভারের প্রস্থ ধরা হয়েছে ২১.৪ মিটার। উভয়পাশে দশ ফুট করে ফুটপাথ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এখানে চার লেনের এই ফ্লাইওভার নির্মাণে ব্যয় হবে ৩৮৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। প্রতি মিটারে ব্যয় হচ্ছে ৩০ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। যেখানে মহিপালে ছয় লেনের ফ্লাইওভার নির্মাণে প্রতি মিটারে ব্যয় হয় ২১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা বলে পরিকল্পনা কমিশন থেকে বিষয়টি পর্যালোচনা করার জন্য বলা হয়েছে।