৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


তামাক চুল্লির আগুনে পুড়ছে হাজার হাজার মণ বনের কাঠ

তামাক শুকানোর চুল্লিতে পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ : নয়া দিগন্ত -

প্রতি বছরের মধ্যে চলতি বছরেও চকরিয়া, লামা ও আলীকদম উপজেলায় বন বিভাগের অসাধু লোকজন ও তামাক কোম্পানিগুলোর সহায়তায় সহস্রাধিক তামাক চুল্লির আগুনে পোড়ানো হচ্ছে হাজার হাজার মণ কাঠ। এতে পরিবেশে ধ্বংসের পাশাপাশি উজাড় হয়ে যাচ্ছে বনজসম্পদ। তামাক চুল্লির আগুনে এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও বাড়ছে। আবার একই জমিতে বারবার তামাক চাষের ফলে জমির উর্বরাশক্তিও দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে তামাকের আগ্রাসনে এলাকায় খাদ্য উৎপাদনে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
চকরিয়া, লামা ও আলীকদম উপজেলায় যে দিকে চোখ যায় শুধু তামাকক্ষেত। বন বিভাগের পাহাড়ি জমি থেকে শুরু করে বাড়ির আঙিনার জমিতেও তামাকের চাষ করায় চলতি বছর এলাকায় খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রতি বছর উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো তামাক চাষিদেরকে নিরুৎসাহিত করলেও তামাক কোম্পানিগুলো চাষিদেরকে বিভিন্ন ধরনের লোভনীয় সুযোগ সুবিধা দেয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তারা ক্ষতিকর তামাক চাষ করে যাচ্ছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর, হারবাং, বরইতলী, সাহারবিল, ফাঁসিয়াখালী, বমু বিলছড়ি, কাকারা, লক্ষ্যারচর ও কৈয়ারবিল ইউনিয়ন, পার্শ্ববর্তী লামা উপজেলার আজিজ নগর, ফাইতং, ফাঁসিয়াখালী, চাগলখ্যায়া এবং আলীকদম উপজেলার নোয়াপাড়া, চৈক্ষং, আলীকদম সদর এলাকায় তামাক পাতা শুকানোর জন্য ইতোমধ্যে সহস্রাধিক চুল্লি নির্মাণ করা হয়েছে। এসব চুল্লি নির্মাণ করা হয়েছে বিভিন্ন বনাঞ্চলের আশপাশে আবার কোনটা বসতবাড়ি ও বিদ্যালয়ের আঙিনায়। ইতোমধ্যে তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য চুল্লিতে দেয়া আগুনের বিষাক্ত ধোঁয়ায় এলাকার পরিবেশ অসহনীয় হয়ে উঠেছে। এ ধোঁয়ায় শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের নাক দিয়ে ঢুকে তাদেরকে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত করছে। গ্রামের সাধারণ মানুষের রোগব্যাধি দ্রুত চড়িয়ে পড়ছে। যার ফলে গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল হক আজিম জানান, এলাকার অধিকাংশ মানুষ গরিব, তারা তামাক কোম্পানির কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা পেয়ে ক্ষতিকর ফসলের চাষ করে যাচ্ছে। তবে এ ক্ষতিকর তামাক চাষ পরিহার করার জন্য চাষিদেরকে বীজ-সার থেকে শুরু করে বিভিন্ন সহায়তা দেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।
এ দিকে তামাক পাতা শুকানোর জন্য ও তামাক গাছ থেকে পাতা ভাঙানো, ভাজকরা, চুল্লিতে ঢুকানোর কাজ করতে প্রতিদিন কয়েক হাজার শিশু, কিশোর ও নারীশ্রমিক কাজ করছেন। অর্থের লোভ দেখিয়ে তাদেরকে দিয়ে এ কাজে করানো হচ্ছে। আবার অনেক তামাক চাষি রয়েছেন যারা তামাক পোড়ানোর সময় তাদের শিশু সন্তানদেরকে মারাত্মক ক্ষতিকর এ কাজে ব্যবহার করছেন।
চৈত্র মাসের প্রচণ্ড গরমের দিনে তামাক চুল্লিতে কাজ করা মানিকপুর এলাকার আবুল হোসাইন জানান, চুল্লিতে তামাকের পাতা লোড করার পর আগুন দিয়ে শুকাতে হয়। তামাক পাতা শুকানোর জন্য তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। এর ওপর ভিত্তি করে পাতার গ্রেড নির্ণয় করা হয়ে থাকে। এর জন্য প্রতিটি তামাক চুল্লিতে তাপমাত্রার মিটার ব্যবহার করতে হয়। নির্দিষ্ট তাপমাত্রার বেশি হলে তৎক্ষণাৎ চুল্লিতে আগুন ধরে যায়। এতে করে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তামাক চুল্লির আগুনে অগ্নিকাণ্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানা যায়।


আরো সংবাদ



premium cement