দৌলতদিয়ায় ফেরিঘাট দখল করে প্রভাবশালীদের ব্যবসা
- মেহেদুল হাসান আক্কাছ গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)
- ০১ মার্চ ২০২১, ০০:০০
রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় প্রায় সাত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত তিনটি ফেরিঘাট দীর্ঘ দিন ধরে প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে। ঘাট কর্তৃপক্ষ ব্যবহার না করায় প্রভাবশালীরা ঘাটগুলোতে বালুর চাতাল, ট্রলারে গরু ওঠানো-নামানোসহ নানা রকমের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি আছে বলে মনেই হয় না। এতে করে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল রাজস্ব থেকে এবং ঘাটগুলো ব্যবসার কাজে ব্যবহার করায় ক্রমশ সেগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।
নদীভাঙনের কারণে দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরি পারাপারের জন্য ২০১৭ ও ২০ সালে তিনটি নতুন ফেরি ঘাটের অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাই করা হয়। কিন্তু ওই সড়কগুলো এখন আর ব্যবহার করা হয় না। অব্যহৃত সড়কগুলো স্থানীয় প্রভাবশালী মহল ক্ষমতার প্রভাব ঘাটিয়ে দখলে নিয়ে নানা ধরনের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। সড়কগুলো ব্যবহার করে তারা লাখ লাখ টাকা আয় করলেও সরকার কোনো রাজস্বই পাচ্ছে না।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের যাতায়াতের জন্য পদ্মা নদীর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট। সারা বছর এ রুটে কোটি কোটি যাত্রী ও যানবাহন পারাপার হয়ে থাকে। কিন্তু এ রুটে নির্মিত ফেরি ঘাটগুলো প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের শিকার হয়। এ কারণে এ রুটে ফেরি পারাপার স্বাভাবিক রাখতে নতুন ঘাট নির্মাণসহ পুরাতন ঘাটগুলো সংস্কার কাজের জন্য প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়। দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটে সরকারি লোকজন কোটি কোটি টাকা অপরিকল্পিত ব্যয় দেখিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৭ সালে পদ্মার তাণ্ডবে দৌলতদিয়ার সে সময়ের চারটি ফেরিঘাটই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এ সময় দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাটের পাশে ছিদ্দিক কাজীপাড়ায় প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে ১ ও ২ নম্বর দু’টি ফেরিঘাট স্থাপন করা হয়। এ জন্য তৎকালীন সময়ে ওই এলাকা থেকে শতাধিক পরিবারের বসতবাড়িও সরিয়ে দেয়া হয়। দৌলতদিয়া বিআইডব্লিউটিএ ও রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে ঘাট দু’টি নির্মাণকাজ করা হয়।
অনুসন্ধানকালে জানা যায়, ওই দু’টি ঘাট উদ্বোধনের মাত্র মাস খানেক পরই পারাপার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আর কখনো ঘাট দু’টিতে ফেরি পারাপার করা হয়নি। বর্তমানে ১নং ফেরিঘাটটি গরু-মহিষ ট্রলারে তোলার কাজে ব্যবহার করেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া ২নং ফেরিঘাটটি বিভিন্ন সিমেন্ট কোম্পানির সিমেন্ট নামানোর কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। বিনিময়ে বিআইডব্লিউটিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে থাকেন। রফিকুল নামের এক গরু ব্যবসায়ী বলেন, এই ঘাট দিয়ে গরুগুলো ট্রলারে তোলার জন্য নানা রকমের টাকা দিতে হয়।
এ ছাড়া ২০২০ সালে ব্যাপক ভাঙনে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বিআইডব্লিউটিএ ৬নং ফেরিঘাটটির পূর্ব দিকে নদীর ভাটিতে ছাত্তার মেম্বর পাড়ায় তিন কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৭ নং ফেরি ঘাটের অ্যাপ্রোচ সড়ক তৈরি করে। ওই ঘাটটি নির্মাণের জন্য প্রায় ৩০ একর ফসলি জমি অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু ফেরিঘাটটি নির্মাণ করার পর ঘাট এলাকায় নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও ওই ঘাটে পন্টুনও স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি ঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঘাটটির অ্যাপ্রোচ সড়কের দুই পাশে স্থানীয় প্রভাবশালীরা পাহাড়ের মতো উঁচু করে বালুর চাতাল বানিয়েছে। সরকারি ফেরিঘাটের সড়ক দখল করে কিভাবে বালুর চাতাল বানানো হয়েছে জানতে চাইলে বালু ব্যবসায়ীরা কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে না প্রকাশ না করার শর্তে বালু ব্যবসায়ীদের এক ম্যানেজার জানান, প্রশাসন ও ঘাট কর্তৃপক্ষের সরকারি লোকজনকে ম্যানেজ করে এ সড়ক ব্যবহার করা হচ্ছে। কাকে ম্যানেজ করা হয়েছে তাদের নাম বলতে তিনি রাজি হননি।
বিআইডব্লিউটিএর সহকারী প্রকৌশলী শাহ আলম জানান, বর্ষা মৌসুমে নদী পারের জন্য ঘাটগুলো স্থাপন করা হয়। শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর কমে যাওয়ায় ওখানে ফেরি ভিড়তে না পারায় ঘাটগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো জানান, ২নং ফেরি ঘাটে পন্টুন আছে, তবে ফেরি ভিড়তে পারে না। তা ছাড়া সহসাই ৭নং ফেরি ঘাটে পল্টুন স্থাপন করে ঘাটটিকে ফেরি চলাচল উপযোগী করা হবে। চাঁদা আদায়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, পোর্ট হিসেবে ঘাটের ইজারাদার রয়েছে। তারা কিভাবে চাঁদা আদায় করেন তা তারাই বলতে পারেন।
এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ঘাটের সড়ক দখল করে ব্যক্তি মালিকানায় যেকোনো কার্যক্রম পরিচালনা করা অন্যায়। এ ব্যাপারে ঘাট কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা