২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মাইনাস টু দিয়ে শুরু করে মাইনাস ওয়ানে খালেদা জিয়াকে রেখে দেয়া হয়েছে

মাইনাস টু দিয়ে শুরু করে মাইনাস ওয়ানে খালেদা জিয়াকে রেখে দেয়া হয়েছে - ছবি : সংগৃহীত

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালাস চেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আপিলের শুনানিতে আইনজীবী আবদুর রেজাক খান বলেছেন, কোনো একটি রাজনৈতিক ইচ্ছাই এ মামলার চালিকাশক্তি। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নি¤œ আদালতে সাজা দেয়া হয়েছে, আর জুলাই মাসের মধ্যে শেষ (আপিল শুনানি) হতে হবে নির্দেশিত হয়ে। এটাই একমাত্র মামলা, ২০১৮ সালের আপিল শুনানি হচ্ছে। তিনি বলেন, মাইনাস টু দিয়ে শুরু করে মাইনাস ওয়ানে খালেদা জিয়াকে রেখে দেয়া হয়েছে। এটা একটা রাজনৈতিক ইচ্ছার প্রতিফলন। ২০০৭ সালে দুদককে ব্যবহার করে এ মামলার এজাহার করা হয়, যা ছিল একটা ইচ্ছারই বহিঃপ্রকাশ। অথচ এই মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কিছুই পায়নি, মামলা অপ্রমাণিত।

গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো: মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে খালেদা জিয়ার আপিলের শুনানিকালে আবদুর রেজাক খান এ কথা বলেন। গতকাল মামলার ৯, ১০, ১৪ ও ১৫ নম্বর সাক্ষীর সাক্ষ্য আদালতে উপস্থান করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী আবদুর রেজাক খান ও এ জে মোহাম্মদ আলী। তাদের সহায়তা করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার নওশাদ জমির। গতকাল বেলা ২টা ২০ মিনিট থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খালেদা জিয়ার আপিলের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আজ সোমবার বেলা ২টা পর্যন্ত তা মুলতবি করা হয়েছে।
শুনানিতে আইনজীবী আবদুর রেজাক খান বলেন, কোনো সাক্ষীর মাধ্যমে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো ডকুমেন্ট রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পারেনি। তিনি বলেন, এতিমের টাকা চুরি করা হয়েছেÑ এটা বাইরের কথা, এটা কোর্টে প্রবেশ করতে দেবো না এবং এ নিয়ে আদালত বিব্রতবোধ করবে না।

শুনানির সময় আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে আরো উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, আমিনুল ইসলাম, কায়সার কামাল, রাগীব রউফ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, মো: ফারুক হোসেন, আনিছুর রহমান খান, আইয়ুব আলী আশ্রাফী, মির্জা আল মাহমুদ, রোকনুজ্জামান প্রমুখ। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ গত ৮ ফেব্রুয়ারি দেয়া রায়ে খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে গত ২০ ফেব্রুয়ারি আপিল আবেদন দাখিল করেন খালেদা জিয়া। এ আপিল গত ২২ ফেব্রুয়ারি গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। নি¤œ আদালতের দেয়া জরিমানার রায় স্থগিত করেন। এরপর ১২ মার্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। এ জামিনের বিরুদ্ধে আপিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষ। এ আবেদনে গত ১৬ মে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে দেন। তবে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে হাইকোর্টে খালেদা জিয়ার আপিল নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।

অন্য দিকে এ মামলার আসামি কাজী সলিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমদের করা আপিলের ওপরেও একই সঙ্গে শুনানির আদেশ দেন আদালত। নি¤œ আদালত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় কাজী সলিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমদকে ১০ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন। গতকাল আদালতে শরফুদ্দিনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আহসানউল্লাহ।

কুমিল্লার এক মামলায় জামিন আবেদনের আদেশ আজ : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানায় দায়ের করা মামলায় জামিন চেয়ে আবেদনের বিষয়ে আদেশের জন্য আজ সোমবার দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ সংক্রান্ত আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদেশের জন্য এই তারিখ ধার্য করেন।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও জয়নুল আবেদীন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট এম মাসুদ রানা প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

এ বিষয়ে মাসুদ রানা বলেন, এ মামলায় গত ১ জুলাই খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার দেখিয়ে জামিনের আবেদনের শুনানির জন্য ৮ আগস্ট দিন ধার্য করেন কুমিল্লার আদালত। সেখানে পুনরায় জামিন আবেদন করা হয়। সেই আবেদনের আংশিক মঞ্জুর করে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার দেখানো হলেও জামিন দেয়া হয়নি। এরপর ওই মামলায় জামিন না পাওয়ায় হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। সেই আবেদনের শুনানি শেষে সোমবার আদেশের দিন নির্ধারণ করেন আদালত।

আইনজীবীরা জানান, ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০ দলীয় জোটের অবরোধ চলাকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামে বাস পোড়ানোর ঘটনায় মামলা করা হয়। ২০১৭ সালের ২ মার্চ ওই মামলায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এই মামলা বাতিল চেয়ে গত ২৭ মে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। ওই আবেদন এখন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
উল্লেখ্য কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে হত্যা ও নাশকতার পৃথক দুই মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার জামিন প্রশ্নে জারি করা রুলের ওপর ১৬ জুলাই আংশিক শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার বেলা ২টায় এ মামলার রুলের শুনানির জন্য ধার্য রয়েছে। খালেদা জিয়ার পক্ষে রুলের শুনানি করবেন প্রবীণ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।


আরো সংবাদ



premium cement