বরিশালে মেডিক্যাল স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জমজম নার্সিং ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদুল হক তার অসুস্থ বাবাকে নিয়ে ভর্তি করেন শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে। ভর্তির পর কয়েক ঘণ্টা কেটে গেলেও দেখা পাননি দায়িত্বরত কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের। প্রাথমিকভাবে তাকে সব রকমের সেবা দিয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসক ও নার্সরা। ভর্তির এক দিন পর একজন চিকিৎসকের সেবা পান তিনি। তাতে সন্তুষ্ট হতে না পেরে পরে বাধ্য হয়ে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন সাজ্জাদুল হক।
চিকিৎসক সঙ্কটের কারণে এভাবেই ইন্টার্ন চিকিৎসক ও নার্স নির্ভরতায় চলছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার প্রধান ভরসাস্থল বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। আগামী ২০ নভেম্বর এই মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ৫০ বছরপূর্তি হতে যাচ্ছে। এই পঞ্চাশ বছরে হাসপাতালে অবকাঠামোগত তেমন কোনো উন্নয়ন না হলেও আধুনিক যন্ত্রাংশের সংযোজন, শয্যা সংখ্যার উন্নতি আর রোগীর চাপ বেড়েছে কয়েক গুণ।
কিন্তু রোগীর সংখ্যার তুলনায় এই হাসপাতালে চিকিৎসক ও সেবাদানকারী কর্মীর (তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণী) সংখ্যা বাড়েনি। আবার যেসব পদ রয়েছে তার থেকে অনেকটাই কম জনবল দিয়ে বছরের পর বছর পার করে যাচ্ছে হাসপাতালটি। বর্তমানে প্রায় ১০০ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে এখানে।
চিকিৎসক সঙ্কটের বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানানো হলেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সমাধান হয়নি। তাই ইন্টার্ন (শিানবিস) চিকিৎসক নির্ভর হয়েই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবাদানের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে।
হাসপাতালের পরিচালক ডা: বাকির হোসেন বলেন, হাসপাতালে শুধু চিকিৎসক সঙ্কট ছাড়াও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদেরও সঙ্কট রয়েছে।
তিনি বলেন, এই হাসপাতালে বর্তমানে আন্তঃবিভাগে প্রতিদিন গড়ে একে হাজার ৭৫০ জন রোগী থাকছে। আর বহির্বিভাগ থেকে তিন হাজারের মতো রোগী প্রতিদিন সেবা নিচ্ছেন। হিসাব অনুযায়ী যে সেবা দেয়ার কথা ছিল ৪৪০ জন চিকিৎসকের। কিন্তু হাজার সাজ-সজ্জার হাসপাতালে উন্নীত হলেও বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজে তার অনুকূলে এখনো পদ সৃজন করা হয়নি। তাই ৫০০ শয্যার অনুকূলে ২২৪ জন চিকিৎসকই এ হাসপাতালের জন্য এখনো বরাদ্দ।
তিনি বলেন, সেই ২২৪ জনের মধ্যে প্রায় ১০০ জন চিকিৎসকের পদই শূন্য রয়েছে। এ অবস্থায় চিকিৎসকেরা রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। তবে হাসপাতালে ১০০ জনের ওপরে থাকা ইন্টার্ন চিকিৎসকই এখন ভরসা। এদের সঙ্গে সহায়তা করে যাচ্ছেন সেবিকারা। আর হাসপাতালকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, রোগী স্থানান্তরিতকরণসহ সার্বিক কাজ করছেন তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর স্টাফরা।
পরিচালক বলেন, সবচেয়ে বড় কথা বরিশাল মেডিক্যালে রোগীরা সেবা নিয়ে, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। এখানে রোগী মৃত্যুর হার খুবই কম। বর্তমানে সেবার মান ভালো রয়েছে।
চিকিৎসক সঙ্কট নিরসন হলে সেবার মান আরো ভালো হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, নদীবেষ্টিত এলাকার জন্য এখানে চিকিৎসকেরা আসতে চান না। তবে পদ্মা সেতু হলে এ সমস্যার সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা