৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


জাতীয়তাবাদী যুব ও স্বেচ্ছাসেবক দল

কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার খবরে পদপ্রত্যাশীরা তৎপর

-

অবশেষে মেয়াদ ফুরানোর আগমুহূর্তে পূর্ণাঙ্গ হচ্ছে জাতীয়তাবাদী যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি (আংশিক)। জানা গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান উভয় সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সাথে স্কাইপে বৈঠক করে আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে যুবদল এবং ২৫ অক্টোবরের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া তালিকা জমা দিতে বলেছেন। এরপরই উভয় সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। এ দিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার খবরে পদপ্রত্যাশী ও সাবেক নিষ্ক্রিয় নেতারা সক্রিয় হচ্ছেন। তাদের অনেকেই নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সশরীরে হাজির হচ্ছেন। অনেকে মোবাইলে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে লবিং করছেন ভালো পদের আশায়। আগামীতে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনে ফের সক্রিয় হয়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে ভূমিকা রাখতে চান তারা।
যুবদল : জানা গেছে, বর্তমানে যুবদলের কেন্দ্রীয় আংশিক কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন শুধু পাঁচজন নেতা। ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি রাতে সংগঠনের কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও মহানগর দক্ষিণের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রীয় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির নেতারা হলেনÑ সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোর্ত্তাজুল করিম বাদরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান। সর্বশেষ গত ৯ অক্টোবর রাতে যুবদলের কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর নেতাদের সাথে স্কাইপে বৈঠক করেন তারেক রহমান। বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা শেষে আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা জমা দেয়ার নির্দেশ দেন তিনি। তবে এই পূর্ণাঙ্গ কমিটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি। এরপরই কাউন্সিলের মাধ্যমে যুবদলের নতুন নেতা নির্বাচন করা হবে বলে তারেক রহমান যুবদলের নেতৃবৃন্দকে নির্দেশ দেন। যুবদলের একাধিক নেতা বলেন, আগের কমিটি ছিল ২৭১ সদস্য বিশিষ্ট। সুতরাং, তারাও ২৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনে কাজ করছেন।
স্বেচ্ছাসেবক দল : জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৭ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি ঘোষণা করা হয় ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর। তিন বছরের এই কমিটির মেয়াদ শেষ হতে আর ১১ দিন বাকি। এই দীর্ঘ সময়েও কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে তারেক রহমান আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের এবং ২৫ অক্টোবরের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশ দিয়েছেন। গত সোমবার বিকেলে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ৭ নেতা এবং দুই মহানগরের চারজন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সাথে স্কাইপিতে বৈঠকে এই নির্দেশ দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতারা হলেনÑ সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সহ-সভাপতি গোলাম সারোয়ার, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদরাজ্জামান ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াছিন আলী। পরের বছর ১ মে স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। উভয় কমিটি এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশ দিলেও তা হয়নি। ফলে অ সন্তুষ্ট হয়েছেন তারেক রহমান। সোমবার বিকেলে ১১ নেতাকে ডেকে নিয়ে স্কাইপিতে কথা বলেন তিনি। এ সময় ২০ অক্টোবরের মধ্যে দুই মহানগরীর এবং ২৫ অক্টোবরের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে তার কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সভায় উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার পর ফের শীর্ষ নেতাদের সাথে কথা বলবেন তারেক রহমান। সেদিন তিনি পরবর্তী করণীয় এবং সংগঠন পরিচালনায় দিকনির্দেশনা দেবেন। কমিটি ঘোষণার পর বিভাগীয় পর্যায়ে প্রতিনিধি সম্মেলন করা হবে। দায়িত্বশীল সূত্রের দাবি, পূর্ণাঙ্গ কমিটির মেয়াদ কতদিন হবে তারেক রহমান সে বিষয়ে কিছুই বলেননি। অতি অল্প সময়ের জন্য এই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের এবারের কমিটি হবে ২০১ সদস্য বিশিষ্ট। আগের কমিটি ছিল ৩৩১ সদস্য বিশিষ্ট।
পদপ্রত্যাশীরা তৎপর : এ দিকে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার খবরে দীর্ঘ দিন পদবঞ্চিত থাকায় পদপ্রত্যাশী নেতারা সক্রিয় ও তৎপর হচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, ওয়ান ইলেভেনের জরুরি অবস্থাপরবর্তী অন্তত এগারো বছরের রাজনীতিতে খেয়ে না খেয়ে মাটি কামড়ে অনেকে পড়ে ছিলেন। অনেকেই জেল খেটে, পালিয়ে বেড়িয়ে একে একে ঝরে গেছেন। অনেকেই গত ১৩ বছর রাজনীতিতে কিছুই পাননি। অথচ দলের ঘানি টানতে টানতে তারা এখন ক্লান্ত, নিষ্ক্রিয়। হয়তো এক সময় হারিয়েই যাবেন। ছাত্রদলের বিগত তিনটি কমিটির সাবেক নেতাদের প্রায় সবারই অংশগ্রহণ আছে বিগত আন্দোলন সংগ্রামে। যারা দুঃসময়ে শতশত লোক নিয়ে মিছিল-মিটিং করেছেন। কিন্তু উভয় সংগঠনের সাবেক এবং ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের-বেশির ভাগই এখন সাংগঠনিক পরিচয়হীন। রাজনীতিতে কোনো পদ না থাকায় অলস সময় পার করছেন তারা। তবে গত ১৮ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় সামনে আশার আলো দেখছেন সাবেক ছাত্রনেতারা। দীর্ঘ দিন পদবঞ্চিত ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মিশু নয়া দিগন্তকে বলেন, অতীতে রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে আমাদের অবদান সবারই জানা। ছাত্রদল থেকে বিদায় নেয়ার পর বিএনপি বা অঙ্গ সংগঠনে আমাদের পদায়ন করা হয়নি। আমাদের মতো ছাত্রদলের বহু নেতা আছে যারা দলীয় কাজে সক্রিয় থাকতে চান। দলের হাইকমান্ডের উচিত তাদের মূল্যায়ন করা।
পদহীন ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের অন্যতম্য হলেনÑ ঢাবি ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মনির হোসেন, ঢাবি ছাত্রদলের সাবেক দফতর সম্পাদক সরদার মো: নূরুজ্জামান, টুকু-আলিম কমিটির সহ-সভাপতি আসাদুজ্জামান পলাশ, বিল্লাল হোসেন তারেক (দফতর সম্পাদক), জাবেদ হাসান স্বাধীন, শহীদুল্লাহ ইমরান, তরুণ দে, রুহুল ইসলাম মনি, জুয়েল-হাবিব কমিটির সহ-সভাপতি আহসান উদ্দিন খান শিপন, আব্দুল হালিম খোকন, আনোয়ারুল হক রয়েল, সাইদুর রহমান, সাইফুল ইসলাম, কামাল আনোয়ার আহাম্মদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মিশু, সহ-সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক রুবেল, জসীম উদ্দীন খানসহ কয়েকজন। সদ্য বিদায়ী রাজীব-আকরাম কমিটির সাবেক সহ-সভাপতিদের মধ্যে- এজমল হোসেন পাইলট, মহিদুল হাসান হিরু, আলমগীর হাসান সোহান, নাজমুল হাসান, মনিরুল ইসলাম মনির, মামুন বিল্লাহ, সাদিউল কবির নীরব, আব্দুল ওহাব, নিয়াজ মাখদুম মাসুম বিল্লাহ, ইসতিয়াক নাসির, ইখতিয়ার রহমান কবির, আহমেদ সাইমুম, জহিরুল ইসলাম বিপ্লব, আবু আতিক আল হাসান মিন্টু, জয়দেব জয়, তরিকুল ইসলাম টিটু, ফেরদৌস মুন্না, খন্দকার এনামুল হক, মুকিত ভূঁইয়া লিঙ্কন ও মনিরা আক্তার রিক্তা, যুগ্ম সম্পাদকদের মধ্যে আসাদুজ্জামান আসাদ, মিয়া মো: রাসেল, আবুল হাসান, নূরুল হুদা বাবু, আব্দুল করিম সরকার, মফিজুর রহমান আশিক, বায়েজীদ আরেফিন, সামসুল আলম রানা, কাজী মোকতার হোসেন, মির্জা ইয়াসিন আলী, সেলিনা সুলতানা নিশিতা, মেহবুব মাসুম শান্ত, ওমর ফারুক মুন্না, শফিকুল ইসলাম শফিক, সহ-সাধারণ সম্পাদক আরিফা সুলতানা রুমা, নাসিমা আক্তার কেয়া, রাজিব আহসান চৌধুরী পাপ্পু, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রেদওয়ান বাবু, মো: উজ্জ্বল হোসেন, শাহীনুর বেগম সাগর, আমীর আমজাদ মুন্না, কাজী ইফতেখারুজ্জামান শিমুল, নাদিয়া পাঠান পাপন, সঞ্জয় দে রিপন, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভুঁইয়া, আন্তর্জাতিক সম্পাদক রাশিদুল ইসলাম রিপন, সমাজসেবা সম্পাদক আব্দুর রহিম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আহসানুল হক শুভ্র ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক আরজ আলী শান্ত অন্যতম। সাবেক নিষ্ক্রিয় নেতাদের মধ্যে সক্রিয় হচ্ছেন মাইন উদ্দিন তিতাস, মো: হুমায়ুন কবির চৌধুরী, কাজী শাহিনুল হক ও গিয়াস হায়দারসহ অনেকেই।

 


আরো সংবাদ



premium cement