১৬ মে ২০২৪, ০২ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫
`


বীমা দাবি পরিশোধে কোনো ফি বা চার্জ নেয়া যাবে না

-

- ৯০ দিনের মধ্যে দাবি নিষ্পত্তি করতে হবে
- ‘বীমা দাবি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গাইডলাইন্স ২০২৪’ প্রণয়ন

এখন থেকে বীমা দাবি পরিশোধে কোনো কমিশন, ফি বা সার্ভিস চার্জ নিতে পারবে না বীমা কোম্পানিগুলো। শুধু তাই নয়, গ্রাহকদের বীমা দাবি দ্রুত নিষ্পত্তিতে প্রতিটি ধাপে কার্যক্রমের সময়সীমা নির্ধারণ করে দিতে হবে। যাতে দাবি নিষ্পত্তিতে ভুক্তভোগীদের দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করতে না হয়। এ ক্ষেত্রে বীমা গ্রাহক কর্তৃক সর্বশেষ কাগজ দাখিলের পর থেকে ৯০ দিনের মধ্যে দাবি নিষ্পত্তি করতে হবে। এবং গ্রাহকদের ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে টাকার অঙ্কসহ তথ্য প্রেরণ করতে হবে।
বীমা দাবিপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা ও ভোগান্তি কমিয়ে যতদ্রুত সম্ভব দাবিপ্রাপ্তিসহ বীমা গ্রাহকদের স্বার্থ নিশ্চিত করতে ‘বীমা দাবি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গাইডলাইন্স ২০২৪’ প্রণয়ন করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। গত রোববার এই গাইড লাইনটি প্রকাশ করা হয়েছে।

জানা গেছে, প্রণীত এ গাইডলাইন্স বীমা প্রতিষ্ঠান; পুনঃবীমাকারী; জরিপকারী বা বীমা এজেন্ট বা বীমা মধ্যস্থতাকারী বা বীমা পরিষেবা প্রদানকারী; বীমা গ্রাহক এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য হবে। বীমাকারী প্রতিষ্ঠানকে পলিসি ও দাবিবিষয়ক রেজিস্টার সংরক্ষণ করতে হবে।
গাইডলাইন্স অনুযায়ী, প্রতিটি বীমাকারী প্রতিষ্ঠান আইন, বিধি-বিধান এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার আলোকে বীমা দাবি ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করে নিজস্ব একটি ম্যানুয়াল তৈরি করবে এবং তা বীমা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।

বীমাকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রণীতব্য ম্যানুয়ালে যেসব বিষয় আবশ্যিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে সেগুলো হচ্ছে- গ্রাহক কর্তৃক দাবি উত্থাপন থেকে নিষ্পত্তি পর্যন্ত প্রয়োজনীয় কার্যক্রম ও প্রতিটি ধাপের সময়সীমা। প্রতিটি ধাপে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং কার্যক্রম পদ্ধতির সুস্পষ্ট ও সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। বীমা দাবি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ কার্যক্রমের স্পষ্ট ও সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। সহজ ও স্পষ্টভাবে প্রতিটি পলিসির দাবি নিষ্পত্তির ফরম বা টেমপ্লেট। বীমা দাবি নিষ্পত্তির যেসব ক্ষেত্রে জরিপকারী নিয়োগ করা প্রয়োজন, সেসব ক্ষেত্রে দ্রুত জরিপকারী নিয়োগ ও তদন্ত পদ্ধতি। কোনো পর্যায়ে আপিল বা পুনঃবিবেচনার সুযোগ থাকলে সে বিষয়ে বীমাগ্রহীতাকে অবহিতকরণের পদ্ধতি এবং পুনঃবীমা ও প্রত্যর্পণ বীমার অর্থ যতদ্রুত সম্ভব সংগ্রহ করে বীমা দাবি পরিশোধের ব্যবস্থার নিশ্চিত কার্যক্রম।

এর পাশাপাশি বীমা দাবি পরিশোধে আরো কিছু নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- বীমাকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক যৌক্তিক কারণ ছাড়া বীমা চুক্তিতে উল্লিখিত কাগজাদি ছাড়া অন্য কোনো দলিলাদি বীমা গ্রাহকের কাছে চাওয়া যাবে না এবং বারবার দলিলাদি চাওয়া যাবে না। যেসব ক্ষেত্রে জরিপকারী নিয়োগ বা তদন্তের প্রয়োজন নেই, সে ক্ষেত্রে অবিলম্বে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বীমা দাবি পরিশোধ পদ্ধতি ম্যানুয়ালে উল্লেখ এবং সে অনুযায়ী কার্যক্রম নিশ্চিত করতে হবে। বীমা দাবি পরিশোধে কোনো কমিশন বা ফি বা সার্ভিস চার্জ আদায় করা যাবে না। বীমা গ্রাহক কর্তৃক সর্বশেষ দলিলাদি দাখিলের পর আইন অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে বীমা দাবি পরিশোধ করতে হবে। বীমা দাবি পরিশোধ হলে তাৎক্ষণিকভাবে বীমা গ্রাহকের মোবাইলে বীমা দাবিতে প্রাপ্য অর্থের পরিমাণসহ মেসেজ দিতে হবে।

প্রণীত গাইডলাইন্সে বীমা গ্রাহকের করণীয় বিষয়ে বলা হয়েছে, ক্ষতি বা দুর্ঘটনার সাথে সাথেই বীমা চুক্তিতে উল্লিখিত সময়ের মধ্যে দ্রুত বীমাকারী প্রতিষ্ঠানকে অবহিত করা এবং সংশ্লিষ্ট কাগজাদি দাখিল করা; বীমা গ্রহীতাকে বীমাকারী প্রতিষ্ঠান বা জরিপকারীর কাছে দাখিলকৃত সব দলিলাদির সপক্ষে প্রাপ্তি স্বীকার নিতে হবে এবং সেটি প্রমাণিক হিসেবে সংরক্ষণ করতে হবে। বীমা গ্রাহককে প্রকৃত ঘটনার সঠিক বর্ণনা দিতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ কিংবা ভুয়া দলিলাদি প্রদান থেকে বিরত থাকতে হবে। বীমা দাবি উত্থাপনের পর বীমা দাবি নিষ্পত্তির আগে বীমা গ্রাহক বীমাকারী প্রতিষ্ঠান কিংবা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে জরিপকারীকে প্রয়োজনীয় পরিদর্শন পরিচালনা ও ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়নের সুযোগ ও এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবেন। দাবি নিষ্পত্তির পর ক্ষতিপূরণ অপর্যাপ্ত হওয়া বা অন্য কোনো উপযুক্ত কারণে আইন অনুযায়ী বীমা গ্রাহক প্রয়োজনে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বা আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement