০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫
`


আজ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু : ঘুনধুম সীমান্ত দিয়ে যাবে ১৫০ জন

জোর করে না পাঠানোর দাবি রোহিঙ্গাদের
-

অবশেষে বহুল কাক্সিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হতে যাচ্ছে। মিয়ানমার-বাংলাদেশ সমন্বয়ে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সিদ্ধান্ত মতে আজ বৃহস্পতিবার দেড় শ’ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হচ্ছে। ঘুনধুম স্থলসীমান্তে ৩০ পরিবারের ১৫০ জন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের ক্যাম্প থেকে হস্তান্তর করা হয়েছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম বলেছেন, প্রথমে টেকনাফের কেরুনতলী ঘাট দিয়ে নাফ নদ পার হয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও পরে মিয়ানমারের সাথে আলাপ করে সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে।
এ দিকে রোহিঙ্গারা বলেছেন, তাদেরকে জোর করে যেন মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো না হয়। সে অনুযায়ী আজ দুপুরের দিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুনধুম পয়েন্টে স্থলপথ দিয়েই প্রত্যাবাসন করার কথা। প্রথম দিন ৩০ পরিবারের ১৫০ জনকে প্রত্যাবাসনের যাবতীয় ভৌত প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে ইউএনএইচসিআরের রিপোর্ট পেলে চূড়ান্ত সিদ্বান্ত জানা যাবে বলে জানান তিনি।
বুধবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, মিয়ানমার আমাদের জানিয়েছে, তারা যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এমনকি প্রত্যাবাসনের সময় সে দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীও উপস্থিত থাকতে পারেন।
আনুষ্ঠানিকতা কী হতে পারে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এদিক থেকে পাঠাব, তারা ওই দিকে থেকে গ্রহণ করবে। এ ছাড়া ভেরিফিকেশনের কিছু বিষয় আছে।
তবে জাতিসঙ্ঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সম্মতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে তারা এখনো কিছু জানাননি। আমরা সেই রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছি। তাদের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত সিদ্বান্ত জানা যাবে। প্রত্যাবাসনের জন্য টেকনাফের কেরুনতলী ট্রানজিট ক্যাম্প প্রস্তুত করা হয়েছে। অপর দিকে বান্দরবানের ঘুমধুমে আরো একটি ট্রানজিট ক্যাম্প প্রায় সম্পন্নের পথে।
গতকাল সারা দিন সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, জাতিসঙ্ঘের বিভিন্ন সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধির সাথে একের পর এক বৈঠক করেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম। পরে বিকেল ৫টায় নিজস্ব কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করার জন্য মিয়ানমারও পুরোপুরি প্রস্তুত। আনুষ্ঠানিক প্রত্যাবাসনের সময় ঘুমধুম ট্রানজিট ক্যাম্পের ওপারে মিয়ানমার সরকারের একজন মন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছে তারা।
রোহিঙ্গারা ‘প্রত্যাবাসনের’ বিষয়ে গত কয়েক দিনে জাতিসঙ্ঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরকে অবগত করেছে। তারা ইউএনএইচসিআরকে কী বলেছে সে বিষয়ে এখনো অবগত নয় সরকার।
সূত্র জানায়, টেকনাফ কেরুনতলী ঘাটে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য তৈরি হয়েছে ৩৩টি ঘর ও একটি জেটিঘাট। একইভাবে এই ঘাটটির মতো ঘুমধুমে আরো একটি ঘাটে তৈরি হয়েছে ৫৭টি ঘর। এসব ঘাট দিয়ে আজ শুরু হবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়া। তবে জোরপূর্বক মিয়ানমারের ঠেলে না দিতে ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা দাবি জানিয়েছে। গত সোমবার জাদিমুরা ও শালবাগান ক্যাম্পের রাস্তায় বিক্ষুব্ধ রোহিঙ্গারা বলেন, আমাদের দাবি মিয়ানমার সরকার মেনে নেয়নি। এ মুহূর্তে মিয়ানমারে ফিরে গেলে ‘আমরা বিচার পাবো না, নাগরিক অধিকার পাবো না, নিজেদের ভিটেমাটি ফেরত পাবো না, সৈন্যরা আবার আমাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালাতে পারে, সেখানে আমাদের নিরাপত্তা নেই। আমাদেরকে অপরাধী বানিয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করবে। তাই আমাদের জোর করে মৃত্যুপুরী রাখাইনে ঠেলে দেবেন না।’ রোহিঙ্গারা আরো বলেন, ‘আমাদের দাবি মিয়ানমার সরকার মেনে নিলে আমরা স্বেচ্ছায় ফিরে যাবো। মাতৃভূমি ফেলে বাংলাদেশ থাকার ইচ্ছা আমাদের নেই।’
টেকনাফের উনচিপ্রাং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের (ক্যাম্প-১) আমিন জানান, ‘আমাদেরকে কোনো কিছু স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে না। আমাদের কিছু দাবি আছে সেগুলো পূরণ না হলে কোনো অবস্থাতেই ফেরত যাবো না। কারণ দাবি পূরণ না হলে সে দেশে (মিয়ানমার) গিয়ে আবারো নির্যাতনের মুখে পড়তে হবে আমাদের।’ দাবিগুলোর বিষয়ে তিনি জানান, তাদেরকে প্রথমত জাতীয়তা সনদ দিতে হবে। সেই দেশে নিরাপদভাবে বসবাসের নিশ্চয়তা দিতে হবে। সেখানে গিয়ে ক্যাম্পে না, নিজস্ব বসতভিটায় বসবাসের সুযোগ দিতে হবে এবং তাদের ওপর চালানো নির্যাতন-গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
একই ক্যাম্পের সি-ব্লকের বাসিন্দা মো: কাশেম (৪৫) ও বি-ব্লকের নুরুল হক জানান, কয়েক দিন আগে মাঝি (রোহিঙ্গা নেতা) মাহাদু তাদেরকে প্রত্যাবাসন তালিকায় নাম আছে বলে জানিয়েছে। কিন্তু এখন তারা ফেরত যেতে প্রস্তুত নয়। আগে তাদের দাবিগুলো সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে হবে।
মিয়ানমারের পররাষ্ট্রসচিব মিন থোয়ে গত ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশ সফরে এসে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, প্রত্যাবাসনের পর রোহিঙ্গাদের প্রথমে মংডু শহরে স্থাপিত আইডিপি ক্যাম্পে নেয়া হবে। এরপর নিজেদের গ্রামে ফেরত যেতে পারবে। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ মানবিক বিষয়গুলো নিশ্চিত করারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

 


আরো সংবাদ



premium cement