২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
কুলাউড়ায় ট্রেন দুর্ঘটনা

শুধু গতানুগতিক তদন্ত নয়

-

দেশে রেলপথে যাতায়াত তুলনামূলক নিরাপদ ও সাশ্রয়ী। এ জন্য প্রচুর যাত্রী ট্রেনে যাতায়াত করে থাকেন আজো। সড়কে বিশৃঙ্খল অবস্থা থাকায় হরহামেশা দুর্ঘটনায় পতিত হয় গণপরিবহন। নদীপথেও লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটছে অহরহ। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে লোকজন ট্রেনে যাতায়াতকে পছন্দের তালিকায় রাখেন এক নম্বরে। তবে আমাদের দেশে চাহিদা অনুযায়ী যে পরিমাণ রেলযোগাযোগ থাকা প্রয়োজন, তা নেই। ব্রিটিশ আমলে সূচিত এ দেশের রেলযোগাযোগ যেমন ছিল, এখনো সেই পর্যায়ে বয়ে গেছে। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী এর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন হয়নি। রেলগাড়ি ও রেলপথের যথাযথ সংস্কার না হওয়া এবং তত্ত্বাবধান না করায় এখন এটিও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে আগের মতো রেল ভ্রমণ আর নিরাপদ নেই। অথচ এ খাতে সরকার বিপুল বরাদ্দ দিয়ে থাকে। কিন্তু আকণ্ঠ দুর্নীতি ও অনিয়মে ডুবে থাকায় এর সুফল মিলছে না। অতীতে দেশে ট্রেন দুর্ঘটনা খুব বেশি হয়নি। কিন্তু এখন ঘন ঘন ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটছে।
গত রোববার রাত সাড়ে ১১টায় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল এলাকায় রেলপথের একটি ছোট খালের কালভার্ট ভেঙে উপবন এক্সপ্রেসের পাঁচটি বগি পানিতে পড়ে যায়। এ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় আহত এক যাত্রী জানিয়েছেন, ট্রেনের নিচে অনেক লাশ চাপা পড়ে আছে। তাই হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে দুর্ঘটনায় আহত অন্তত ৬০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত ২০ জনকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। উপবন এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় হতাহতদের দেখতে হাসপাতালে ভিড় করেন হাজার হাজার মানুষ। সেখানে স্বজনেরা নিখোঁজ আত্মীয়দের খোঁজে এসে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
অতিরিক্ত গতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে কি না, তা এখনো জানা যায়নি। এ দুর্ঘটনার বিষয়ে রেলওয়ের প্রধান মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারকে (পূর্ব) প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার সময় রেলের গতি অনেক বেশি ছিল। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি খতিয়ে দেখবে। তদন্ত কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
আমরা দেখেছি, দেশে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে গৎবাঁধা পদ্ধতিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু ঘটনার কারণ, দায় এবং করণীয় সম্পর্কে তদন্ত কমিটি কী প্রতিবেদন দাখিল করেছে, সে বিষয়ে দেশবাসী থাকে অন্ধকারে। প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়, তাও থাকে অজানা। তাই আমরা জোর দিয়ে বলব, কুলাউড়ায় ট্রেন দুর্ঘটনা নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন যথাসময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশ করে দেশবাসীকে জানানোর উদ্যোগ নিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। তদন্ত কমিটির গতানুগতিক নিয়ম রক্ষার জন্য লোক দেখানো কোনো প্রতিবেদন দাখিল করা উচিত হবে না। বরং প্রকৃত কারণ উদঘাটনে তদন্ত করতে হবে। সেই আলোকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে। আমরা এটাও আশা করি, এই ট্রেন দুর্ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবারকে যথাযথ আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের সরকারি খরচে পর্যাপ্ত সুচিকিৎসার উদ্যোগ নেবে সরকার।
আমাদের চাওয়া, দেশের রেলপথ ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে ঝুঁকিমুক্ত করে এর হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে যথাসাধ্য পদক্ষেপ নেবে সরকার। তা না হলে সড়ক ও নৌপথের মতো রেলপথও যদি অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে, তাহলে ঝুঁকিমুক্ত আর কোনো যাতায়াতের পথ থাকবে না এ দেশে। এটি সবার জন্যই হবে অসুবিধাজনক।


আরো সংবাদ



premium cement
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভিসা সহজ করার আহ্বান প্রবাসী প্রতিমন্ত্রীর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে অংশীদার হওয়া উচিত : শি জিনপিং ওকাব সভাপতি নজরুল ইসলাম, সম্পাদক জুলহাস আলম পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে চুয়েট ১১ মে পর্যন্ত বন্ধ, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত নরসিংদীতে হিট স্ট্রোকে শিশুর মৃত্যু হিলিতে ভটভটি-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ২ ‘গাজার ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করতে ১৪ বছর লাগতে পারে’ সখীপুরে ছাগল চুরির মামলায় মা-ছেলে কারাগারে ‘অন্যায়ের সাথে নয়া দিগন্তের সাংবাদিকরা কখনোই আপোষ করেন না’ রাজশাহীতে হলে ঢুকতে না দেয়ায় রাস্তায় বিসিএস পরীক্ষার্থীর কান্না

সকল