২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
১৪ ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ৬০ হাজার কোটি টাকা

বিপর্যস্ত ব্যাংক খাত

-

খেলাপি ঋণ সমস্যা যেন এক চিরাচরিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের জন্য। ক’দিন পরপর গণমাধ্যমে খেলাপি ঋণসংক্রান্ত নানা উদ্বেগজনক খবর প্রকাশিত হচ্ছে অনবরত। এ জন্য কোন ব্যাংক দায়ী, কারা এসব ব্যাপক ঋণখেলাপি তা উল্লেখ থাকে এসব প্রতিবেদনে। কিন্তু এর জন্যও দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনতে দেখা যায়নি এবং খেলাপি ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে এসব খেলাপি ঋণ আদায়ের ঘটনাও তেমন ঘটছে না। ফলে খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি দিন দিন আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে।
সহযোগী একটি দৈনিক গতকাল এক খবরে জানিয়েছে, দেশের ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণের ভারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ১৪টি ব্যাংক। এই ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬০ হাজার কোটি টাকা, যা দেশের মোট খেলাপি ঋণের ৬৮ শতাংশের সমান। এর মধ্যে আদায়যোগ্য কুঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের ৮৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। এসব খেলাপি ঋণের বিপরীতে ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য ব্যাংকগুলোকে প্রায় ৫৭ হাজার কোটি টাকা প্রভিশন বাবদ বাংলাদেশ ব্যাংকে রাখতে হয়েছে। খেলাপি ঋণ ও প্রভিশন মিলে এসব ব্যাংকের প্রায় এক লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকার তহবিল আটকে রয়েছে। এসব অর্থ থেকে ব্যাংকগুলোর কোনো আয় আসছে না, উল্টো এসব অর্থের ব্যবস্থাপনায় অর্থ খরচ হচ্ছে। এ খাতে স্থগিত সুদ বাবদ রয়েছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। এ অর্থ ব্যাংক আয় খাতে নিতে পারছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি করা ‘বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ পর্যালোচনা পরিস্থিতি’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। গত মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের বিপরীতে রাখা প্রভিশন ও স্থগিত সুদের তথ্য পর্যালোচনা করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
প্রতিবেদনে ১৪ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের তিনটি ব্যাংকের খেলাপির হার কম হলেও পরিমাণে তাদের খেলাপির পরিমাণ বেশি। তিনটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার খুবই উদ্বেগজনক। বাকি আট ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ২০ শতাংশের চেয়ে বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, কোনো ব্যাংকে ৫ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ হলে তা ঝুঁকিপূর্ণ। এ হার ৩ শতাংশের মধ্যে থাকা স্বাভাবিক। সেখানে ১৪ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার এর চেয়ে অনেক বেশি। যেসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণের হার খুব বেশি, সেসব ব্যাংকে বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নির্দেশনা দেয়া হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো তা মানছে না। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও তাদের বিরুদ্ধে এ জন্য কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংক দাবি করছে, তারা এ ব্যাপারে ব্যাংকগুলোর ওপর কঠোরভাবে নজরদারি রাখছে। প্রশ্ন হচ্ছেÑ কঠোর নজরদারি কায়েম থাকলে ব্যাংকগুলো তা কী করে অমান্য করে চলে? খেলাপি ঋণের ছড়াছড়ি যেসব ব্যাংকে, সেগুলোর মধ্যে সরকারি খাতের ব্যাংকই বেশি।
অপর দিকে নয়া দিগন্ত গতকাল এক খবরে জানিয়েছে, বড় শিল্প গ্রুপের হাতে বন্দী হয়ে পড়ছে ব্যাংক খাত। উদ্দেশ্য ছিল বিশেষ সুবিধা নিয়ে ঋণ পুনর্গঠনের মাধ্যমে শিল্প গ্রুপগুলো লোকসান কাটিয়ে উঠবে। একই সাথে প্রতিষ্ঠানগুলো চালু রেখে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ করবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ঋণ পুনর্গঠনের সুবিধা নেয়ার পর প্রতিষ্ঠানগুলো তা পরিশোধ করতে পারছে না। যে পরিমাণ ঋণ পুনর্গঠন করা হয়েছিল, তা পরিশোধ না করায় সুদ-আসলে ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, উচ্চ আদালত থেকে খেলাপি ঋণের ওপর স্থগিতাদেশ নিয়ে বড় বড় গ্রুপ ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা নিচ্ছে।
আমরা মনে করি, জাতিকে খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি থেকে বের করে আনতে হবে। এ জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে? সেই সাথে বড় ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ জন্য শাস্তির আওতায় আনা দরকার। মনে রাখতে হবে, ঋণখেলাপিরা কার্যত আমাদের ব্যাংক খাতকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এভাবে ব্যাংক খাত চলতে পারে না। এ জন্য জরুরি পদক্ষেপ নিয়ে মাঠে নামতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককেই।


আরো সংবাদ



premium cement