যানজটে বছরে আর্থিক ক্ষতি ৩৭ হাজার কোটি টাকা

যানজটের কারণে রাজধানী ঢাকায় একটি যানবাহন ঘণ্টায় যেতে পারে গড়ে ৫ কিলোমিটার। অথচ একযুগ আগেও এই গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। বর্তমানে যানজটে শুধু ঢাকায় দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা অপচয় হচ্ছে। যার আর্থিক ক্ষতি বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। একটি দেশ বা শহরের জন্য এ অবস্থা খুবই উদ্বেগ- উৎকণ্ঠার বলে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন।
রাজধানীর ফার্মগেটে অবস্থিত খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ (কেআইবি) আয়োজিত ‘দ্য ফিউচার প্ল্যানিং আরবান ট্রান্সপোর্টেশন ইন ঢাকা’ শীর্ষক সেমিনারে গতকাল এসব তথ্য তুলে ধরেন বক্তারা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, শহরের সমস্যা সমাধানে ক্ষমতা ও দায়িত্ব বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। আমরা বিকেন্দ্রীকরণের চেষ্টা করেও অনেকটা ব্যর্থ হয়েছি। আমাদের রেল ও স্টিমারের অফিস করা হয়েছিল চট্টগ্রাম ও বরিশালে; কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। কারণ কর্তাব্যক্তিরা সবাই ঢাকায় বসে কাজ করতে চান। কাজেই শুধু অফিস বিকেন্দ্রীকরণ করলে হবে না, অফিসের যে মূল বিষয় সেই ফান্ড বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।
রিহ্যাবের সাবেক সভাপতি ও মুক্ত আকাশের উপদেষ্টা সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আবদুল আউয়ালের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য দেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির (বিএসিআই) সভাপতি প্রকৌশলী এস এম খোরশেদ আলম এবং মুক্ত আকাশের সম্পাদক ও প্রকাশক প্রকৌশলী মো: সামসুল আলম প্রমুখ। সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আরবান হ্যাবিট্যাট কনসালট্যান্টসের চেয়ারপারসন স্থপতি পরিকল্পনাবিদ তানউইর নেওয়াজ।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দায়িত্ব বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। সিলেট বিভাগের দায়িত্ব সিলেটেই শেষ করতে হবে, রংপুর বিভাগের দায়িত্ব¡ রংপুরে রাখতে হবে। এটি যদি আমরা সাহসের সাথে করতে পারি, তাহলেই এ সমস্যা কিছুটা হলেও সমাধান করতে পারব বলে আশা করছি। তিনি বলেন, শুধু অফিস বিকেন্দ্রীকরণ করলে হবে না, অর্থনীতিকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। এগুলো করতে পারলেই শহরের সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে বলে আমি মনে করি।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমরা অনেকটাই দুর্বল। পরিকল্পনা করি, কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করতে পারি না। এগুলো সবার সহযোগিতা নিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে। গণতন্ত্রকে সম্মান করতে গেলে গণতন্ত্রের কাটা সহ্য করতে হবে। রাজধানীর জ্যাম গণতন্ত্রের জন্য কাটা। এগুলোকে সমন্বয় করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সামান্য দূরত্বের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতেও মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ ও সময়ের অপচয় এখন অস্বাভাবিক মাত্রায় পৌঁছেছে। হাঁটার গতির ন্যায় ঘণ্টায় প্রায় ৫ কিলোমিটারে নেমে এসেছে যন্ত্রচালিত যানবাহনের গতি। সাম্প্রতিককালের গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, যানজটে শুধু ঢাকায় দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা অপচয় হচ্ছে। যার আর্থিক ক্ষতি বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। এটি নিঃসন্দেহে একটি দেশ বা শহরের জন্য উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বিষয়।
বক্তারা বলেন, রাজধানীতে প্রতিদিন লোকের সংখ্যা বাড়ছে। বিদ্যমান যানবাহনের সাথে সংযুক্ত হচ্ছে বিপুলসংখ্যক নতুন নতুন যানবাহন। কিন্তু সড়কের বেহালদশা ও সংখ্যা থেকে যাচ্ছে আগের মতোই। সরকারের ভিশনারী প্রকল্পগুলো বিশেষ করে, মেট্রোরেল স্থাপনের কাজ চলমান থাকায় নগরবাসীর দুর্ভোগ অবর্ণনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। চলমান পরিস্থিতি উত্তরণে যেসব পরিকল্পনা বা সুপারিশ গৃহীত হয়েছে বা হচ্ছে তার বেশির ভাগই স্বল্পমেয়াদি ও অদূরদর্শী। সমন্বিত পরিকল্পনা উল্লেখযোগ্যভাবে দৃশ্যমান নয়। সারা দেশে যাত্রীবান্ধব গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ব্যর্থ হওয়ায় যাত্রীসেবার মানও তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। বাড়ছে দুর্ঘটনার সংখ্যা। চলমান হতাশাজনক প্রেক্ষাপটে এ সেমিনার কিছুটা হলেও আলোর পথ দেখাবে। ইতিবাচক পথরেখার সন্ধান মিলবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ রকম একটি সেমিনারের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম বলে সেমিনারে উপস্থিত সবাই স্বীকার করেন।