২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

না’গঞ্জে অহরহ গ্যাস দুর্ঘটনায় উদ্বেগ এক বছরে দগ্ধ হয়ে নিহত ১৩

দগ্ধ অর্ধশত মানুষ এখনো শারীরিক সমস্যায় ; অবৈধ গ্যাস সংযোগের ছড়াছড়ি
-

নারায়ণগঞ্জে একের পর এক গ্যাস দুর্ঘটনায় উদ্বিগ্ন মানুষ। গ্রাহকের সচেতনতার অভাবের পাশাপাশি ঠিকমতো গ্যাস সরবরাহ না থাকা কিংবা অবৈধ গ্যাস সংযোগের কারণে দুর্ঘটনার প্রবণতা বৃদ্ধির কারণ বলছেন অনেকে। তারা বলছেন, বারবার একই রকম দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রায় ঘটনাই ঘটেছে ঘরে জমে থাকা গ্যাসের কারণে।
গত এক বছরে গ্যাসের আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন ১৩ জন। গ্যাসের আগুনে পুড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশত। এদের অনেকে এখনো শারীরিক সমস্যা নিয়ে ধুঁকছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, এলাকায় গ্যাস সরবরাহ অনিয়মিত। কখনও গ্যাস পাওয়াই যায় না। আবার কখনও থাকে না চাপ। তাই চুলা জ্বালানোর চেষ্টা থেমে যায় মাঝপথে। কেউ কেউ গ্যাসের চাপ আসার অপেক্ষা করেন। তাই অনেকেই সময়মতো চুলা বন্ধ করেন না বা বন্ধ করতে ভুলে যান। এ ধরনের প্রবণতা বাড়াচ্ছে দুর্ঘটনা।
তবে দুর্ঘটনা এড়াতে গ্রাহকদের সচেতন হওয়ার বিকল্প দেখছে না পুলিশ। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও দায়িত্বশীল হওয়ার তাগিদ আসছে।
সবশেষে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে সিদ্ধিরগঞ্জের সাহেবপাড়া এলাকায় ফ্যাট বাসায় গ্যাসের আগুনে পুড়ে মারা গেছে মা ও ছেলে। গত সোমবার ভোরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আটজন দগ্ধ হন। এর মধ্যে গত সোমবার সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নূর জাহান বেগম (৬০)। গত মঙ্গলবার ঢাকা মেডিক্যালে মারা যান নূর জাহান বেগমের ছেলে কিরণ মিয়া। অগ্নিদগ্ধ বাকি ছয়জন একই হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, গত সোমবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের সাহেবপাড়া এলাকায় ফারুক হোসেনের মালিকানাধীন পাঁচতলা ভবনের নিচতলার ভাড়াটে কিরণ মিয়ার ফ্যাটে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। সেখানে আগুন লেগে দগ্ধ হন ওই পরিবারের দুই শিশুসহ আটজন। আগুনে ওই ফ্যাটের সব আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। প্রতিবেশীরা দগ্ধ ব্যক্তিদের উদ্ধার করে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করেন। গ্যাস না থাকায় রাতে ভুলবশত গ্যাসের চুলা খুলে রাখে ওই পরিবারের লোকজন। রাতে গ্যাস এলোও চাবি খোলা থাকায় পুরো ফ্যাটে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। সকালে চুলায় আগুন ধরাতে গেলে বিস্ফোরণ ঘটে।
গত ৭ জানুয়ারি ফতুল্লায় কায়েমপুর একটি বাড়িতে গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণে দম্পতি দগ্ধ হয়েছেন। দগ্ধরা হলেনÑ শরীফ ও তার স্ত্রী ফরিদা বেগম। দগ্ধ ফরিদার শরীরের ৮০ ভাগ পুড়ে যায়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থা মারা যান ফরিদা বেগম। দগ্ধ শরীফ এখনো অসুস্থ।
গত ২ জানুয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জে একটি ফ্যাট বাসায় গ্যাসের চুলা থেকে জমা থাকা গ্যাসের বিস্ফোরণে অগ্নিকাণ্ডের স্বামী-স্ত্রীসহ একই পরিবারের তিনজন দগ্ধ হয়েছেন। দগ্ধদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। দগ্ধরা হলেনÑ কবির হোসেন (৬৫), তার স্ত্রী রেখা বেগম (৫৫) ও মেয়ে সুফিয়া (২৮)।
গত বছর ২৭ জুলাই রূপগঞ্জে একটি কারখানায় গ্যাস পাইপ লাইনে বিস্ফোরণের ঘটনায় মো: এবাদত (৩৮) নামের একজন নিহত হয়েছেন। একই সময় আরও চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতরা হলেনÑ আতিকুল্লাহ মিঠু (৩৮), মহসিন আলী (২৯), আবু তাহের (৩২) ও বাবুল মিয়া (৪৫)।
গত বছর ১০ জুন ফতুল্লায় একটি বাড়িতে গ্যাসের চুলার লিকেজ থেকে আগুন লেগে বাবা ও মেয়েসহ একই পরিবারের চারজন দগ্ধ হয়েছে। দগ্ধদের গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। দগ্ধরা হলেনÑ বাড়ির মালিক আবদুল আলীম, তার মেয়ে শিউলি বেগম, দুই নাতনী তানজিলা ও জ্যোতি।
গত বছর ২২ এপ্রিল রূপগঞ্জ থানার সাওঘাট এলাকায় একটি বাসায় গ্যাসের লাইন বিস্ফোরণ ঘটে চারজন নিহত হয়েছেন। গ্যাসের হাইপ্রেসার পাইপলাইন থেকে নেয়া অবৈধ সংযোগের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিরা হলেনÑ রাকিব (২৫), শামীম (৩০), আরিফুর রহমান (৩৬), তরিকুল ইসলাম (২৮)। নিহতরা স্থানীয় নেক্সট এক্সেসরিজ লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।
গত বছর ৭ এপ্রিল ফতুল্লার গিরিধারা এলাকায় এক বাড়িতে গ্যাসের আগুনে একই পরিবারের মা-ছেলেসহ চারজন দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। নিহতরা হলেনÑ ফাতেমা বেগম (৩০), বড় ছেলে সাইফ আলী বেগম (১৫), মেয়ে ফারিহা আক্তার ফারজানা (১২) ও সাফওয়ান আলী (১০)।
১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ নারায়ণগঞ্জে গ্যাসের পাইপ লাইনের ছিদ্র থেকে আগুন লেগে একই পরিবারের ৯ জন দগ্ধ হয়েছে। ফতুল্লার হকবাজার এলাকায় চারতলা ভবনের তিনতলায় এ ঘটনা ঘটে। আগুনে আরও দগ্ধ হয়েছেন শ্রীনাথের স্ত্রী অর্চনা (৩৫), মেয়ে অনামিকা (১৫), ছেলে অর্পিত (৯), মা ছায়া রানী (৬০), বোন সুমিত্রা (২৭), জামাতা নারায়ণ চন্দ্র (৪০), ভাতিজা প্রমিত (১৪) ও শাওন (১০)।

 


আরো সংবাদ



premium cement