২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মেধার ভিত্তিতেই শিক্ষার্থীরা পাবে সাবজেক্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
-

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে শিক্ষার্থীরা। গত ২৩ জানুয়ারি ইউজিসিতে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিয়ে আয়োজিত সভায় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একজন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর মেধার ভিত্তিতেই বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাবজেক্ট নির্বাচন করা হবে। অর্থাৎ একটি পরীক্ষার মাধ্যমেই একজন শিক্ষার্থী দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো একটিতে ভর্তির সুযোগ পাবে। মেধার ভিত্তিতেই মিলবে তার পছন্দের সাবজেক্টও।
ইউজিসির এমন সিদ্ধান্তের পর শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষাবিদদের মধ্যে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। মাত্র চার মাসের প্রস্তুতিতে কতখানি সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষাটি আয়োজন করা যাবে তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে। তবে অভিভাবকদের অনেকে মনে করেন, ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে যেভাবে সারা দেশে দৌড়াতে হয়, এটি অনেকের জন্যই কষ্টকর। আবার এটি অনেক ব্যয়সাধ্যও বটে। নতুন এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যদি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ পায়, এটা হবে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
অন্য দিকে একই দিনে এবং অভিন্ন প্রশ্নে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ অনেকাংশে কমবে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। একই সাথে অভিভাবকদের অর্থের অপচয় ও শিক্ষার্থীদের দেশব্যাপী দৌড়ঝাঁপের মতো ভোগান্তিরও অবসান ঘটবে। বিশেষ করে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে মেয়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত ও থাকা-খাওয়ার মতো বহুবিধ সমস্যারও সমাধান মিলবে। একই সাথে রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর বাড়তি চাপও কমবে বলে মনে করেন তারা।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) ভিসি অধ্যাপক ড. মো: মনিরুল ইসলাম এ বিষয়ে গতকাল রোববার নয়া দিগন্তের এই প্রতিবেদককে বলেন, প্রাথমিক পর্যায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত ভর্তির ক্ষেত্রে রীতিমতো যুদ্ধ শুরু হয়। ছেলেমেয়েদের ভর্তি ও শিক্ষার পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে অভিভাবকদের পকেট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। তাদের চিন্তার কোনো শেষ নেই। আর যে শিক্ষার্থী তার তো নাভিশ্বাস। বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, এই প্রক্রিয়া হবে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে গিয়ে একজন মেয়ে শিক্ষার্থী ও তার পরিবারের দুর্ভোগের কোনো অন্ত থাকে না। অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়েও পরিবারকে থাকতে হয় দুশ্চিন্তায়। এখন একজন শিক্ষার্থী একটি পরীক্ষার মাধ্যমেই তার মেধা অনুযায়ী পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাবজেক্টও নির্বাচন করতে পারবে।
অন্য দিকে অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি নিয়ে রয়েছে নানা জিজ্ঞাসা। কে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারবে তা নিয়ে চলছে আলাপ-আলোচনা। কারো পছন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আবার কেউ চায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) পড়তে। শিক্ষার্থীরা কি তাদের পছন্দমতো বিশ্ববিদ্যালয় পাবে বা পছন্দমতো বিষয় কি নিতে পারবে? নাকি নতুন করে কোনো জটিলতা তৈরি হবেÑ এমন নানা প্রশ্ন নিয়ে পরস্পরের মধ্যে এখন থেকেই আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীরা মেরিটের ভিত্তিতেই পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় পাবে উল্লেখ করে ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, কোনো সমস্যা ছাড়াই সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হবে বলেও আশা তাদের। একজন শিক্ষার্থী তার মেধা আর যোগ্যতার ভিত্তিতেই পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবজেক্ট পাবে। অন্য দিকে বুয়েটের শিক্ষক ড. কায়কোবাদ এ বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা বহুদিন ধরে চাইছি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হোক। অবশেষে সেটা হচ্ছে, এতে আমরা আনন্দিত। কিন্তু মাত্র চার মাস আগে হঠাৎই সিদ্ধান্ত হলো আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে এই পরীক্ষা নেয়া হবে। এত অল্প সময়ে এত বড় পরীক্ষার আয়োজন করা কতটুকু সহজসাধ্য হবে, সেটিও ভেবে দেখতে হবে।
এই শিক্ষাবিদের প্রশ্নÑ সমন্বিত এই ভর্তি পরীক্ষা কোন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করবে? এই পরীক্ষার মান কতখানিই বা নিশ্চিত করা যাবে?
অবশ্য ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. আলমগীর এ বিষয়ে জানিয়েছেন, ‘শিক্ষার্থী বা অভিভাবকদের টেনশনের কিছু নেই। মেধাবীরা তার মেধা ও পছন্দের ভিত্তিতেই বিশ্ববিদ্যালয় বা বিষয় পাবে। শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার জন্য অনলাইনে একটি আবেদন করবে। সেখানেই তার এসএসসি ও এইচএসসিতে পাওয়া জিপিএ উল্লেখ করবে। সে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে ইচ্ছুক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে কোন বিভাগে (বিজ্ঞান/মানবিক/বাণিজ্য) পড়াশোনা করেছে, কোন বিষয়ে (বাংলা, ইংরেজি, পদার্থ বিজ্ঞান, হিসাব বিজ্ঞান... এভাবে) কত নম্বর পেয়েছে তা বিবেচনায় রেখে সফটওয়্যারের মাধ্যমে মেরিট নির্ধারণ করেই তার বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিষয় নির্ধারিত হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement