২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দুর্যোগে বারবার সর্বস্বান্ত হয়েও ভেঙে পড়েননি কৃষক আবুবকর

-

ভাণ্ডারিয়ার মডেল কৃষক আবুবকর কৃষিক্ষেত্রে অবদান রাখায় ২০১৭ বঙ্গবন্ধু জাতীয় পুরস্কার পান। সাবেক এমপি তাসমিমা হোসেন তার খামার পরিদর্শনে গিয়ে তার বাড়ির ১০ বিঘা জমি বিনামূল্যে আবুবকরকে চাষাবাদ করতে দেন। ওই জমিতে এ বছর বারোমাসী তরমুজ চাষ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তিনি। চলতি মওসুমে আবুবকর সেখানে তরমুজ ছাড়াও আড়াই লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে আগাম সবজি যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, করলা, শশা, লাউ, মুলা, ধনিয়াপাতাসহ নানা ধরনের সবজি চাষ করেন। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় বুলবুল তার সবজি খামার তছনছ করে দেয়। নষ্ট হয় তার খামারের লাখ লাখ টাকার সবজি। যেখানে বিপুল টাকার ক্ষতিতে তার মুষড়ে পড়ার কথা, সেখানে তিনি সব দুঃখ ভুলে আবার চাষাবাদ শুরু করেছেন। নিজের ট্রাক্টর অথবা পাওয়ারটিলার না থাকায় তিনি নিজের হাতে লাঙল নিয়ে দিনভর কঠোর পরিশ্রম করে সবজির খামার তৈরি করছেন।
আবুবকর এলাকার এক শিক্ষিত কৃষক। এলাকার বহু শিক্ষিত তণরু তার পরামর্শে ও সহযোগিতায় কৃষিকাজে এগিয়ে এসেছেন।
আবুবকর ইতোমধ্যে নিজ বসতবাড়ির পাশে প্রায় দেড় একর জমিতে বাউকুল, করলা, আখসহ বিভিন্ন ফসলচাষে সফল হয়েছেন। আবুবকর তার খামারে সারা বছর মওসুমি শাকসবজি চাষ করে থাকেন। তিনি বলেন, আমি যখন তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র তখন থেকে আমাকে সংসারের অনেক কাজ করতে হয়। আমার লেখাপড়ার খরচ যোগাতে বাবা-মার কষ্ট দেখে আমি মাঝে মধ্যে অন্যের কাজ করে লেখাপড়ার খরচ যোগার করতাম। এমন সঙ্কটের মধ্যে ১৯৯০ সালে এসএসসি পাস করি। এরপর আমার লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। কিন্তু আমার প্রতিজ্ঞা আমাকে যে করে হোক লেখাপড়া করতেই হবে। এমন সময় স্থানীয় এক রাজনৈতিক ব্যক্তির সহায়তায় সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সাহেবের সাথে দেখা করে আমার অবস্থার কথা বলি। আমার কথা শুনে তিনি ভাণ্ডারিয়া সরকারি কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেন। এমনি করে ১৯৯২ সালে এইচএসসি পাস করি। এরপর যে কোনো কারণে আমার বাড়িতে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ে। অনেক কস্টে ভাণ্ডারিয়া সরকারি কলেজে ডিগ্রিতে ভর্তি হই। ১৯৯৪ সালে ডিগ্রি পরীক্ষায় পাস করি। এরপর ১৯৯৫ সালে গ্রামের একটি মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে আমার চাকরি হয়। এরপর থেকে বাবার লণ্ডভণ্ড সংসারের হাল ধরি। তখন আমার মাসিক বেতন ছিল ১৭৩৫ টাকা। সামান্য বেতন দিয়ে সংসার চালাতে আমি হিমসিম খেয়ে বাড়তি আয়ের পথ আমি খুঁজতে থাকি এবং কৃষিকে বাড়তি আয়ের উৎস হিসাবে নেই। এই পেশার মাধ্যমে অল্প দিনের মধ্যেই আমি বাড়তি আয়ের পথ খুঁজে পাই। অল্প দিনের মধ্যে ভাণ্ডারিয়া উপজেলায় মডেল কৃষক হিসেবে পরিচিতি লাভ করি। কিন্তু প্রাকৃতিক দূর্যোগের কবলে পড়ে আবারো সর্বশান্ত হয়ে পড়ি। তবে আশাহত হইনি। আমার বিশ্বাস, আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারব।
আবুবকর জানান, একের পর এক ঘুর্ণিঝড় তার ফসলের ওপর তাণ্ডব চালায়। এবারের ঘুর্ণিঝড়েও তার সবজি খামার নষ্ট না হলে তিনি চলতি মওসুমে সবজি বিক্রি করে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা আয় করতেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-মামুন জানান, ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে আবু বকরের কৃষি খামারে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement